
চাঁদপুর প্রতিনিধি
বিজয়ের মাসে ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাঁথা শোনালেন নৌ কমান্ডো বীর মুক্তিযোদ্ধা মমিনউল্লাহ পাটোয়ারী (বীর প্রতীক)। আজ শনিবার দুপুরে চাঁদপুর জেলা পুলিশ লাইনস্ এ- এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ফিরে যান তিনি। এসময় অশ্রুসজল চোখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
শোনালেন ৭১-এ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উৎসাহিত হন।
তারপর প্রতিবেশী দেশ ভারতে নৌ কমান্ডো বিষয় প্রশিক্ষণ লাভ করেন মমিনউল্লাহ পাটোয়ারী। তারপরেই ঝাঁপিয়ে পড়েন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশ নিলেও ৭১-এর আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে চাঁদপুর শহরের পাশের ডাকাতিয়া নদীতে কয়েকটি জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়া ও তৎকালীন বার্মা ইস্টার্নের তেলের ডিপো মাইন দিয়ে উড়িয়ে দেন মমিনউল্লাহ পাটোয়ারী ও তার সহযোদ্ধারা। শুধু তাই নয়, চাঁদপুর-লাকসাম রেললাইনের বেশ কয়েকটি সেতুও মাইন দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার কথা শোনান তিনি।
৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ফিরে গিয়ে মমিনউল্লাহ পাটোয়ারী বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় এফ রহমান হলে থাকতাম। এসময় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাত মার্চের ভাষণ পৌঁছে গেল আমাদের কানে। তারপর কয়েকদিন কেটে যায়। ২৫ মার্চ কাল রাতের নৃশংস হত্যার পরই জেগে ওঠি আমিসহ আরো কয়েকজন সহপাঠী। তারপর পাক হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নেই। কিন্তু অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ ছিল না। তাই দলবেঁধে ছুটে গেলাম প্রতিবেশী দেশ ভারতে। সেখানে নৌ কমান্ডো বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলাম। তারপর শত্রু মোকাবেলায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া। ওই সময় বেশ কয়েকজন সহযোদ্ধা শহীদ হন। কিন্তু তারপরও দমে যাইনি। মুক্তি ছিনিয়ে নিতে প্রাণপণে যুদ্ধ। অবশেষে বিজয়ের দেখা। এসময় অশ্রুসজল চোখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন নৌ কমান্ডো বীর প্রতীক মমিনউল্লাহ পাটোয়ারী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন তিনি। দেশের কয়েকটি জেলায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ছিলেন তিনি। সবশেষে সরকারের সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করে বিগত ২০০৮ সালে অবসরে যান মমিনউল্লাহ পাটোয়ারী।
তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী গ্রামে। সেখানে নিজের নামে প্রতিষ্ঠা করেন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে বীর প্রতীক মমিনউল্লাহ পাটোয়ারী একাডেমি নামে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জেলায় শিক্ষা বিস্তারে প্রশংসিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, আমি নিজেই বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে জাতির এমন শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মান জানাতে পেরে গর্ববোধ করছি। একই সঙ্গে প্রতিবছর এভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সম্মান জানানোর ঘোষণা দেন তিনি।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পুলিশের সাবেক ডিআইজি, বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল ইসলাম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমএ ওয়াদুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম দুলাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত, চাঁদপুর প্রেস ক্লাব সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন প্রমুখ।