চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা সম্পন্ন হয়েছে।রোববার ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক জেলা ও ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘদিন পর আমরা সরাসরি উন্নয়ন সভাটি করতে পারছি।

তিনি বলেন, করোনার অবস্থানে আমরা এখন ভালো অবস্থানে রয়েছি। জেলায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হার অনেক কমে এসেছে। বর্তমানে ৩ দশমিক চারে নেমে এসেছে। এটি অবশ্যই ভালো খবর। তবে এটিকে ধরে রাখতে বা শূন্যের কোটায় নামাতে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মানতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।

অন্জনা খান বলেন, জেলার উন্নয়ন সমন্বয় সভায় ৬৬ টি ডিপার্টমেন্ট অংশ নেওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেকেই অনুপস্থিত থাকেন এবং এই না থাকাটা কেন, তাও বলেন না এবং বলে যান না। আপনারা সবাই যারা এসেছেন তারা মূলত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্যই এসেছেন।

তিনি আরো বলেন, জনপ্রতিনিধি ও আমরা যারা প্রশাসনের তারা সরকারের কাজ করি। সবাই মিলে আমরা একটি টিম। তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর শহরটা সুন্দর হোক এটা আমি চাই। সকল ভালো কাজেই আমার সহযোগিতা পাবেন। আমি চাই সবাই মিলে চাঁদপুরকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে। অন্যান্য বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে চাঁদপুর পৌরসভা অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ইজিবাইকের নাম্বার প্লেট ডিজিটাল করা হচ্ছে বলে জানান চাঁদপুর পৌর মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল ।

এছাড়া আগামী ৬-৭ মাসের মধ্যে চাঁদপুর জেলা শহরে যাত্রী ছাউনি এবং গণ শৌচাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন মেয়র। সভাপতি এজন্য চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র কে অভিনন্দন জানান।

চাঁদপুর সেতুর টোল বন্ধ করার বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, তিনি উর্ধ্বতন মহলে এ সম্পর্কিত চিঠি পাঠিয়েছেন। জেলা প্রশাসকও সভাকে অবহিত করেন যে, তার অফিস থেকেও একটা চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।

সভাপতি জেলা পাউবো প্রকৌশলীকে জোর তাগিদ দেন যেন শহর রক্ষায় যে স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, সেটির সমীক্ষাসহ যাবতীয় কাজ যেন দ্রুত সম্পাদন হয়। আর বর্ষার প্রায় শেষ নাগাদ যেন নদী কোন ভাবেই আঘাত হানতে না পারে, সে ব্যবস্থার প্রস্তুতি রাখতে হবে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জানালেন, ঐরকম প্রাথমিক ব্যবস্থা তাদের আছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারের সকল কাজগুলো দৃশ্যমান করার জন্য আপনাদের সেসব প্রকাশ করতে হবে। তিনি বলেন, অনেক দিন পর স্কুল কলেজ মাদরাসা খুলেছে। এসব প্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ না হয়ে যায় সেজন্য ম্যানেজিং কমিটি, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। শিক্ষার্থীরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে আসতে পারে, সেটিতে নজর দিতে হবে। এদিকে শাহরাস্তিতে প্রতিবন্ধী স্কুল ছাত্রীর টয়লেটে আটকাপড়া বিষয়ে সবাইকে সচেতন করেন তিনি এবং বলেন, যাতে পুনরায় আর এই ধরনের ঘটনা না ঘটে। এই ঘটনাটা শুনে আমি আমার শাহরাস্তি উপজেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা অফিসারকে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে বলি।

তিনি বলেন, সবার সহযোগিতা থাকলে চাঁদপুরে আমরা একটি সুন্দর পরিবেশ দিতে পারব বলে আশা করছি। এছাড়া যুব উন্নয়ন, বিআরডিবি, বিআইডব্লিউটএ,পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন। এদিকে রেলের জায়গায় অনেকেই মাছ চাষ করছেন। মানছেন না কোন নিয়ম নীতি। সেদিকে লক্ষ রাখতে রেল কর্তৃপক্ষকে এবং উপজেলা নির্বাহীকে বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানান। রেলের লিজ কৃত কোন জায়গায় কেউ মাছ চাষ করলে মৎস্য অধিদপ্তর এর অনুমতি আছে কি না সে বিষয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়।

এছাড়া যত্রতত্র অবৈধ রেল ক্রসিং করা থেকে তিনি বিরত থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, রেল ক্রসিংগুলোতো লোকবল দেয়া হোক। বিআরডিবি কয়েক কোটি টাকার উপরে চাঁদপুরে ঋন দিচ্ছে! উপপরিচালক জানালেন, সোমবার সদর উপজেলাতে ৩০ লাখ টাকা ঋন দেবেন! অথচ এর বিস্তারিত বা এটি কে পায়,অনেকেই তা জানেন না। জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়রসহ সভার প্রায় সকলেই এ ব্যাপারে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

ভিক্ষা পুনর্বাসন সম্পর্কে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিম বলেন, ভিক্ষা পুনর্বাসন প্রত্যেক উপজেলায় দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। অনেক ভিক্ষুকের শারীরিক অবস্থা যদি ভাল থাকে তাকে ভ্যান বা অন্য কর্মস্থান ব্যবস্থা করে দিতে হবে। যে এলাকায় যে ভিক্ষা করে তাকে পূর্ণবাসন করতে হলে স্থানীয়দের অবহিত করতে হবে। তাহলে আর ভিক্ষাবৃত্তির মধ্যে নাম করে যারা প্রতারণা করে সেটা অনুমান করা সম্ভব হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১০ হাজার জিও ব্যাগ থাকলেও হবে না। আরো মজুদ রাখতে তিনি নির্দেশনা দেন। এছাড়া চাঁদপুরের নদীতে ডুবচর দেখা যাচ্ছে। যার কারণে ইলিশের উৎপাদনে বাধা হচ্ছে। তাই ডুবচরে ডেজিং ব্যবস্থাসহ আরো উন্নত করা যায় কিনা সে বিষয়ে পরামর্শ দেন।

পরিশেষে চাঁদপুর জেলা ফায়ার স্টেশন সার্ভিসের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অত্যন্ত প্রশংসা মূলক কাজ করছে ফায়ার স্টেশন। তাদের সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছোট পরিসরে হলেও আগুন নিভানোর প্রশিক্ষণ নিতে সকলকে আহ্বান জানান। আগুন প্রতিরোধে সবাই সচেতন হলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে বলে জেলা প্রশাসক এ আশা ব্যক্ত করেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ ইমতিয়াজ হোসেনের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ও চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, ফরিদগঞ্জ পৌর সভার মেয়র আবুল খায়ের, মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ কুদ্দুস, চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, দেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল, বিআরডিবির উপ-পরিচালক মোঃ মোকাব্বের হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ।

Loading

শেয়ার করুন: