টেন্ডার হয়েছে চাঁদপুর আধুনিক নৌ টার্মিনালের

হাসান আল মামুন ॥

অবশেষে চাঁদপুরে আধুনিক নৌটার্মিনাল নির্মিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সেটির টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে ডিজাইন অনুযায়ী কাজ শুরু হবে। হেড অফিসের বরাত দিয়ে চাঁদপুর নদীবন্দর ও বিআইডব্লিটিএ কর্মকর্তা একেএম কায়সারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি ১৯ এপ্রিল দুপুরে চাঁদপুর সার্কিট হাউজে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির উপস্থিতিতে বর্তমান সরকারের ২০১৯ হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত চাঁদপুর জেলায় বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প এবং বিভিন্ন বিভাগের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে জেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাদের সাথে পর্যালোচনা সভায় চাঁদপুর নদী বন্দর কর্মকর্তা কায়সারুল ইসলাম এ সুখবরটি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, চাঁদপুরে যে আধুনিক নৌটার্মিনাল হবার কথা সেটার টেন্ডার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখন সেটি ইভ্যালুয়েশন পর্যায় আছে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর অথবা অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এখানে ফিজিক্যালী নৌবন্দর ও টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

চাঁদপুর নৌবন্দর নিয়ে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি নিরসনে চাঁদপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর একনেকে ‘চাঁদপুরে আধুনিক নৌটার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৭০ কোটি টাকা। শুরুতে প্রকল্পটি শুধু চাঁদপুর নদীবন্দর নির্মাণ নিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে এ প্রকল্পে চাঁদপুরের সঙ্গে ঢাকা (লালকুঠি ঘাট), বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, আশুগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল উন্নয়ন সংযোজন করা হয়। ফলে প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ ও মেয়াদ নতুন করে বৃদ্ধি পায়। প্রকল্পের মেয়াদ ধার্য করা হয় ২০২৫ সাল পর্যন্ত। ২০১৬ সালের পর কেটে গেছে ৬টি বছর। প্রকল্পটি দীর্ঘ সময় ফাইলবন্দি থাকার পর চলতি বছরে এটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০০০ সালে হঠাৎ ডাকাতিয়া নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় বড় স্টেশনের পশ্চিম-দক্ষিণে তৎকালীন লঞ্চঘাটটি। সেই ঘাটটি নদীতে বিলীন হওয়ার পর ডাকাতিয়া নদীর ওপর আরেকটি ছোট টার্মিনাল নির্মিত হয়। কিন্তু সেই টার্মিনালে ডাকাতিয়া-মেঘনা নদীর ঘূর্ণিস্রোতের কারণে যাতায়াত বিপজ্জনক হওয়ায় মাদ্রাসাঘাটে বিকল্প নৌটার্মিনাল স্থাপন করা হয়। যেটি গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী ঘাট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অথচ ঘাটটিতে যাত্রীসেবার ন্যূনতম সুবিধা নেই। নেই যাত্রী ছাউনি, নেই বসার কোনো স্থান। পুরো চত্বরে খানাখন্দে ভরা আর রোদ-বৃষ্টিতে ভিজতে হয় যাত্রীদের। পন্টুনে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া যাত্রীদের বিকল্প নেই।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এ প্রকল্পটির নাম ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল ওয়াটারওয়ে ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট-১ (বিআরডব্লিওটিপি-১)’। ওই প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ও বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ফরহাদুজ্জামান জানান, প্রকল্পটি ২০১৬ সালের শেষের দিকে একনেকে অনুমোদন হলেও প্রকল্প অফিস ও জনবল নিয়োগ দিয়ে কাজ শুরু করতে ২০১৭ সাল হয়ে যায়। প্রকল্পের জিওতে (গভার্নমেন্ট অর্ডার) নির্দেশনা ছিল কাজ শুরু করার পূর্বে কনসালটেন্ট নিয়োগ দিতে হবে। কনসালটেন্ট নিয়োগ দিতে ২০১৭ পার হয়ে যায়। ২০১৭ সালের শেষের দিকে কনসালটেন্ট ফার্ম নিয়োগ দিলে তারা স্টাডি ও ডিজাইনের জন্যে ২ বছর সময় চান। দু’বছর পর ২০২০ সালের শুরুতে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় তা চার বছরে গড়ায়। তবে কনসালটেন্ট ফার্ম তাদের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করেছে। তারা স্টাডি শেষে ডিজাইনও জমা দিয়েছেন। নতুন টার্মিনাল গঠন করতে পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা কিছু প্রস্তাবনাও দিয়েছেন। চাঁদপুর টার্মিনালের নকশা চূড়ান্ত হবার পর এর টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হল। এখন দ্রুত দৃশ্যমান কাজে হাত দেয়া হবে। আর এটি নির্মিত হলে চাঁদপুর লঞ্চঘাটের চেহারাই পাল্টে যাবে।

Loading

শেয়ার করুন: