নিজস্ব প্রতিবেদক॥
চাঁদপুর জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর রোববার সকাল ১০ টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। করোনা পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলাসহ গুরুত্বপূর্ণ এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
সভার শুরুতেই বিগত মাসের কার্যবিবরণী, সিদ্ধান্ত এবং অগ্রগতি তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সরোয়ার।
বিভিন্ন প্রস্তাবতা ও পরামর্শ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায়, নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বেলায়েত হোসেন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার সৈয়দা বদরুন ন্নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ তার বক্তব্যে বলেন, দেশের অন্যসব জেলার চেয়ে চাঁদপুরের অইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। এখানে বড় ধরনের কোন সহিংসতা নেই। তবে মাদক কিছুটা বেড়েছে। রেলপথে মাদক আসে। এ ক্ষেত্রে রেল পুলিশকে আরো বেশি সচেষ্ট থাকতে হবে। নজরদারী জোরদার করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অভিযান চালাবেন। কোন ছাড় দিবেন না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সহ অন্যান্য দপ্তরগুলো প্রয়োজনে পুলিশ সুপারের সহযোগীতা নিন। আমরা প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করবো। মাদক ব্যবসায়ীরা আদালত থেকে সহজে জামিন পেয়ে যায়। এ বিষয়ে আইজীবীরা ভূমিকা রাখতে পারেন। আপনারা আদালতে বিষয়গুলো বলবেন।
তিনি বলেন, পাসপোর্ট অফিসের জনদুর্ভোগ কমাতে হবে। সেখানে কি কি সমস্য আছে তার সমাধানে কার্যত ব্যবস্থা নিবেন। যারা দালাল তাদের তালিকা করে টানিয়ে রাখবেন। দাললদের বাইরে ভেতরে যারা রয়েছে তাদেরও ধরতে হবে। কেবল এক পক্ষকে নিয়ে ভাবলে হবে না, দুই পক্ষকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুরে কোন বালু মহল ইজারা দেয়া হয়নি। দুটি পক্ষ নদী থেকে বালি উত্তোলন করছে। যার একটি বিআইডব্লিউটিএ। অপর আরেকটি মহল হাইকোর্টে রিট করে বালু তুলছে। আমরা এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমরা আমাদের দপ্তর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জানিয়েছি।
তিনি বলেন, তাছাড়া মিনি ড্রেজার দিয়ে যেখানেই ড্রেজিং করা হচ্ছে সেখানেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। কেউ ছোট ড্রেজারে মাটি কাটলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। লাইসেন্সবিহীন বাল্কহেড কিংবা নৌ-যান যেন চলাচল করতে না পারে। লাইসেন্স বিহীন নৌ-যানগুলোই নদী পথে ডাকাটির করে থাকে।
জেলা প্রশাসক বলেন, সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরেও করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। এটি সবার সহযোগীতায় হয়েছে। গণটিকা যাদের দেয়া হয়েছে তাদের রেজিস্টেশন করে নিতে হবে। না হয় টিকার হিসেব মিলানো কঠিন হবে। অনেক দিন পর আমরা স্ব-শরীরে সভা করতে পেরেছি। এজন্যে ভালো লেগেছে। সবার উপস্থিতি থাকলে আরো ভালো লাগত। আগামী সভাগুলোতে যাতে সকল সদস্যরা উপস্থিত থাকেন। রাজনীতিবিদরা সহযোগীতি করলে আমাদের কাজগুলো সহজ হয়ে যায়। চাঁদপুরের রাজনীতিবিদরা এক্ষেত্রে খুবই আন্তরিক। সবার সম্মিলিত সহযোগীতায় চাঁদপুরকে আমরা আরো এগিয়ে নিবো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় তার বক্তব্যে বলেন, মাদক ভয়াবহ মরণছোবল। এ বিষয়ে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জিরো ট্রলারেন্স ঘোষণা করেছেন। আমাদের আইজিপি মহোদয়ও কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে একটি সমস্যা এখনো রয়ে গেছে, তা হলো আমরা মাদক বিক্রেতাদের আটক করে জেল দেই, আর তারা একদিন পরেই জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। ২০ মামলার আসামীও জামিনে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, মাদক ব্যবসায় লাভ বেশি হওয়ায় মাদক বিক্রেতারা এর লোভ ছাড়তে পারে না। তবে এদেশে কারা মাদক আনে সেটি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। মাদকের যারা গডফাদার তাদের তালিকা হচ্ছে। সেই গডফাদার বড় বড় ব্যক্তিরা থাকতে পারেন। তাদের ধরা হবে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরোট্রলারেন্স। পুলিশের কোন সদস্য যদি মাদকের সাথে জড়িত থাকে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, আমাদের সকলকে মিলে কাজ করতে হবে। মাদক, সন্ত্রাস বিরোধী সমাজ গড়ে তুলতে সবাইকে সহযোগীতা করতে হবে। চাঁমপুর বাসস্টেশনে মালিক-শ্রমিক সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যার ফলে কিছু দিন আগে একজন চালকের নিহতের ঘটনায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছিলো। এ বিষয়ে দুই পক্ষকে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। চাঁদপুরে অজ্ঞান বা স্প্রে-পার্টি নিয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন,রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতা ছাড়া মাদক চলতে পারে না। এ ক্ষেত্রে আমাদেরও ব্যর্থতা রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও ব্যর্থতা রয়েছে। মাকদেন সাথে জড়িতদের কোন ছাড় দিবেন না। সে আমাদেন দলের হলেও। চাঁদপুরে রাজনীতিক হানাহানি নেই। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া। এটিকে আরো এগিয়ে নিতে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারি দুলাল বলেন,নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন চলছে। অবাদে বালু উত্তেলনের ফলে চাঁদপুর সদর উপজেলার নদী ভাঙ্গনে ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন ও রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন বিলিন হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। হাইকোর্টে একটা রিটের মধ্যদিয়ে এভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে রাষ্ট্রিয় সম্পদ নষ্ট করা হচ্ছে। এতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সভায় উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব,চাঁদপুর জজ কোর্টের পিপি রনজিত রায় চৌধুরী,জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক দিদারুল আলম, চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক শরীফুল ইসলাম প্রমুখ।
এসময় হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহাবুব আলম লিপন,ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারিসসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।