
বাড়ি বা অফিসের আঙিনা, বাগানে, কবরস্থানে, পাহাড়ে সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিবেশ রক্ষায় প্রবাস থেকে ছুটে আসেন গোলাম রাব্বি নামে এক যুবক। তার স্বপ্ন ছিল পরিবেশ রক্ষা করা, কর্মসংস্থান তৈরি ও নিজেকে স্বাবলম্বী করা। সেই লক্ষ্য নিয়ে প্রথমে ৪০ শতাংশ পতিত জমিতে সবুজ পরিবেশবান্ধব মোলায়েম লন কার্পেট ঘাস চাষ শুরু করেন। পরে লাভবান হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এই ঘাস চাষ করছেন। মাত্র দেড় বছরের মধ্যে মাসে আয় করছেন ২ লাখ করে টাকা। বর্তমানে ঘাস চাষ প্রকল্পে ৩০-৪০ জন লোক কাজ করছেন।
জানা গেছে, গোলাম রাব্বির বাড়ি চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার লোহারপুল এলাকায়। তিনি দুই বছর আগে সদর উপজেলার বহরিয়া দোকানঘর এলাকায় প্রায় ৪০ শতাংশ পরিত্যক্ত জমি বর্গা নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পরিবেশবান্ধব ঘাস চাষ শুরু করেন।
গোলাম রাব্বি বলেন, ‘আমি দীর্ঘ সাত বছর বাহরাইন ছিলাম। সেখানেই এই লন কার্পেট ঘাসের কাজ শিখি। বাহরাইন থেকে দেশে ফিরে আসি। প্রথমে এলাকায় ফসলহীন একটি উঁচু জমি খুঁজে বের করি। সেখানে প্রায় ৪০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই ঘাসের চাষ শুরু করি। ভারত থেকে এই ঘাসের চারা ও বীজ সংগ্রহ করি। চাষ করার পর দেখি এই ঘাস চাষ দেশের জন্য উপযোগী। অধিক চাহিদা থাকায় বর্তমানে ৫ একরের বেশি জায়গায় ঘাষ চাষ করছি।’
তিনি বলেন, জমির সংকটের কারণে আমি বেশি করে উৎপাদন করতে পারছি না। আমার কমপক্ষে ৩০ একর জমি প্রয়োজন। ৩০ একর জমি হলে সুন্দরভাবে ঘাস উৎপাদন করতে পারি। এখন স্থায়ীভাবে ২০ জন লোক কাজ করছে। স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৪০-৪৫ জন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারলে ১৫০-২০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, এখন ৯০ থেকে এক লাখ স্কয়ার ফুট ঘাস উৎপাদন হচ্ছে। আমার ইচ্ছে আছে, প্রতি বছর ১৫ লাখ স্কয়ার ফুট ঘাস উৎপাদন করার। আমাদের জেলায় সরকারের অনেক খাস জমি আছে, সেগুলো যদি আমাদের লিজ দেওয়া হয়, তাহলে আমরা লন কার্পেট ঘাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারব। এক্ষেত্রে আমি কৃষি বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তিনি ঘাসের পরিচর্যা সর্ম্পকে বলেন, ছোট ছোট টুকরো করে মুড়া বানিয়ে পতিত জমিতে পলিথিন বিছিয়ে এর ওপর হালকা মাটি দিয়ে রোদে রাখতে হয়। প্রাথমিকভাবে লাগানো অবস্থায় ২-৩ দিন ঘাসে পানি ঢালতে হবে। তারপর সপ্তাহে এক দিন বা দুই দিন পানি দিলেও চলবে। বৃষ্টি হলে এতে কোনো সমস্যা নেই। বৃষ্টি যত বেশি হবে, ততই ভালো হবে। প্রতি মাসে একবার সার প্রয়োগ করতে হবে। মাসে একবার ঘাসের ওপরের অংশ কেটে ফেলতে হবে। এই ঘাস রুফটপ গার্ডেনিং, ল্যান্স কেবিন, খেলার মাঠ, বাড়ির আঙিনা, কবরস্থান, রাস্তার মাঝখানে ফাঁকা জায়গাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যবহারের উপযোগী।
গোলাম রাব্বি বলেন, এর মূল নাম মেক্সিকান-বারমুডা গ্রাস। লন কার্পেট ঘাস হিসেবে বেশি পরিচিত। আমাদের দেশে অনেকে কার্পেট ঘাস নামে ডাকে। বর্তমানে তিনি এই ঘাস প্রতি বর্গফুট বিক্রি করছেন ৮০ টাকা দরে।
কর্মচারী আলমগীর বলেন,এই প্রতিষ্ঠান হওয়ার পর আমরা ভালো আছি। আমাদের বউ পোলাপাইন ভালো অবস্থানে আছে। আমাদের বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য স্কুলে পাঠাতে পারছি। আমরা ভালো অবস্থানে আছি।
নাহিদ বলেন, আমরা বউ বেটি, বাচ্চা পোলাপাইন নিয়ে ভালোই আছি। এখানে কাজ করে মাসে ১৫০০০ টাকা বেতন পাই। আমরা এই ঘাস ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে লাগিয়ে দিয়ে এসেছি।
অপু মোল্লা নামে আরেকজন বলেন, এ জায়গায় কাজ করার পরে আমাদের সংসার ভালো চলছে। বাচ্চাদের লেখাপড়া চালাইতেছি। কোম্পানি আমাদের সুযোগ-সুবিধা ভালোই দিচ্ছে। এই প্রল্পের মাধ্যমে শত শত মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এখানে ৪০-৫০ জন মানুষ সব সময় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, এ ধরনের ঘাস চাষের জন্য চাঁদপুর জেলায় সরকারিভাবে কর্মসূচি নাই। যদি এ ধরনের কোনো কর্মসূচি আসে, তাহলে আমরা তা বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করব। তবে আমি শুনতে পেরেছি, একজন কৃষক এ ধরনের ঘাস চাষ করছেন। আমরা সরেজমিনে দেখব। তাকে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব তা আমরা করব।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার বলেন, চাঁদপুরের উদ্যোক্তাদের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় আছে। গোলাম রাব্বিকে আমরা তার কাজে সহযোগিতার চেষ্টা করব।