ছেঙ্গারচর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার ছাড়াই সিজারিয়ান অপারেশন

মতলব উত্তর প্রতিনিধি :

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেঙ্গারচর বাজারস্থ সুরুজ প্লাজায় ‘ছেঙ্গারচর জেনারেল হাসপাতাল এ- ডায়াগষ্টিক কমপ্লেক্সে’ গাইনী সার্জন চিকিৎসক ছাড়াই সিজারিয়ান অপারেশন চলছে। প্রায়সই এই বেসরকারি হাসপাতালটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দেন রোগীরা। অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে ওই হাসপাতালে গিয়ে তার সত্যতা পাওয়া গেছে।

সোমবার বেলা ১টায় ছেঙ্গারচর জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগষ্টিক কমপ্লেক্সে গিয়ে জানা গেছে, ওইদিন তিনজন রোগীকে সিজার অপারেশন করা হয়েছে।

এরা হলেন, উপজেলার দশানী গ্রামের মন্টু সরকারের স্ত্রী নাজমা, হাশিমপুর গ্রামের আব্দুল কাদিরের স্ত্রী মনিরা আক্তার ও উত্তর ছেঙ্গারচর গ্রামের উজ্জল প্রধানের স্ত্রী জুলিয়া। তাদের প্রসব জনিত ব্যাথা উঠলে স্বজনরা নিয়ে আসে এই হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালের মালিক সুমনা আক্তার এনেসথেসিয়া ডাক্তার দ্বারাই সিজারিয়ান অপারেশন করিয়ে ফেলেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং শতভাগ জীবনের ঝুঁকিপূণ। এর আগেও সম্প্রতি ডাক্তার ছাড়া সিজার অপারেশন করানোর কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে এই হাসপাতালে। তারপরও থেমে নেই এমন অবৈধ চিকিৎসা।

হাসপাতালে গিয়ে মালিক সুমনা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই জন ডাক্তার তাদের সিজার করিয়েছে। তাদের নাম সার্জন ডা. বিউটি রাণী সরকার ও ডা. রাজন কুমার দাস। তারপর যাচাই করার জন্য মুঠোফোনে সার্জন বিউটি রাণী সরকারকে কল দিলে তিনি বলেন আজকে (সোমবার) আমি মতলব উত্তর উপজেলাতেই আসিনি। এই কথার প্রেক্ষিতে কোন জবাব দিতে পারেননি সুমনা। কিন্তু সিজার অপারেশন করালেন কে? এই প্রশ্নের জবাবে হাসপাতাল মালিক সুমনা বলেন ডা. রাজন কুমার দাস করিয়েছেন। তিনি তো সার্জন নন, তিনি একজন এনেসথেসিয়া ডাক্তার? এই প্রশ্নের জবাবে সুমনা বলেন আমরা সবসময় তাকে দিয়েই সিজার অপারেশন করাই।

ডা. রাজন কুমার দাস বলেন, যদিও আমি এনেসথেসিয়া ডাক্তার। কিন্তু আমার সিজার করানো উপর ৬ মাসের প্রশিক্ষণ আছে। সরকার অনুমোদিত সার্জন বা সনদপত্র ছাড়া অপারেশন করতে পারেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন অপারেশন করা আমার বৈধতা আছে। তিনি আরও বলেন, চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত আছেন। সেখানে তিনি সপ্তাহে ৬ দিন থাকেন সোমবার ছুটি কাটান।

এদিকে সিজার হওয়া রোগীর সাথে আসা এক আত্মীয় বাবু বলেন, আমি দেখেছি আমার রোগীকে ডাক্তার রাজন অপারেশন করিয়েছেন, আর কোন ডাক্তার ছিল না। এভাবেই এই হাসপাতালে সবসময় করানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো কয়েকজন বলেন, সারাবছরই এই হাসপাতালটিতে সার্জন ছাড়া অপারেশন করে। কোন কোন সময় মালিক সুমনা নিজেও ডাক্তার সেজে অপারেশন করে ফেলেন। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার অপারেশনের ব্যবস্থা না থাকায় এধরনের প্রাইভেট ক্লিনিকে দৌড়ঝাঁপ দিতে হয় রোগী নিয়ে।

মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুসরাত জাহান মিথেন বলেন, সার্জন না থাকায় আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার অপারেশন চালু করতে পারছি না। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি একাধিকবার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী শরিফুল হাসান বলেন, ডাক্তার ছাড়া অপারেশন সম্পূর্ণ অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ। যদি এ ধরনের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলার সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

Loading

শেয়ার করুন: