সন্তানসহ ১৭দিনেও খোজ মেলেনি সুরভির

নিজস্ব প্রতিবেদক॥

অটোবাইকে চড়ে ৬ বছরের সন্তান নিয়ে স্বামীর বাড়ির উদ্দেশ্যে খালার সাথে বের হয় গৃহবধু সুরভী (২৩)। এরপর পথিমধ্যে খালা তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য নেমে গিয়ে তিনি নিজের বাড়িতে পৌছলেও তার বোনঝি সুরভী স্বামীর বাড়িতে আর পৌঁছেনি। গত ১৬ দিনেও তার সন্ধান বাপের বাড়ি এবং স্বামীর বাড়ীর কেউ জানে না।

নিখোজের ঘটনায় সুরভীর বাবা কালু মিয়া ফরিদগঞ্জ থানায় জিডি করলেও পুলিশও অদ্যবদি কোনো সন্ধান পায়নি। আবার স্বামীর পরিবারের পক্ষে থানায় জিডি করতে আসলে একই ঘটনায় দুটি জিডি হয় না, তাই তারা ফিরে গিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে সুরভি নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে লিখিত অভিযোগ করে।নিখোঁজের ১৬দিন পেরিয়ে গেলেও অদ্যাবদি সন্তানসহ সুরভি (২৩)-এর হদিস না মেলায় সুরভি কোথায় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে সবাই।

জানা গেছে, উপজেলার বালিথুবা পুর্ব ইউনিয়নের মানিকরাজ গ্রামের ঠিকাদার কালু মিয়ার মেয়ে সুরভি বেগমের সাথে পার্শ্ববর্তী বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সকদিরামপুর গ্রামের আঃ মান্নান বেপারীর সৌদি প্রবাসী আমিন বেপারীর সাথে ৮ বছর পুর্বে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ৬ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

গত ১২ আগস্ট বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যার সময় সুরভি বেগম তার বাপের বাড়িতে চলে আসে। পরে সে তার বাবাকে জানায়, তার শাশুড়ি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। সুরভির বাবা সাথে সাথে মেয়েকে নিয়ে সকদিরামপুর যায়। সেখানে একই বাড়ির চট্টগ্রামের ব্যবসা করা আ: লতিফের মাধ্যমে ঘটনার মিমাংসা করে। পরে সুরভি কয়েকদিন বাপের বাড়িতে থাকবে বলে বাবার সাথে চলে আসে।

এরপর গত ১৭ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেলে সুরভি স্বামীর বাড়ি যাওয়ার জন্য ৬ বছরের শিশু কন্যা স্বর্ণাকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। সুরভির সাথে তার খালা রানী বেগম স্বামীর বাড়ি চাঁদপুর সদর ইউনিয়নের পাইকদি গ্রামে যাওয়ার জন্য একই অটোবাইকে রওনা দেয়। সুরভির খালা রানী বেগম চান্দ্রা চৌরাস্তায় নিজের স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য গাড়ী থেকে নেমে যায়। রানী বেগম তার স্বামীর বাড়িতে পৌছলেও সুরভিকে তার স্বামীর বাড়ি সকদিরামপুর পৌছেনি।

পরে সুরভির নিখোজের ঘটনা জেনে পরদিন ১৮ আগস্ট বুধবার তার পিতা কালু মিয়া ফরিদগঞ্জ থানায় জিডি করেন। এর একদিন পর তিনি আমির বেপারীর বাবা আ: মান্নান বেপারীকে জানান। যা রহস্যজনক।

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সরেজমিন গেলে কথা হয় উভয় পরিবারের সদস্যদের সাথে। বালিথুবা পুর্ব ইউনিয়নের মানিকরাজ গ্রামে কালু মিয়ার বাড়িতে গেলে দেখা হয় সুরভির খালা রানী বেগমের সাথে।

তিনি জানান, একদিন আগে তিনি বোনের বাড়িতে এসেছেন। ওই দিনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন সুরভি আমাদের সাথে গাড়ীতে ছিল। আমাকে চান্দ্রা চৌরাস্তায় নামিয়ে দিয়ে একই গাড়ীতে করে সকদিরামপুরের দিকে যায়। পরে শুনতে পাই সে তার স্বামীর বাড়িতে পৌছেনি। সে কোথায় গেল এই প্রশ্ন আমার।

সুরভির মা সুরাইয়া বেগম, ফুফু হাসনা বেগম এবং বড় বোন রোশনি বেগম জানান, সুরভিকে তার শশুড় শাশুড়ি নির্যাতন করতো। জনৈক ক্যাবল অপারেটর কর্মী তার মেয়েকে চিপস ও জুস কিনে দেয়ায় তারা সুরভির সাথে ওই কর্মীর সাথে সর্ম্পক রয়েছে বলে প্রচার করে। এখন সুরভি নিখোজ কিন্তু ওই ক্যাবল অপারেটর কর্মী এখনো তার এলাকায়। তাই তাদের অভিযোগ মিথ্যা।

তারা জানান, গত ১২ আগস্ট সুরভিকে তার শাশুড়ি মারধর করায়, সে সন্ধ্যার সময় আমাদের বাড়িতে চলে আসে। পরে তার বাবা কালু মিয়া ওই বাড়িতে গিয়ে ওই বাড়ির আ: লতিফের মাধ্যমে ঘটনার মিমাংসা করে আসেন। পরবর্তীতে সুরভি বাপের বাড়িতে বেড়াতে চাইলে মেয়েকে নিয়ে আসেন। কিন্তু গত ১৭ আগস্ট সে নিজেই স্বামীর বাড়ি যাওয়ার জন্য খালাকে একদিন রেখে দেয়। ঘটনার দিন উভয়ই একসাথে বের হয়ে যায়। কিন্তু মেয়েসহ সুরভি নিখোজ হয়ে যায়।

সুরভির পিতা কালু মিয়া বলেন, সুরভি স্বামীর বাড়িতে যাবে বলে তাকে আমি অটোবাইক ঠিক করে দেই। পরে তার সাথে যোগাযোগ করা চেষ্টা করি কিন্তু কোনো যোগাযোগ করতে না পেরে থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রি করি। তিনি জানান, গত ১২ আগষ্ট সুরভি শাশুড়ী তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে বলে সে আমার বাড়ি চলে আসে। মেয়ের কথা শুনে তার শ্বশুড় বাড়ির গণ্যমান্য ব্যক্তি আঃ লতিফকে অবগত করলে। তিনি সেই দিনই আমার উপস্থিতিতে সুরভি ও তার শাশুড়ির মধ্যে মিমাংসা করে দেয়।

সকদিরামপুর গ্রামে সুরভির শশুড় বাড়ি গেলে দেখা যায়, সুরভির স্বামী আমিন বেপারী ও তার ভাই ইয়াছিন বেপারী দুই ভাই নিজেদের জন্য পৃথক স্থানে আলাদা বাড়ি করেছেন। সুরভি ও তার স্বামী আমিন বেপারী দুই তলা বিশিষ্ট ভবন রয়েছে। ওই বাড়ির আ: রহিম, বাচ্চু বেপারীসহ বেশ কয়েকজন জানান, আ:মান্নান বেপারীর দুই ছেলের সংসারে কোন অশান্তি দেখিনি। আ: মান্নান বেপারী ও তার স্ত্রী বড় ছেলে ইয়াছিন বেপারীর ঘরে থাকতেন । যদিও মাসের অর্ধেক সময় এক ছেলের ঘরে, বাকী সময় অন্য ছেলের ঘরে খাওয়া করতেন। উভয় পুত্রবধুর সাথেই তাদের ভালো সম্পৃক ছিল। কখনো মন্দ কিছু চোখে পড়েনি। তবে স্বামী বিদেশ থাকায় সুরভি একা একাই চলাফেরা করতো।

সুরভির শশুড় আঃ মান্নান বেপারী বলেন, সুরভি এই বাড়িতে একা থাকতো। আমরা বড় ছেলে ইয়াছিন বেপারীর সাথে থাকি। প্রতি মাসে ১৫দিন এই বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করে আমরা বড় ছেলের বাড়িতে ঘুমাই। বাকি ১৫ দিন ছোট ছেলে আমিন বেপারী বাড়িতে খাই। আমার স্ত্রী নিরিবিলি নামাজ ও কোরআন তেলোয়াত করার জন্য সুরভির কাছে একটি রুম চাইলে সে দেয়নি। পরে সে বাপের বাড়ি চলে গেছে, আর ফিরে আসলো না। আমি আমার নাতনি ও পুত্রবধুকে ফেরত চাই।

সকদিরামপুর গ্রামের আঃ লতিফ বেপারী বলেন, বাড়িতে কোনো ঘটনা হলে সবাই আমার কাছে আসে। আমি চেষ্টা করি মিমাংসা করে দেওয়ার। সুরভির বাবা কালু মিয়াও ১২ আগস্ট আমাকে ফোন করেছিলো। তার মেয়ের বিষয়ে আমি উভয় পক্ষের সাথে কথা বলি। আমিন বেপারীর মা নামাজ ও কোরাআন তেলোয়াত করবে বলে এক রুম চেয়েছিল, কিন্তু সুরভি রাজি ছিলোনা। এই নিয়ে উভয়ের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়েছে। আমি বিষয়টি মিমাংসা করে দিয়েছি।

এদিকে সুরভি সন্তানসহ নিঁখোজের ১৭দিন হয়ে গেলেও পুলিশ অদ্যবদি কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। উভয় পরিবার তাদের স্বজনকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানালেও উভয়ে কথায় মিল পাওয়া যায়নি। ফলে সুরভির অন্ত:ধান রহস্যজনক বলে মনে করছে স্থানীয় লোকজন। ফলে সুরভি এখন কোথায় এই প্রশ্ন সকলের।

সুরভি নিখোজের বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানা অফিসার ইনর্চাজ শহিদ হোসেন বলেন, এই বিষয়ে নিখোঁজ জিডি হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করছে । সুরভি উদ্ধার হওয়ার পরে বোঝা যাবে কি হয়েছে।

Loading

শেয়ার করুন: