চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে যেতে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ছাড়া এগানো যাবে না: জেলা প্রশাসক

স্টাফ রিপোর্টার ॥

প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর উদ্যোগে আয়োজিত চাঁদপুরে চার দিনব্যাপী কর্মশালা সমাপ্ত হয়েছে গতকাল শনিবার । প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো: কামরুল হাসান।

পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদের সভাপ্রধানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, সাংবাদিকরা হলো সমাজের নিউক্লিক এসিড। নিউক্লিক এসিড যেভাবে জীবের বিভিন্ন প্রকারের জৈবিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনি সাংবাদিকরা সমাজের উন্নয়ন, অসঙ্গতি, দুর্নীতি ও জনদুর্ভোগগুলো তাদের লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরে। তারা মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।

জেলা প্রশাসক বলেন, আপনারা হচ্ছেন সমাজের তৃতীয় নয়ন। সাংবাদিকদেরকে আমি ডিএনএ বলে থাকি এবং তারা হচ্ছেন রাষ্ট্রের বার্তা বাহক। আমরা যখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে যাচ্ছি, এই সময়টাতে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ছাড়া কেউ ভাল করতে পারবে না, পিছিয়ে পড়বে।

তিনি আরো বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে চাঁদপুরের স্থানীয় সবগুলো পত্রিকা পড়ি। এছাড়াও জাতীয় দৈনিকে চাঁদপুরের কোন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে কিনা তা দেখি। কারণ ,এমন অনেক খবর থাকে যেগুলো আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি এবং তা সমাধানে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে পারে। এ সময় তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ আরো গুরুত্বের সহিত সম্পাদনার জন্য পত্রিকা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপ্রধানের বক্তব্যে জাফর ওয়াজেদ বলেন, চাঁদপুর থেকে ২১টি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন পকেটের টাকা খরচ করে পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখা অন্তত কষ্টের। কারণ,পত্রিকা প্রকাশনার যে আর্থিক যোগান দরকার তা মফস্বল এলাকায় একেবারেই কম। মাসে একটি পত্রিকায় যে পরিমান বিজ্ঞাপন হয় তাতে নিয়মিত প্রকাশনা অব্যাহত রাখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তারপরেও চাঁদপুরের সম্পাদকরা এই কষ্টসাধ্য বিষয়টিকে মেনেই প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছেন। এজন্য আমি জেলার পত্রিকার সম্পাদকদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, অন্যান্য জেলার তুলনায় চাঁদপুরের সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ। এখানে নবীন প্রবীণ সকলে একত্রে জেলার সকল সমস্যা তুলে ধরতে চেষ্টা করেন। যারা প্রবীণ তারা সবসময় নবীনদের সার্বিক সহযোগিতা করে। যা অনেক জায়গায় দেখা যায় না। তাই আমি চাঁদপুরের সাংবাদিকদের সাধুবাদ জানাই। ভবিষ্যতেও তারা এভাবে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

প্রশিক্ষণের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এখন মোবাইল সাংবাদিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বর্তমানে দর্শক ও পাঠক প্রতি মুহুর্তের খবর সাথে সাথেই পেতে চায়। ডিজিটালাইজেশন এর এই যুগে পৃথিবীর এক প্রান্তের খবর মুহুর্তেই অন্য প্রান্তের দর্শক-শ্রোতারা দেখতে বা পড়তে পারছে। আজকের একটি খবর কখনই তারা কালকে দেখতে চায় না। তাই সাংবাদিকদের এখন খবর সংগ্রহ করে অফিসে এসে প্রতিবেদন তৈরির সুযোগ নেই। ঘটনাস্থল থেকেই মোবাইলের মাধ্যমে সংবাদ তৈরি করতে এই প্রশিক্ষণ আপনাদের কাজকে আরো বেগবান করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

গত বুধবার থেকে ২দিন করে দুই পর্বে সংবাদ সম্পাদনা ও মোবাইল সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ হয়েছে। প্রশিক্ষণে সংবাদ সম্পাদনার বিষয়, মোবাইল সেটিং ও ক্যামেরা সেটিং, ভিডিও ধারণের সাধারণ কৌশল, মাইক্রোফোন ও হেডফোন ব্যবহার করে অডিও ধারণ, অডিও রিপোর্ট তৈরি ও সম্পাদনা, লাইভ পডকাস্ট তৈরি, মোবাইল ক্যামেরার প্রেমিং এবং ভিডিও ধারণের ব্যবহারিক কৌশল, ল্যান্ডস্কেপ নাকি ভার্টিক্যাল ডিভিশন, ইন্টারভিউ ফ্রেমিং, মোবাইল শুটিং, স্টোরি পরিকল্পনা ও স্টোরিবোর্ড তৈরি, মোবাইল কনটেন্ট সংরক্ষণ ও তথ্য যাচাইকরণ, মোবাইল সাংবাদিকতায় প্রয়োজনীয় এপস্, গিয়ার ও টুলস এর ব্যবহারের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ইউল্যাবের মিডিয়া স্টাডিজ এন্ড জার্নালিজম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. জামিল খান।

প্রশিক্ষণের সমন্বয়ক পিবিআই কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম সৈকতের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, পিআইবির উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ জাকির হোসেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, বিএম হান্নান, সিনিয়র সহ-সভাপতি রহিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস প্রমুখ। চারদিন ব্যাপী প্রশিক্ষণে চাঁদপুরের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় কর্মরত ৭০ জন সাংবাদিক অংশ নেয়।

শেয়ার করুন: