
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
চাঁদপুরকে ইলিশের দেশ বলা হয়ে থাকে। ঈদের ছুটিতে পরিবারের সাথে ঈদ অনন্দ ভাগাভাগি সবাই একত্রি হয়ে থাকে। তাই একটু ভাল-মন্দ খাবারের আয়োজন,অতিথির আপ্যায়ন করতে চাঁদপুরের ইলিশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সেই ইলিশ এখানের নাগালের বাহিরে ক্রেতাদের। যদিও ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে। তবে এখনও শহরের বড় স্টেশনের চাঁদপুর মাছঘাট প্রায় ইলিশ শূন্য ।
ঘাটের আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীদের দাবি ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে সব ধরনের মাছ ধরায় চলমান নিষেধাজ্ঞা, বৃষ্টি কম হওয়া এবং নদীর পানি কমে যাওয়ায় জেলেরা নদীতে মাছ পাচ্ছে না। অধিকাংশ ব্যবসায়ী সাগরের ইলিশের ওপর নির্ভরশীল। নদীর পানির স্রোত কম থাকায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ মিলছে না। যার কারণে ঘাট ইলিশ শূন্য হয়ে পড়েছে।
চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ আড়তই ফাঁকা পড়ে আছে। আড়তের পাশে বসে কিছু খুচরা ব্যবসায়ী অল্প কিছু ইলিশ বিক্রির জন্যে অপেক্ষা করছেন। অলস সময় কাটাচ্ছেন আড়তের কর্মচারীসহ অন্যান্য মৎস্য শ্রমিকরা। আজ ৫ থেকে ১০ মণ ইলিশ সরবরাহ হয়েছে বলে জানান তারা।
ক্রেতারা জানান, ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে বাড়িতে বেড়াতে এসে তারা ঘাটে এসেছেন ইলিশ নেওয়ার জন্য। কিন্তু ইলিশ কম থাকায় দাম অনেক বেশি। ফলে অনেকই ক্রেতাকে খালি হাতে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
নোয়াখালীর চাটখিল থেকে আসা ইলিশ ক্রেতা জাহিদ জানান, আমাদের চাটখিলের চেয়ে এখানের মাছের দাম অনেক বেশি। এক কেজি ওজনের মাছের দাম ২৫-২৬শ’ টাকা। আধা কেজি ওজনের চেয়ে একটু বেশি ওজনের মাছের দাম ১৫-১৭ শ’ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছে, এগুলো চাঁদপুরের পদ্মার ইলিশ। আমি তাদের কথা বিশ্বাস করছি। আমি জানিনা কোন চাঁদপুরের ইলিশ আর কোনটা অন্য জেলার নদী/সাগরের ইলিশ। তবে অনেক দূর থেকে আসার কারণে দুইটি মাছ কিনেছি।
চাঁদপুরের স্থানীয় ক্রেতা মাহদুল হাসান জানান, আমি সকাল থেকে চাঁদপুর মাছ ঘাটে মাছ কেনার জন্য ঘুরাফেরা করছি। এখানে ইলিশ মাছ অনেক কম। অল্প কিছু সংখ্যাক মাছ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বসে আছে। মাছের দাম অনেক চড়া। ৮-৯ গ্রামের ইলিশ ২৫শ’ টাকা চাচ্ছে। আর এক কেজি ওজনের ইলিশ ২৫০০-৩০০০ টাকা করে বিক্রয় করছে। চাহিদা অনুযায়ী মাছের দাম অনেক বেশি হওয়ায় খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি।
ক্রেতা জুয়েল গাজী জানান, ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে আমাদের আত্মীয়-স্বজন বাড়ীতে বেড়াতে এসেছে। তাই এখানে মাছ কিনতে এসেছি। কিন্ত এসে দেখি মাছের দাম অনেক চড়া, ঘাটে মাছও অনেক কম। যার কারণে মাছ কিনতে পারি নেই। এখন খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি।
মাছ ব্যবসায়ী আলী হোসেন জানান, বর্তমানের মাছের দামটা একটু বেশি। এখন মাছের মৌসুম। কিন্তু নদীতে মাছ মাছ না থাকার কারণে মাছের দাম বেশি। নদীতে জেলেরা দু-চারটা মাছ পায়। এতে চাহিদা মিটে না। নদীতে পানির স্রোত না থাকার কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
জাহিদ হাসান নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, আমরা অনেকটাই সাগরের মাছের উপর নির্ভরশীল। সাগরে অভিযান চলার কারণে মাছের অনেক বেশি। এ ঘাটে এখন অনেক মাছ থাকার কথা । কিন্তু তুলনা মূলক মাছ নেই। তার কারণ হচ্ছে আমাদের চাঁদপুরের পদ্ম-মেঘনা নদীতে পানি অনেক কম। জোয়ার নেই। যার কারণে মাছের দাম অনেক বেশি।
চাঁদপুর মাছ ঘাটের আড়ৎদার সম্রাট বেপারী জানান, এখন ইলিশে মৌসুম। এ সময়ে অনেক ইলিশ উৎপাদন হয়। তবে নদীতে পানি কম থাকা, তুলনামূলক মৌসুমে বৃষ্টি কম হাওয়ায় নদীতে ইলিশ নাই। এখন চাঁদপুর মাছ ঘাটে ইলিশ নাই বলেই চলে । মাছের দাম অনেক চড়া ।
তিনি আরও বলেন, আমরা অনেক টাকা দাদন দিয়েছি। নদীতে মাছ না থাকার কারণে আড়ৎদার , ব্যবসায়ী, কর্মচারী ,জেলেরা সকলেই হতাশায় ধুকছে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শবেবরাত সরকার বলেন, আজকে ৫-৬ মণ মাছের বেশি আমদানি হয়নি। আজকে ১২ শ’ গ্রামের ওজনের ইলিশের দাম কেজি ৩০০০টাকা, এককেজি ওজনের ইলিশের দাম কেজি ২৫০০টাকা, ৮-৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম কেজি ২০০০টাকা, ৫-৭ শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম কেজি ১৫০০টাকা করে বিক্রয় করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত ইলিশের মৌসুম। এখন ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে। প্রাকৃতিক কারণে নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা আশা করি সামনে ইলিশ পাব।