নবজাতক বিক্রি ঘটনায় হাসপাতালের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি

মতলব উত্তর ব্যুরো॥

মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পালস্ এইড জেনারেল হাসপাতাল এ- ডায়াগষ্টিক সেন্টারের চাপে নবজাতক বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধের সত্যতা পায়নি বলে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদক দাখিল করেছে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে মূলত পারিবারিক সমস্যা ও অর্থনৈতিক টানাপড়েনের কারণে নবজাতক বিক্রি করেছিলেন সেই মা, এমনটিই উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে তদন্ত কমিটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. হাসিবুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের চাপে পড়ে নবজাতক বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধের সত্যতা পাননি তারা। পালস এইড জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এতো সম্পৃক্ততা ছিল না। মূলত পারিবারিক সমস্যা ও অর্থনৈতিক টানপোড়নের কারনেই নবজাতক বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে। নবজাতকের মা এবং তাদের পরিবারও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে কিছু বলেননি।
মতলব উত্তর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়নের হানিরপাড় গ্রামের দিনমজুর মো. আলমের স্ত্রী তামান্না বেগমের (২৮) প্রসববেদনা উঠলে তিনি গত ২৬ জানুয়ারি ছেংগারচর পালস্ এইড হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পুত্রসন্তান জন্ম দেন তামান্না। ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকেন তিনি।
রিলিজের সময় হাসপাতালে বিল আসে ২৬ হাজার টাকা। ওই টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন তামান্না বেগম। এ অবস্থায় ছেংগারচর বাজারের কাউসার নামে এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে মাত্র ৫০ হাজার টাকায় ওই সন্তানকে বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেন তামান্না। সন্তান বিক্রির পর ওই মা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।
পরে ৪ ফেব্রুয়ারি সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হেদায়েত উল্লাহ ও স্থানীয় থানা পুলিশের সহযোগিতায় মতলব উত্তরের ষাটনল এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। ফিরিয়ে দেওয়া হয় মায়ের কোলে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা নবজাতকের মাসহ পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর কোনো অভিযোগ করেননি। এছাড়া আমরা বাইরে থেকেও তদন্ত করেছি। এতে এইড জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাইনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, আমরা হাসপাতালটির বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সত্যতা পাইনি। আমরা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।
এ বিষয়ে নবজাতকের মা তামান্না বলেন, আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। সন্তান জন্ম নেওয়ার পর আমাদের কাছে কোনো টাকা ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই সন্তানকে বিক্রি করি। হাসপাতাল থেকে আমাদের জোর করেনি।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. সাহাদাৎ হোসেন বলেন, এইড জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করি। তাদের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এখনো আমার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন আসেনি।

Loading

শেয়ার করুন: