মতলব উত্তরে বারি-১৪ জাতের সরিষায় বাড়তি আয় কৃষকের

মতলব উত্তর (চাঁদপুর):

আমন ঘরে তোলার পর বেশ কিছু সময় ফাঁকা পড়ে থাকে জমি। কৃষক তো আর বসে থাকতে পারে না। আর ঘরে বসে থাকলে তো পেটে ভাত যাবে না। কারণ ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের। তাই আমন ঘরে তোলার পরপরই তারা নেমে পড়েন সেই ফাঁকা জমিতে।
রবি মৌসুমের বিভিন্ন জাতের ফসল লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। এরমধ্যে অন্যতম একটি ফসল হলো সরিষা। জমিতে চাষ দিয়ে সরিষা বীজ জমিতে রোপণ করেন। এরপর যথাসাধ্য সেবাযতœ শুরু করে দেন সরিষা চাষিরা।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার গোয়ালভাওর, গাজীপুর, নবুরকান্দি, মান্দারতলী এলাকার বেশ কিছু চাষী উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে বারি সরিষা-১৪ জাতের চাষ করে। সরিষা জাতের ফসলও ভাল হয় জমিতে। এসব এলাকার বেশির ভাগ কৃষকই এবার তাদের জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা লাগিয়েছিলেন। ফলনও বেশ ভাল পেয়েছেন। একাধিক চাষির সঙ্গে আলাপকালে সরিষা আবাদ সম্পর্কে এমনই তথ্য ওঠে আসে।

কৃষক মনির হোসেন জানান, বর্তমান সময়ে তাদের মতো কৃষকদের অনেক ফসল চাষ করে লোকসান গুণতে হচ্ছে। সেই লোকসান কাটিয়ে উঠতে তাদের সব সময় বাড়তি আয়ের চিন্তা করতে হয়। সেই ভাবনা থেকে এবার তিনি প্রায় ৫ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা লাগান। ইতোমধ্যে কাটা মাড়াইয়ের কাজও শেষ করে ফেলেছেন। প্রতিবিঘায় এই জাতের সরিষার ফলন হয়েছে গড়ে ৭ মণ হারে।

এই কৃষকের ভাষ্য, সরিষা ফলন মন্দ হয়নি। দামও বেশ ভাল। বাড়তি আয়ের আশায় চাষ করে সরিষা থেকে বাড়তি লাভবান হয়েছেন তিনি।
সাদেক হোসেনও এবার বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছিলেন প্রায় ৪ বিঘা জমিতে। গড়ে বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ মণ হারে। এছাড়া বর্তমানে অন্য ফসলের চেয়ে সরিষার বাজারদর ভাল। এ কারণে সরিষা আবাদ করে তিনি ঠোকেননি। বরং বেশ লাভবান হয়েছেন যোগ করেন এই কৃষক।

এসব কৃষকরা জানান, তাদের মতো কৃষকদের সব সময় বাড়তি আয়ের চিন্তা নিয়ে ফসল ফলাতে হয়। কারণ অনেক ফসল চাষ করে লোকসান গুণতে হয় অনেক সময়। সেই লোকসানের ধকল সামলে নিতে বিকল্প ফসল নিয়ে ভাবতে হয় তাদের।

কৃষক বাবুল মিয়াজী জানান, এবার শীতের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে ছিলো। এছাড়া সরিষা চাষে খুব একটা ব্যয়ও করতে হয় না। সরিষার জমিতে খুব বেশি চাষ দিতে হয় না। সার, বীজ, চাষ, সেচ, কীটনাশক, শ্রমিকসহ প্রতিবিঘা জমির বিপরীতে বড়জোড় ৬ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়। বর্তমান বাজারে প্রতিমণ সরিষা রকমভেদে ১৫০০ থেকে ১৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে গড়ে ৭ মণ হারে সরিষা পেলেও বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী সব খরচ বাদে তাদের ভালই লাভ হচ্ছে যোগ করেন কৃষক জয়নাল আবেদীন।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪ ও বারি-১৫ জাতের সরিষা বেশির ভাগ জমিতে লাগানো হয়েছে। ফলনও বাম্পার হয়েছে। পাশাপাশি কৃষক তার উৎপাদিত সরিষার ভাল দাম পাচ্ছেন বলেও জানান কৃষি বিভাগের ওই কর্মকর্তা।

এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদপুরের মতলব উত্তরে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ বিতরণ (৩য় পর্যায়ে) প্রকল্পের আওতায় বীজ উৎপাদন ব্লক প্রদর্শনী এর বারি সরিষা-১৪ মাঠ দিবস ও রিভিউ ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়নের গোয়াল ভাওর-নবুরকান্দি ব্লকে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এর সভাপতিত্বে ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পুর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলার উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভোজ্য তেলের চাহিদা বেড়েছে এবং স্থানীয় জাতের সরিষার ফলন কম হওয়ার কারণে বিকল্প ভোজ্য তেল সয়াবিনের প্রতি আমাদের ঝুঁকতে হয়েছে। কিন্তু তা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তিনি আরো বলেন, সরিষার তেলে মানবদেহের জন্য অনেক গুণাগুণ রয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত বারি সরিষা-১৪ জাতটি স্বল্প জীবনকাল এবং ফলন অনেক বেশি হওয়ায় কৃষকদের লাভের পরিমান অনেক বাড়বে।

আরো বক্তব্য রাখেন- ইউপি সদস্য বিল্লাল হোসেন, কৃষক মনির হোসেন প্রমুখ। এ সময় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুস সামাদ, সমাজসেবক আব্দুল মান্নান, বাবুল মিয়াজী, গোলাম মোস্তফা’সহ স্থানীয় কৃষক-কৃষাণীরা উপস্থিত ছিলেন।

Loading

শেয়ার করুন: