বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ, ষড়যন্ত্রের শিকার মো:সেলিম খান

নিজস্ব প্রতিবেদক :

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের কাহিনী নিয়ে ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কাহিনী নিয়ে নির্মিত ‘আগস্ট ১৯৭৫’ চলচ্চিত্রের পরিচালক ও প্রযোজক এবং চাঁদপুরের কৃতিসন্তান ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খান স্বাধীনতা বিরোধী চক্র কর্তৃক একের পর এক ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন। যে কারনে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে ঢাকার রমনা থানায় এবং চাঁদপুর মডেল থানায় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খান দু’টি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

ষড়যন্ত্রের শিকার মোঃ সেলিম খান বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মাঝে সম্প্রচার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তিনি আরো বলেন, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে সম্প্রচার করা হয়। এরপর ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বাংলাদেশের সকল জেলা, উপজেলা এবং শিল্পকলা একাডেমিতে ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ সম্প্রচারের নির্দেশনা প্রদান করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

সেলিম খান আরো বলেন, এ কারনে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নবাসী এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ আমাকে (মোঃ সেলিম খান) গণসংবর্ধনা প্রদান করে। সেদিন গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে আমার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে আমি ঘোষণা করি, শাপলা মিডিয়ার ব্যানারে সহসাই নির্মিত হতে যাচ্ছে ‘মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু’, ‘মুজিব ভাই’ ও ‘জননেত্রী’ নামক ৩টি চলচ্চিত্র। এ ৩টি চলচ্চিত্র নির্মাণের কারন হিসেবে বিশাল এ জনসমুদ্রে তার ব্যাখাও তিনি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’র দু’ কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে গেলেও, ওই সময় থেকেই বিদেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধুর দু’ কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে নিয়ে শুরু হয়েছিলো গভীর ষড়যন্ত্র। পিতা, মাতা, ভাই, বোন ও আত্মীয়-স্বজন হারানোর শোক বুকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর দু’ কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করেন দেশের বাইরে। এরপর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। মূলতঃ ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত ঘটনা প্রবাহ নিয়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে ‘জননেত্রী’ নামক চলচ্চিত্র। তিনি বলেন, এ ঘোষণা দেয়ার পর স্বাধীনতা বিরোধী চক্রটি নতুন করে আবারো আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে।

কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের পর তৎকালীন জেলা প্রশাসক, চাঁদপুর-এর অনুমোদন এবং মহামান্য হাইকোর্টের রায়ে ২০১৯ সাল থেকে মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজে চাঁদপুর সদর উপজেলা ও হাইমচর উপজেলার নদীর ডুবোচর অপসারণ করে নাব্যতা স্বাভাবিক রাখার লক্ষে ড্রেজিং করার অনুমোদন প্রদান পায়। ওই সময় ৩০ কোটি ৮৪ লাখ ১০ হাজার ঘন ফুট বালু উত্তোলনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উপ-পরিচালক বিআইডব্লিউটিএ, চাঁদপুরকে নির্দেশনা দেয়া হয়। পরবর্তী পর্যায়ে ৪/১০/২০২১ তারিখে বিআইডব্লিউটিএ, চাঁদপুর-এর উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) ৭৬৭ নং স্মারকে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করে জেলা প্রশাসক, চাঁদপুরকে প্রতিবেদন প্রেরণ করে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিলো ‘৩০ কোটি ৮৪ লাখ ১০ হাজার ঘন ফুটের মধ্যে বর্তমানে ২৬ কোটি ৯১ লক্ষ ঘন ফুট (প্রায়) বালু জমা আছে বিধায় মহামান্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী অবশিষ্ট বালি উত্তোলন করতে পারবে। এছাড়া নদীর তলদেশের প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য প্রতিবছর অন্তরে আবারো হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করার প্রয়োজন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিলো।

এ প্রসঙ্গে সেলিম খান বলেন, প্রতি বছর বিআইডব্লিউটিএ’র হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের ফি দেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ রিপোর্ট দেয়। সেই রিপোর্ট এবং মহামান্য হ্ইাকোর্টের আদেশের আলোকের নিয়ম মেনে আমার প্রতিষ্ঠানের ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অথচ, মহামান্য হাইকোর্টের অনুমতির রায় উপেক্ষা করে বারংবার বলা হচ্ছে মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। যা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশকে অবমূল্যায়নের সামিল।

এ প্রসঙ্গে সেলিম খান বলেন, যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছি বলে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সহসাই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং নিতে বাধ্য থাকবো। তিনি বলেন, অবৈধ বালুর প্রসঙ্গ তুলে যারা বারংবার প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য মূলতঃ অন্যটি। এর পেছনের কারন, আগামী ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের উদ্দেশ্য নিয়েই একটি চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে মেতে উঠেছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক খ্যাত চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন এবং চাঁদপুর সদরসহ হাইমচর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুর্গে আঘাত হানা এবং চাঁদপুর-৩ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে কোনো প্রার্থীর আসার পথকে সুগম করা। সেলিম খান বলেন, ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং এ ইউনিয়নে চাঁদপুর জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাড়ি। গেলো ক’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে এ ইউনিয়নে এবং বিজয়ী হয়েছে। সেই হিসেবে ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন হচ্ছে আওয়ামী লীগের অর্থাৎ নৌকার ভোটব্যাংক। এ ভোটব্যাংকে আঘাত হানার জন্য ওই চক্রটি নানান ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।

সেলিম খান বলেন, আমাকে নিয়ে ২০০৩ সাল থেকেই মূলতঃ ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ২০০৩ সালে মানুষের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও সেই সময় প্রশাসনের ভোটে আমাকে পরাজিত করা হয়েছে। সুতরাং, ষড়যন্ত্রকারীরা যতোই শক্তিশালী হোক না কেন, সাধারণ মানুষ তথা ১০নং লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নবাসী এ ষড়যন্ত্রের কথা ভালোভাবেই জানে।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এটাও জানে মূলতঃ আওয়ামী লীগের ঐক্যকে বিনষ্ট করার লক্ষে কতিপয় রাজনৈতিক নেতা দলের চিন্তা না করে ব্যক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছে, তাদের মুখোশ সহসাই উন্মোচিত হবে।

Loading

শেয়ার করুন: