ইলিশ রক্ষা অভিযান সমাপ্ত ॥ মধ্য রাত থেকে মাছ ধরা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক॥

নিরাপদে ইলিশের প্রজনন রক্ষায় ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন চাঁদপুরের জেলেরা। ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার নৌ-সীমানায় ইলিশ আহরণ বন্ধ। এ সময় দেশব্যাপি ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়,পরিবহন,মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

গতকাল ২৫ অক্টোবর রাত ১২টায় শেষ হয়েছে সরকার ঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তাই বিরতি শেষে আবারও নদীতে মাছ শিকার করতে নেমেছে জেলেরা।

ইতোমধ্যে নদীতে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়ে জেলেরা তাদের নৌকা মেরামতের পাশাপাশি পুরোনো জাল সেলাই করছেন। সময় হলেই জেলেরা নেমে পড়ছেন রুপালী ইলিশের সন্ধানে। আর তাই ইলিশ শিকারের জন্য মতলবের ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত চাঁদপুরের ৭০ কিলোমিটার এলাকার অর্ধলক্ষাধিক জেলে তাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মাছ ধরতে নদীতে জাল ফেলেছে ।

এদিকে নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে নদীতে মাছ ধরতে না পারায় মানবেতর জীবন যাপন করেছে অনেক জেলে। তবে অনেক অসাধু জেলে এবার নিষেধাজ্ঞা না মেনেই নদীতে মাছ শিকার করেছে। এছাড়া তারা পুলিশের উপরও হামলা করেছে। সব মিলিয়ে এ বছর নদীতে এবার পর্যাপ্ত ভাবে মাছ শিকার করেছে অসাধু জেলেরা।

চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের সাখুয়া গ্রামের জেলে হানিফ গাজী, কালু খা, আব্দুল আজিজ ও মামুন খা বলেন, সরকার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে আমরা আর নদীতে নামিনি। কিন্তু বাইরের জেলেরা চাঁদপুরের সীমানায় এসে ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ ধরতে না পারায়,আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করেছি।

জেলেরা আরও বলেন, ‘২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে, বিভিন্ন এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে জাল ও নৌকা মেরামত করে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ২২ দিন পর নদীতে নেমে যদি আশানুরূপ ইলিশ না পাই,তাহলে আমাদের দু:খের শেষ থাকবে না। অসাধু পুলিশ,চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে এবার টাকা দিয়ে অনেক অসাধু জেলে নদীতে ইলিশ ধরেছে। কিছু অসাধু মানুষের কারনে অভিযানের সফলতা আসছে না। তাই সরকারকে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান জেলেরা।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমকে সফল করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, কোস্টগার্ড,নৌবাহিনী, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকবৃন্দ অনেক সহযোগিতা করেছেন। বিগত বছরের ন্যায় এবছরও চাঁদপুরে মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম অত্যন্ত সফল হয়েছে। আমরা দিন-রাত নদীতে টহল দিয়ে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ইলিশের বাড়ির অভায়াশ্রম আমরা সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেছি।

মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, অভিযানের কারনে এবার ইলিশ প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা কমদামে জনগনের কাছে পৌঁছে দিতে পারব। ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষে সামনের জাটকা রক্ষা আরো জোরদার করা হবে। যারা প্রকৃত জেলে, তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে। কিছু অসাধু জেলে নদীতে মাছ ধরেছে, আমরা তাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে নেমেছি। আমরা যে ভাবে প্রচার-প্রচারণা করেছি, প্রকৃত জেলেরা উদ্বুদ্ধ হয়েছে। যার কারনে তারা নদীতে নামেনি। আশা করি জেলেরা নদীতে নেমে ইলিশ পাবে।

Loading

শেয়ার করুন: