
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
মানুষের কথা বলার মধ্যেও একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে, যেমন মেয়েরা প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার বাক্য বলে, আর ছেলেরা প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার বাক্য বলে। এটার আবার একটা ভালো দিক আছে সেটা হল মেয়েদের যত ধরনের আপত্তি, অভিযোগ যা কিছু থাকে সেগুলো সব কথায় সেরে ফেলে, আর ছেলেরা যেহেতু কথাই কম বলে আপত্তি, অভিযোগ যা কিছু থাকে সেগুলো একেবারে হাতে-পায়ে হয়ে যায়। যেহেতু কথা দিয়েই সমস্ত কিছু সমাধান করা যায় তাহলে আমরা মস্তিষ্কের শক্তি প্রয়োগ করতে চাই পেশি শক্তি চাইবো না।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসন আয়েজিত অলিম্পিয়াডের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা চারপাশে যা কিছু দেখছি সবই বিজ্ঞান, আজকের এই অলিম্পিয়াডে যারা অংশগ্রহণ করেছ, আমি মনে করি তোমাদের শিক্ষকরা অভিভাবকরা তোমাদেরকে সহযোগিতা করেছে। আরো সহযোগিতা পাবে যেমন এখন স্কুলের বই পড়তে অনেক মজা করে করে শিখা যায়। আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমে সবকিছুই ট্রাই করবো, করে করে শিখব, সেটাকে আবার বুঝব, আবার প্রয়োগ করতে শিখবো। তোমরা বলতো কে বলেছিলেন গাছপালার জীবন আছে “স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু” উনি আমাদের বিজ্ঞানী। আমাদের চাঁদপ্রিয় অনেক বড় বড় বিজ্ঞানী আছে যেমন অনুজীব বিজ্ঞানী সমীর সাহা, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডক্টর সিনহাসহ আরো অনেকে। চাঁদপুরে শিল্পী আছে হাশেম খান, মনিরুল ইসলাম, ফরিদা জামান, ঢালী আল মামুন সহ আরো অনেকে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, আমাদের এখন বসে থাকলে চলবে না, সামনে এগিয়ে যেতে হবে, আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অংশীদার হয়ে দেশটাকে অনেক সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, ডিজিটাল বাংলাদেশের পক্ষে সেটা করা সম্ভব। আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্যে রয়েছে রোবটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, ব্লক চেইন এরকম আরো অনেক কিছু আছে। এই প্রযুক্তি গুলো আমাদের শিখতে হবে, এগুলো শেখার জন্য এখনই শিক্ষার্থীদের কে তৈরি হতে হবে। আমরা চাই তোমরা সেই প্রযুক্তি গুলা এখন থেকে শিখো, আর প্রযুক্তি কিন্তু মুখস্ত করার কাজ নয়। প্রযুক্তি বুঝা এবং মাথা খাটানোর কাজ। আমাদের কাছে যদি খুব ভালো দামি একটা যন্ত্র থাকে, সেটা যদি ব্যবহার না করি তাহলে সেটার কোন দাম নেই, ঠিক আমাদের মাথায় একটা সুপার কম্পিউটার সৃষ্টিকর্তা (ব্রেইন) বসিয়ে দিয়েছেন এটাকে যদি ব্যবহার না করি তাহলে তো মূল্যই রইল না। এই যে দামী সর্বশ্রেষ্ঠ সুপার কম্পিউটার সৃষ্টিকর্তা দিয়ে দিয়েছেন এটাকে কাজে লাগাতে হলে আমাদের কাজ করতে, শিখতে হবে, প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে, এবং এগুলা সবকিছুই তোমাদের দিয়েই সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, এইযে এত বড় বড় বিজ্ঞানীরা রয়েছেন, তারা কিন্তু আমাদের মতই মানুষ ছিলেন, তারা এই সৃষ্টিকর্তার দেওয়া সুপার কম্পিউটারটাকেই ব্যবহার করেই আজ এত বড় বড় বিজ্ঞানী, আবিষ্কারক হয়েছেন। একটু ভেবে দেখো আমরা কিন্তু কৃষিতে দারুন ভালো করেছি, সেটা কিন্তু এমনি এমনি হয়নি, গবেষণার ফলেই হয়েছে। স্বাধীনতার পরপর আমাদের দেশে মানুষ ছিল সাড়ে ৭ কোটি, তখন এই মানুষের যে খাবারের চাহিদা ছিল তার মাত্র ৬০ ভাগ আমাদের জমিতে উৎপাদন করতে পারতাম। জমি ছিল বেশি মানুষের চাহিদা ছিল কম, কিন্তু এখন আমাদের দেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি জায়গা নিয়ে বসবাস করিভ যার কারণে জমির পরিমাণ কমে গিয়েছে। তারপরেও আমরা ১৭ কোটি মানুষের চাহিদার জন্য শতকরা ১০০ ভাগ মানুষের খাবার উৎপাদন করতে পারি। এই যে উৎপাদন এত গুণ বাড়ানো হয়েছে এটা সম্ভব হয়েছে কৃষিবিদ, গবেষকদের গবেষণার কারণে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের মেট্রো রেল, টানেল, মোবাইল ফোন এগুলো সব কিছুই প্রযুক্তির দ্বারা তৈরি হয়েছে। তাহলে আমাদের এই বিজ্ঞান প্রযুক্তি খুব ভালো করে শিখতে হবে। আমাদের আমাদের বাংলা ভাষাকে বিকৃতি না করে এখন ইংরেজি সহ তৃতীয় ও চতুর্থ ভাষাও শিখতে হবে তাহলে সারা পৃথিবীর দরজা তোমাদের জন্য খোলা। আইসিটি এখন স্বাক্ষরতার অংশ, কম্পিউটার চালাতে পারা এটাও সাক্ষরতার অংশ। আমাদের এখন সফট স্কিলস শিখতে হবে। সফট স্কিলস হলো যোগাযোগ স্থাপন করা, সূক্ষ্ম চিন্তা, সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা এরকম আরো অনেক কিছু আছে এগুলা সব কিছু মিলিয়ে হল সফট স্কিলস। আশা করি আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম যেমন এগিয়ে নিবে একই সঙ্গে আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশে এবং বিদেশে নানান রকমের পদক অর্জন নিয়ে আসবে। ইনশাআল্লাহ আমরা বিজয়ী জাতি আমরা যুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছিলাম তার কন্যার নেতৃত্বে আমরা সম্পূর্ণ তো দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, এবং তার নেতৃত্বেই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গরবো। আর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট নাগরিক লাগবে আর সেই স্মার্ট নাগরিক তোমরাই হবে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার), পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান জুয়েল, চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অশিত বরন দাস, পুরান বাজার ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবু সাঈদ।
ছড়াকার, সাহিত্যিক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বশির আহমেদ।
অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন- ফরিদগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান এডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, সদর সার্কেল অফিসার ইয়াসির আরাফাত, আলামিন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রান কৃষ্ণ রায়, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, শহীদ পাটোয়ারী, পৌর কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, শিক্ষামন্ত্রীর চাঁদপুর প্রতিনিধি সাইফুদ্দিন বাবু সহ সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে অনুভূতি প্রকাশ করেন, মাতৃপীঠ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রওজাতুল রুম্মান ও হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী আলামিন রোম্মান।
অনুষ্ঠানের জেলা পর্যায়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী প্রতিযোগীদের হাতে সনদপত্র, সম্মাননা স্মারক, উপহার ও এককালীন বৃত্তির নগদ অর্থ তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রীসহ অন্য অতিথিরা।