তুচ্ছঘটনায় চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর চরে লুটপাট, খুন

মেঘনাবার্ত ডেস্ক:

অশান্ত আর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর চর। বিবাহ বিচ্ছেদ আর ফেইজবুকে লেখাকে কেন্দ্র করে গত এক মাসে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের দুটি বংশের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলা এবং লুটপাট ও একজন খুনের ঘটনা ঘটেছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড় রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের লক্ষ্মীরচর ও শিলারচরের গাজী বাড়ি এবং বকাউল বাড়ির লোকজনের মধ্য এই সংঘর্ষ ও সহিংসতা চলছে।

হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সংঘর্ষ থেমে গেলেও নতুন পন্থায় শুরু হয়েছে শোধ-প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পুঁজি করে চলছে ডাকাতি আর লুটপাট। এখন পর্যন্ত অসহায় চরাঞ্চলবাসীর প্রায় ২০০ গরু-ছাগল লুট করে নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষরা।
মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে পুরুষশূন্য দুটি গ্রামের অসহায় নারীদের উপরও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে অতীতে কখনই এমন ঘটনা ঘটেনি।
এই ঘটনা মূলত পরকীয়া প্রেম, একটি বিবাহ বিচ্ছেদ এবং ফেসবুকে পোস্ট দেয় কেন্দ্র করেই ঘটনার সূত্রপাত হয়।

সূত্র জানায় দুলাল মাঝির স্ত্রীর পরকীয়া প্রেম কেন্দ্র করে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এঘটনা কেন্দ্র করেই দুটি পরিবারের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি হয়। গত ২৮ মে সংঘর্ষে লোকমান গাজী (৬০) এবং মোহাম্মদ বকাউলসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫/২০ জন মারাত্মকভাবে আহত হয়। ঘটনার ৯ দিন পর ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লোকমান গাজী মারা যান। অপরদিকে প্রতিপক্ষ গ্রুপের গুরুতর আহত মোহাম্মদ বাউলের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ১১৮টি সেলাই দেয়া হয়েছে।বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।

এদিকে ডাকাতি এবং লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে আসমা বেগম নামের এক নারী ইউপি সদস্য জনৈক পারভেজ রনিকে প্রধান আসামী করে এবং শরাফত আলী গাজী, হারুন গাজী, মমিন আলী হাজী, মনি গাজী, দিদার গাজী, ফয়সাল গাজী, মরণ আলী গাজীসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে চাঁদপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, গত ক’দিনে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের শিলারচর এবং লগ্গিমারা চরে ৫০টি পরিবারের বাড়ি থেকে প্রায় ২০০টি গরু-ছাগল ডাকাতি করে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। শুধু গরু-ছাগল ডাকাতিই নয়, পুরুষশূন্য ঘরগুলোতে লুটপাটসহ নারীদের শ্লীলতাহানি করা হচ্ছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ডাকাতির শিকার হওয়া অসহায় পরিবারগুলো হলো : সিদ্দিক মাল, ইয়াকুব বকাউল, ইসমাইল বকাউল, বিল্লাল বকাউল, শহীদ বকাউল, আবুল খায়ের, হানিফ বকাউল, আনোয়ার হোসেন, লিটন বকাউল প্রমুখ।

এ বিষয়ে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী হযরত আলী বেপারী বলেন, আমাদের ইউনিয়ন শান্তিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। এখানকার প্রতিটি পরিবারই একে অন্যের আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু গত ১ মাস ধরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। আমি নিজে বহুবার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু কেউ কথা শুনছে না। যার কারণে ইতিমধ্যে এক পক্ষের একজনের মৃত্যু এবং অপর পক্ষের একজন মৃত্যুশয্যায় । আমিও চাই এর সুষ্ঠু বিচার হোক। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ন্যায় বিচার পাক।

চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী আরো বলেন, তবে এই ঘটনা পুঁজি করে একটি পক্ষ গ্রামের অসহায় পরিবারের বাড়ি-ঘরে ডাকাতি আর লুটপাট করছে। নারীদের শরীরেও হাত দিচ্ছে। যা খুবই ন্যাক্কারজনক। যারা গরিব মানুষের গরু-ছাগল চুরি করছে এবং মা-বোনের সাথে খারাপ আচরণ করছে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেয়া হোক।

চাঁদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, রাজরাজেশ্বর চরে মারামারির ঘটনায় মামলা হয়েছে। গরু ডাকাতির ঘটনা আমরা জেনেছি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। এই ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে। আমরা আদালতে ধারা পরিবর্তনের জন্যে আবেদন করেছি। দোষীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

Loading

শেয়ার করুন: