সিলেট যেন এক অচেনা জনপদ

মেঘনা বার্তা ডেস্ক ॥

যত দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, লোকালয় সবখানেই পানি। শহর-গ্রামের মধ্যে নেই কোনো পার্থক্য। সবখানেই থৈ থৈ করছে পানি। গত তিন-চার দিন ধরে বন্যা কবলিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে সিলেট। সব মিলিয়ে সিলেট যেন এক অচেনা জনপদের নাম।
স্থানীয়রা জানান, সিলেটের কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, সদর উপজেলা, কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় এমন বন্যা আগে কেউ দেখিনি। মানুষের ঘর-বাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এত ক্ষয়-ক্ষতির পরও মানুষ নিজের ও পরিবারের প্রাণ বাঁচাতে পেরে সৃষ্টিকর্তার কাছে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের আবুল কাশেম বলেন, ভাই জীবনে অনেক বন্যা দেখেছি, এ রকম কখনো দেখিনি। যখন পানি বাড়ছিল তখন ঘরের আসবাবপত্র উঁচু করতে ব্যস্ত ছিলাম। আফসোস করছিলাম নিজের হাতে সাজানো সংসারের জিনিসপত্র নিয়ে। বন্যার পানি যখন আধা ঘণ্টায় হাঁটুপানি হয়ে গেল, তখন পরিবারের সবাইকে বাঁচানোকে গুরুত্ব দিলাম। কোনোমতে একটা নৌকা ম্যানেজ করে সকলকে নিয়ে রাস্তায় উঠলাম। এরপর ঘরের কী অবস্থা তা আর জানা নেই।

সিলেটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অনেকেই তাদের পরিবার পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। বিদ্যুৎবিহীন হওয়ায় মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়ন এসব জনপদের মানুষ। কেউ কেউ আবার ২৪-৪৮ ঘণ্টা পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরে নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে করেছেন। আবার অনেকে এই দুঃস্বপ্নকে আজীবন বয়ে বেড়ানোর কথাও জানাচ্ছেন।

সাংবাদিক এমজে এইচ জামিল ফেসবুকে লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। ২৪ ঘণ্টা পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। ঘরের পানি নেমেছে। সর্বত্র খাদ্য সংকট। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর ২৪ ঘণ্টা জীবনে ভোলার নয়। আল্লাহ রহম করুন। আমীন।

চারদিকের বিভীষিকাময় পরিবেশে থাকা মানুষের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে গত ৭ ঘণ্টা বৃষ্টি না হওয়ায়।অনেক জায়গায় পানি কমতে শুরু করেছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী বলেন, আজ সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত খুবই কম হয়েছে, যা আমরা রেকর্ড করতে পারিনি। বৃষ্টি কম হওয়ায় ভালো লক্ষণ বলা যায়। তবে সারা দিনের কিছু সময়ে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আশা করা যায় আগামীকাল থেকে আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে আসবে এবং বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কমে যাবে। সেইসঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Loading

শেয়ার করুন: