রিকশাচালক নয়নের সততা যেনো সমাজের চোখ খুলে দিলো

রিকশায় ভুল করে মোবাইল ফোনটি ফেলে গিয়েছিলেন এক যাত্রী। পরে ওই ফোন মালিককে ফেরত দিয়ে সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন নয়ন শেখ নামের এক হতদরিদ্র রিকশাচালক।

২৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার চাঁদপুর সদরের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। তিনি ওই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে নয়ন শেখের রিকশায় ওঠেন চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম আহসান উল্লাহ। তিনি রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দেয়ার সময় ভুলে হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি রিকশার সিটে রেখে দেন এবং প্রেস ক্লাবের মিটিংয়ে চলে যান। ১০ মিনিট পর তিনি বুঝতে পারেন মোবাইল ফোনটি সঙ্গে নেই। সঙ্গে সঙ্গে তিনি খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর তিনি বুঝতে পারেন মোবাইল ফোনটি রিকশার সিটে ফেলে এসেছেন। এরপরই রিকশাচালকের খোঁজ শুরু করেন।

পরবর্তীতে তিনিসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিক মোবাইলে কল করে দেখেন রিং হয়, কিন্তু কেউ রিসিভ করেনি। অনেকবার কল করার পরও রিসিভ না করায় তিনি কিছুটা হতাশ হন। তবে তেমন একটা চিন্তিত হননি এজন্যে যে খারাপ কোনো লোকের হাতে পড়লে মোবাইল বন্ধ করে ফেলতো। অবশেষে দুপুরে অপর প্রান্ত থেকে ফোন রিসিভ করে তার পরিচয় দিয়ে বলা হলো সে রিকশা চালক নয়ন।

তখন নয়ন জানান মোবাইলটি তার কাছে আছে এবং তার বাড়ির ঠিকানা বলে বললেন মোবাইল আনতে তার বাড়িতে যাওয়ার জন্যে।

বিকেল ৩টার দিকে চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম আহসান উল্লাহ এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক এ কে আজাদ রিকশাচালক নয়ন শেখের বাড়ি যান। তখন নয়ন শেখ হারিয়ে যাওয়া মোবাইল সেটটি তাদের হাতে তুলে দেন।

এ সময় নয়ন শেখের স্ত্রী,সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরাও সামনে ছিলো।নয়ন শেখ তখন আলাপচারিতায় বললেন, একটা মোবাইল সেট খেয়ে (আত্মসাৎ) আমি কি বড়লোক হয়ে যাবো? কিন্তু আমি চিন্তা করেছি যার মোবাইল তিনি অবশ্যই খোঁজ করবেন। তখন আমি তাকে ফেরত দিয়ে দেবো।

হতদরিদ্র রিকশা চালক নয়ন শেখের সততায় মুগ্ধ হন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। তখন প্রেসক্লাব সেক্রেটারি নয়ন শেখকে বখশিস দেন। নয়ন শেখ বখশিস পেয়ে খুব খুশি হন। হতদরিদ্র রিকশা চালক নয়ন শেখ যেনো সমাজের চোখ খুলে দিলো।

এ বিষয়ে চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম আহসান উল্লাহ বলেন,‘আমরা শিক্ষিতরাই অনেক সময় লোভী হয়ে যাই। কিন্তু নয়ন শেখের পুঁথিগত শিক্ষার অভাব থাকলেও সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত তিনি। একজন হতদরিদ্র রিকশাচালক হয়েও সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এটা অবশ্যই সবার জন্য শিক্ষণীয়। ঘটনাটি সমাজের জন্য সততার একটি মেসেজস্বরূপ।’

Loading

শেয়ার করুন: