চাঁদপুরে লকডাউন তদারকিতে মাঠে ডিসি-এসপি

আনোয়ারুল হক॥

চাঁদপুর জেলার লক-ডাউন পরিস্থিতি শুরু থেকেই তদারকি ও সমন্বয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ এবং পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ মাঠে রয়েছেন। রাতে যে কোন সময়ই দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি নিজেরাই নেমে পড়ছেন। চাঁদপুরের বিভিন্ন রাস্তা ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করছেন।

এ সময় তারা পথচারীদেরকে ঘরে থাকার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করেন,বিনা প্রয়োজনে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হওয়া আরোহীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন,কিছু যান আটক করেন।চিকিৎসার জন্য,রোগী পরিবহনে,টীকা গ্রহনকারীদের ও প্রয়োজনে বের হওয়া জনসাধারণকে সহযোগিতা করেন। মোড়ে মোড়ে সেনাবাহিনী,পুলিশ,বিজিবি আনসার বাহিনীর সদস্য ও জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত স্বেচ্ছাসেবক দল চেক পোস্ট বসিয়ে সড়কের যানবাহন রোধ করছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানাসহ নানা শাস্তি প্রদান করছেন।

এতো কিছুর পরও কিছু মানুষ বেড়াচ্ছে সড়কে। এদের মধ্যে নানা অজুহাতদারির সংখ্যা বেশি। হাসপাতাল রোগী নিয়ে যাবে তো একমাত্র রিক্সাটিতে রোগীর সাথে আরো ৩/৪ জন! সিএনজি অটোরিকশা নিষিদ্ধ। তারপরও করোনা বা অন্য কোন রোগী পরিবহনে সিএনজি অটোবাইক রোগী পরিবহনে শিথিলতা আছে। কিন্তু দেখাগেলো, রোগী একজন আরতার সাথে যাত্রী ৫/৬ জন!

বাজার, ঔষধ আনা ইত্যাদির নামে কেউ কেউ মিথ্যা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ছেন। পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ এবং অঞ্জনা খান মজলিশ ২ জনই গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০ টার মধ্যে শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে বেরিয়ে পড়েন। পুলিশ সুপার শহরের চত্বরে এসে এখানে বিধিনিষেধ অমান্য করে একাধিক হোন্ডারোহীকে নামিয়ে হোন্ডা আটক করেন। সেখানে তিনি তার পুলিশ সদস্যদের নিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট অবস্থান নেন। পরে পুলিশ সুপার শহরের কালিবাড়ি এলাকাতেও সড়ক ও দোকানপাট মার্কেটগুলো দেখেন।

এদিকে একই দিন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ শহরের আরেক ব্যস্ততম এলাকা ছায়াবাণী চৌরাস্তা মোড়ে অবস্থান নেন। সেখানে তিনি কিছু রিক্সা, অটো, সিএনজির গতিরোধ করে জানতে চান, এরা কি উদ্দেশ্যে সড়কে? যাত্রী ও চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ।

জেলা প্রশাসক বলেন,ঐ একই কথা রোগী আছে,বা রোগীকে দেখতে হাসপাতালে যাওয়া। নানা মিথ্যা অজুহাত যারা দিচ্ছেন, তারা কেউ রেহাই পাচ্ছেন না।অপ্রয়োজনীয় চলাচলকারীদের জরিমানা গুনতে হচ্ছে।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমার প্রশাসনের লোকবল চরম অপ্রতুল। প্রথম শ্রেনির এ জেলায় আমার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে যেখানে ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্টেট থাকার কথা, সেখানে মাত্র ৬ জন রয়েছেন। এডিসি রেভিনিউ করোনাক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট করোনা পজেটিভ। তারা কোয়ারাইন্টাইনে। ২ এডিসি পদ শূন্য। এই চরম সংকটে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত একরকম বিরামহীনভাবে কাজ করছি। কিন্তু এই স্বল্প লোকবল দিয়ে এতোবড় একটা জেলা এবং শহর এই লকডাউনে আমাদের চতুর্দিক সামলানো কতোটা কষ্টসাধ্য, তা আপনারা একটু উপলব্ধি করুন। তারপরও আমরা চাই আমরা আমাদের সাধ্যে থেকে লকডাউন পুরোদমে বাস্তবায়নে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

পরেই ছায়াবাণী এলাকায় আসেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ। পরে ডিসি এসপি ২ জন মিলেই অভিযান চালান রাস্তায়। পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, আমার পুলিশ সদস্যরা কেউই বসে নেই। লকডাউনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজ করতে গিয়ে এখানে গড়ে ৫/৬ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি কারোর জন্যই নিরাপদ নয়, এটিই মানুষজন বুঝে না। আমরাও কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় নেই।

এসময়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী,সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশাসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য,গত ২৩ জুলাই কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার সড়কে অবস্থান নিচ্ছেন।

Loading

শেয়ার করুন: