সরকার নারীদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য ৩৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় করছে: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে অনেক সুযোগ সুবিধা তৈরী করেছেন। আমাদের দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীর সংখ্যা বেশী। এটি একটি বিরাট অর্জন। কোন মুসলিম দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে নারীরা এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ব্যাতিক্রম। ছাত্রের তুলনায় ছাত্রী সংখ্যা বেশী। এর মূল কারণ হচ্ছে শিশু বৃত্তি, উপবৃত্তি, বিনামূল্যে বই এবং মেয়েদের জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেয়া। বিশেষ করে প্রাইমারি স্কুলে মিড ডে মিল চালু করা। এসব কারণে বিদ্যালয়ের ভর্তির হার বেড়েছে। একই সাথে মানুষের আয়ও বেড়েছে। সরকারের বিশেষ আয়োজনে এটি সম্ভব হয়েছে।

বুধবার (১৬ মার্চ) দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে ও পৌরসভার মেয়র এর সার্বিক সহযোগিতায় উদ্যমী নারী এসএমই মেলার সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন এই সরকারের আমলে কর্মক্ষম নারী অর্থাৎ ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়স পর্যন্ত নারীরা আমাদের দেশে ৩৬.৩ শতাংশ কর্মে নিয়োজিত। এটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বেশী। এই সংখ্যায় ভারতে আমাদের চাইতে কম, পাকিস্তানে খুবই কম। এই যে নারীদের কর্মে নিয়োজিত করা, এটি সরকারের পরিকল্পনার মাধ্যমে হয়েছে। আমরা এটাকে ৪০ শতাংশে উন্নিত করতে চাচ্ছি। প্রশাসনেও ২০% নারীরা রয়েছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পীকার নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী ও অন্যান্য পদেও নারীরা রয়েছেন। সরকারের যে বাজেট হয়, সেখানে নারীদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য বর্তমানে ৩৩% অর্থ ব্যয় হয়।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রথমেই বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা চালু করেছিলেন। নারীদের জন্য তিনি সবক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়ার মানে হচ্ছে একজন শিশু যেন সুস্থভাবে জন্মগ্রহন করতে পারে। এক্ষেত্রে সরকার এনজিও গুলোকে কাজ করার অনেক সুযোগ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে নারীদের নেতৃত্বে থাকা এনজিওগুলোকে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনারা এসএমই ফাউন্ডেশনের কথা শুনেছেন। সেখানে বিভিন্ন ব্যাংকগুলো থেকে .৫ শতাংশ সুদে নারী উদ্যোক্তাদের টাকা দেয়া হচ্ছে জামানত বিহীন। এর জন্য সরকার ৩শ’ কোটি টাকা রেখেছেন। নিজে উদ্যোগ নিয়ে বিনিয়োগ করে ব্যবসা চালু করাই হচ্ছে উদ্যোক্তা। আমাদের প্রচুর পরিমান উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষায় মাধ্যমিক পর্যায়ে নারীরা এগিয়ে এসেছে। উচ্চ শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহন আরো বাড়াতে হবে।

নারী উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের এখন বেশী প্রয়োজন শিশু ডে কেয়ার সেন্টার তৈরী করা। কারণ বেশীরভাগ পরিবারে এখন পিতা-মাতা উভয় চাকরী করেন। হস্তশিল্প নিয়ে এগিয়ে আসতে পারেন। এটার জন্য আপনারা ব্যাংকগুলো থেকে বিশেষ ঋণ পেতে পারেন। পর্যটন ক্ষেত্রে এগিয়ে আসা এবং এই বিষয়ে পড়াশুনা করার জন্য উৎসাহ দেয়া দরকার। প্রথমেই শিল্পখাতে যাওয়া ঝুঁকি আছে। তাই ছোট ছোট কাজগুলোতে এগিয়ে আসতে পারেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে সংস্থা আছে কোন দেশের নারীরা কতটা ক্ষমতায়িত। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ১৬৩ দেশের মধ্যে ৫০তম দেশ। আমাদের পিছনে ভারত। পাকিস্তানত আরো পিছনে। এই সূচকটা আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে রাজনীতি চলছে। অথচ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সরকারের কোন হাতে নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশের সকল সেক্টরে উন্নতির সাথে সাথে কৃষি জমি কমে আসছে। যার ফলে কৃষি উৎপাদনও অনেক কমেছে। অপর দিকে আমদানিকৃত দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্যর দাম বাড়ছে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেমে গেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক দ্রব্যমূল্য কমে আসবে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের যে মূল্যস্ফীতি, এটি আমাদানি মূল্যস্ফীতি। এখানে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পেলে সরকারে কিছু করার নেই। তবে সরকারের যেটা করার রয়েছে, এটি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার ভ্যাট-ট্যাক্স উঠিয়ে দিয়েছে। এদেশে বিভিন্ন সময়ে এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মজুদকারীরা দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ানোর অপচেষ্টা চালায়। বর্তমান সরকার তাদের বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে সরকার দেখেছি, তার পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এত দক্ষ সরকার আর দেখিনি।

তিনি বলেন, আপনারা কারো মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হবেন না। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনগণের দুঃখ বুঝেন। তিনি সবসময় দেশের মানুষের কথা চিন্তা করেন। শেখ হাসিনা নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে।

সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর সহযোগী অধ্যাপক ড.রফিউদ্দিন আহমেদ। চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র প্রেসিডেন্ট মনিরা আক্তারের সভাপতিত্বে ও সদস্য কবিতা সাহার সঞ্চালনায় আলোচকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.ইমতিয়াজ হোসেন,পৌরসভার মেয়র মো.জিল্লুর রহমান,সিনিয়র সাংবাদিক মিজান মালিক, প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার ইয়াসির আরাফাত, শিল্পচূড়া সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সভাপতি মাহবুবুর রহমান সেলিম প্রমূখ।

এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকেও বক্তব্য রাখেন ফজিলতুন্নেছা আবু, শারমিন আক্তার জুঁই ও নাজমা আলম।

Loading

শেয়ার করুন: