এইচএসসিতে চাঁদপুরে জিপিএ-৫ এর ছড়াছড়ি

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥

এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডের মধ্যে চাঁদপুরে জিপিএ -৫ অন্য বছরের তুলানায় বেড়ে গেছে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফলাফলে পাসের হারে জিপিএ -৫ অনেক বেশি । প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজে জিপিএ-৫ পেয়ে ৩১২জন । বোর্ডের ফলাফল তালিকা ও কলেজ সুত্রে জানা যায়, ২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় এই কলেজ থেকে মোট ৬৮৯জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে কৃতকার্য হন ৬৭৪জন। পাশের হার ৯৮.৯৭। এ কলেজ থেকে এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে সর্বোচ্চ ৩১২জন।

কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো.মাসুদুর রহমান বলেন, ২০২০ সাল থেকে পরপর টানা তিন বছর তাদের কলেজ জেলায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তি ও সেরা ফলাফল অব্যাহত রেখে আসছেন। এ বছর ৩১২জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তর মধ্যে বিজ্ঞানে ১৪১ জন, মানবিকে ১৩১ জন ও ব্যবসায় শিক্ষায় ৪০ জন। ২০২১ সালে ৭৬৩জন অংশ নিয়ে জিপিএ -৫ পায় ২৫০জন ও ২০২০সালে ৮১৯জন অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পায় ২৪৭জন।

এদিকে জেলায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে অন্যান্য কলেজের মধ্যে ভাল করেছে যারা তাদের মধ্যে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে ৫০৯জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে ৫০৭জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫৬জন। কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাস এটি নি্িচত করেন।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হারে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে কচুয়া ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজ । অর্থাৎ ২শত ৫২জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ১৬২জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তন্মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৯৬জন,ব্যবসায় শিক্ষা ২৮জন ও মানবিক শাখা ৩৮জন।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৫১৩ জন। অসুস্থতাজনিত কারণে ৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারে নি। পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী ৫০৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৫০৩ জন। পাসের হার ৯৮. ৮২% এবং জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ২৫৬ জন।

বিজ্ঞান শাখা থেকে ১৬১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১৬১ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ১৫৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। বিজ্ঞান শাখায় শতভাগ শিক্ষাথী উত্তীর্ণ হয়েছে।

মানবিক শাখা থেকে ১২১ শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে ১১৯ জন শিক্ষাথী পাস করেছে এবং ৬৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ২২৭ জন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে ২২৩ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে এবং জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ৩১ জন।

অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমাদের এই সাফল্য আমাদেরকে আনন্দ দিয়েছে। আমরা খুশী হয়েছি, চাঁদপুর সরকারি কলেজ পরিবার আজ আনন্দিত। তবে আরও বেশি খুশি হতাম শতভাগ পাস করলে। তোমরা পরিশ্রম করেছ, তোমাদের বাবা মায়ের দোয়া ছিল, আমার শিক্ষকবৃন্দ পরিচর্চা করেছে, আমরা ভাল ফলাফল অর্জন করেছি। তবে এখানেই শেষ নয়, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, তোমরা বুয়েট, মেডিকেল, পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধে উত্তীর্ণ হও। তোমরাই আগামী দিনের বাংলাদেশ। আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে তোমরা হবে দক্ষ কারিগর। তোমাদের বাবা-মা তথা চাঁদপুরবাসীকে আমি ধন্যবাদ জানাই, তারাও এই আনন্দের স্টেকহোল্ডার। তোমাদের প্রতি তাদের নিরবিচ্ছিন্ন সাপোর্ট ছিল। ধন্যবাদ জানাই আমার শিক্ষকবৃন্দকে, তাদের সুনিপুণ পরিচর্চায় আমরা ভাল ফলাফল অর্জন করতে পেরেছি। ধন্যবাদ জানাই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আমাদের শিক্ষা পরিবারের অভিভাবক ডা. দীপু মনি এমপি মহোদয়কে। যার হৃদয়ের সাথে চাঁদপুর সরকারি কলেজ তথা চাঁদপুরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুনিপুন সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর হাত ধরে চাঁদপুর সরকারি কলেজ আরও এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা করি।’

চাঁদপুর আল-আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এ বছর মোট ৩৫০ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৪৪ জন। পাসের হার ৯৮.২৯। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭৭ জন।

এ বছর ছাত্র শাখা থেকে ১৮২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১৭৯ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে ১১২ জন জিপিএ-৫, ৬৪ জন এ গ্রেড, ৩ জন এ মাইনাস ও ৩ জন অকৃতকার্য হয়। পাসের হার ৯৮.৩৫। ছাত্রী শাখা থেকে ১৩৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১৩২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬১ জন, এ গ্রেড ৬৩ জন, এ মাইনাস ৬, বি গ্রেড ১ ও ৩ জন অকৃতকার্য হয়। পাসের হার ৯৭.৭৮। বিএমটি শাখা থেকে ৩৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে শতভাগ ফলাফল অর্জন করেছে। এর মধ্যে ৪ জন জিপিএ-৫, ২৮ জন এ গ্রেড ও ১ জন এ মাইনাস পেয়েছে।
এছাড়া পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজে ৪৪৩জন অংশ নিয়ে ৪৩৮জন কৃতকার্য হন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮২জন। হাজীগঞ্জ মডেল কলেজ থেকে ১ হাজার ৪৬জন অংশ নিয়ে কতৃকার্য হন ১ হাজার ৩২জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩১১জন। ডেফোডিল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৩২৪জন অংশ নিয়ে কৃতকার্য হন ৩১১জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ।

শাহতলী জিলানী চিশতী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পরীক্ষা মোট ১শত ১৩জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহন করে ৮৮জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। পাশের হার শতকরা ৭৭.৮৮ ভাগ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ (এ+) গ্রেড পেয়েছে ৪জন, এ গেড পেয়েছে-৩৫জন, এ- গ্রেড পেয়েছে-১৮জন, বি গ্রেড পেয়েছে-২৩জন, সি গ্রেড পেয়েছে-৮জন।

ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়-২০২২ এ পাশের হার ৯২.৫৮%। কলেজটিতে তিনটি বিভাগে ২’শ ৫৯জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২’শ ৩৭জন উত্তীর্ণ হয়, ১৯ জন অনুত্তীর্ণ হয় এবং ৩ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। বিভাগ অনুযায়ী বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৫১ জন উত্তীর্ণ হয় শতভাগ। এদের মধ্যে ‘এ’ প্লাস ১২জন, ‘এ’ ৩৮ জন ও ‘এ’ মাইনাস ১জন।

ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৪৮জন, এদের মধ্যে ‘এ’ ১৫জন, ‘এ’ মাইনাস ২৩জন, ‘বি’ ৫জন ও ‘সি’ ১জনসহ মোট উত্তীর্ণ ৪৪জন, অনুত্তীর্ণ ৩জন ও অনুপস্থিত ১জন।

মানবিক বিভাগে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১’শ ৬০জন, এদের মধ্যে ‘এ’ প্লাস ২জন, ‘এ’ ৬০ জন, ‘এ’ মাইনাস ৪৮জন, ‘বি’ ২৬জন ও ‘সি’ ৬জনসহ মোট উত্তীর্ণ ১৪২জন, অনুত্তীর্ণ ১৬জন এবং অনুপস্থিত ২জন। ইসলামিয়া সিনিয়র আলিম মাদরাসার আলিম পরীক্ষায়-২০২২ এ পাশের হার ৯৪.৫৯%। ২০২২ সালে মাদ্রাসাটি থেকে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৩৭ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ৩৫ জন এবং অনুত্তীর্ণ ২ জন। আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে ‘এ’ প্লাস ৫জন, ‘এ’ ২২জন, ‘এ’ মাইনাস ৪জন, ‘ বি’ ৪জনসহ মোট পাশ করে ৩৫ জন।

Loading

শেয়ার করুন: