হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে জুমাতুল বিদা’র নামাজ আদায়ে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ

স্টাফ রিপোর্টার॥

হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে জুমাতুল বিদা আদায়ে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। মুসল্লীদের নিরাপত্তায় ও সেবা দানে প্রায় ২০টি স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠানের সদস্য বৃন্দ স্বেচ্ছা সেবক হিসাবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবেন।

স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে অন্যতম দায়িত্ব নিয়োজিত থাকা প্রতিষ্ঠানসমূহ হচ্ছে, হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, হাজীগঞ্জ পৌরসভা,হাজীগঞ্জ থানা, বাজার ব্যবসায়ী সমিতি, হাজীগঞ্জ সবুজ সংঘ, হাজীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, রোটারী ক্লাব হাজীগঞ্জ, হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাব, হাজীগঞ্জ উপজেলা সাংবাদিক কল্যাণ সমিতি, নিরাপদ সড়ক চাই হাজীগঞ্জ উপজেলা শাখা, আহমাদিয়া কামিল মাদ্রাসা, আহমাদিয়া কাওমী মাদ্রাসা, আহমাদিয়া ফাউন্ডেশন, সবুজ ডেকোরেটর, সুজন ডেকোরেটর, সামাজিক সংগঠন প্রচেষ্টা, সামাজিক সংগঠন প্রভাত, হাজীগঞ্জ শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্ট, মাতৈন সমাজ কল্যাণ পাঠাগারসহ, স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ ।

সরেজমিনে জানায়ায় ,প্রতি বছরই রমজান মাসের শেষ শুক্রবার হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে জুমাতুল বিদা , আল কুদস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ জুমাতুল বিদা ও আল কুদস পালন উপলক্ষ্যে রমজানের শেষ শুক্রবার সকাল থেকে মসজিদ ও এর আশপাশের এলাকায় গড়ে তোলা হয় ব্যাপক নিরাপত্তা বলয়।কারণ হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে প্রথম আজানের পূর্বেই মুসল্লিরা অধিক সাওয়াবের আশায় বড় মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য এ মসজিদের সুবিধাজনক জায়গায় স্থান করে নেন।

এবারও (২০২১) রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাসের শেষ শুক্রবারে বিশেষ বয়ান রাখবেন এবং খোৎবা পাঠ ও নামাজ পড়াবেন হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুফতি আ. রউফ।

হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে জুমাতুল বিদা আদায়ে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করার মূলে যিনি দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন

তিনি হচ্ছেন, বহু সংগঠনের একজন সফল সংগঠক, বিশিষ্ট শিক্ষা গবেষক, হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, আহমাদআলী পাটওয়ারী ওয়াক্ফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি ড. মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারী। হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে জুমাতুল বিদা আদায়ে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে জুমাতুল বিদা নামাজ আদায় করার লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এত বড় আয়োজনে অতীতের ন্যায় সকল সে¦চ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।

এ বিষয়ে কথা হয় হাজীগঞ্জ সবুজ সংঘের এক কর্মকর্তার সাথে, তিনি বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে একটি বিশেষ খ্যাতিমান মসজিদ হচ্ছে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর কারণে সাধারণ মানুষের কাছে এ মসজিদটি দৃষ্টি কেড়েছে। হাজী আহমদ আলী পাটোয়ারী (র.) হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের ওয়াকীফ। প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম মোতাওয়াল্লি মসজিদের প্রতিষ্ঠাকাল ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ। সর্বমোট ২৮,৪০৫ বর্গফুট আয়তনের এই বিশাল মসজিদটির রয়েছে ১৮৮ ফুট (প্রায় ২০ তালা দালানের উচ্চতা) উচ্চতার কারুকার্য খচিত একটি মিনার। এ মিনারে কোন রড ব্যাবহার হয়নি (তখন রডের ব্যাবহার ছিল না)। শুধু চুন-সুরকি আর ইট দিয়ে নির্মিত। উদ্যোক্তা এ মসজিদ নির্মাণের জন্য তিনি নিজেই ইটভাটা নির্মাণ করেছিলেন।

এখনো বড় মসজিদটি আহম্মদ আলী পাটওয়ারী ওয়াক্ফ এস্টেটের তত্তাবধায়নে চলে। ঐতিহাসিক এই মসজিদের সাথেই আলীয়া মাদ্রাসা, হাফেজিয়া মাদরাসা, নূরানী মাদরাসা, ফোরকানীয়া মাদরাসা, ইসলামীয়া পাঠাগার, বেওয়ারিশ লাশ দাফন এবং দুঃস্থ-অসহায়দের সহযোগিতা প্রদানসহ ধর্মীয় কার্যাবলী চালু থাকায় ধর্ম প্রাণ মুসল্লীরা এ মসজিদে জুমাতুল বিদা নামাজ আদায় করতে অনেক দূর থেকে আসেন। তাই আমরা সবুজ সংঘের পক্ষ থেকে প্রতি বছর মুসল্লীদের স্বেচ্ছায় সেবা প্রদান করে থাকি।

হাজীগঞ্জ উপজেলা দুর্নীনিতী প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক,ঢাকা বিশ^বিদ্যাণয়ের সাবেক মেধাবী ছাত্র ,আহম্মদ আলী পাটওয়ারী ওয়াক্ফ এস্টেটের ভারপ্রাপ্ত মুতাওয়ালী, প্রিন্স শাকিল আহমেদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে,তিনি বলেন,শুধু জুমাতুল বিদা নয়, ঈদুল-ফিতর,ঈদুল-আজহাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে এ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে মুসল্লি¬দের আধিক্যে প্রায়শই এখানে দেশের বৃহৎ নামাজের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। শিরেক ও বিদায়াত মুক্ত আদর্শ এখানে বেশ শক্ত ভাবেই অনুসরণ করা হয় বলেই জুমাতুল বিদা সালাত আদায়ে মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। আর আমরাও মুসল্লীদের সুন্দর পরিবেশে নামাজ আদায়ে সর্বোত্তম সুবিধা নিশ্চিত করা সহ সকল প্রকার ধর্মীয় ব্যাবসা থেকে এখন পর্যন্ত আহম্মদ আলী পাটওয়ারী ওয়াক্ফ এস্টেটকে মুক্ত রেখেছি।

তিনি আরো বলেন,আহমাদ আলী পাটওয়ারী (র.) নিজ মালিকানাধীন সম্পত্তিতে বাড়ি-ঘর না বানিয়ে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে শতাব্দী কাল ধরে গণমানুষের সেবার জন্য সব কিছু দান করে গেছেন।

তাঁর উত্তরসুরী হিসাবে আজও আমরা ধর্ম-কর্ম, শিক্ষা-দীক্ষা, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানসহ গণমানুষের সেবার অনন্য প্রতিষ্ঠান হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্স, আহমাদ আলী পাটওয়ারী ওয়াক্ফ এস্টেট নামাজসহ প্রাসঙ্গিক এবাদতের জন্য ২৪ ঘন্টা মসজিদ খোলা রাখার পাশাপাশি। নি¤œ বর্ণিত সেবা দিয়ে যাচ্ছি-
১. বছরে লক্ষ-লক্ষ মানুষের নামাজের জন্য সেবা প্রদান, ২. ওয়াজ মাহফিলসহ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা প্রদান,৩. পবিত্র রমজান মাসে সম্মানীত রোজাদারগণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম, ৪. রোজাদার, সম্মানীত মুসল্লীগণসহ এতেকাফ কারীগণের জন্য সাধ্যমত সুবিধা প্রদান, ৫. সর্ব সাধারণের ব্যবহারের জন্য বাজারের দোকানে পানি নেওয়ার ক্ষেত্রে আর্সেনিক মুক্ত বিশুদ্ধ খাবার পানি সর্বরাহের ব্যবস্থা, ৬. পয়:নিষ্কাশনসহ চব্বিশ ঘন্টা টয়লেট ব্যবস্থাপনা, ৭. বড় মসজিদ কমপ্লেক্সের বিশাল অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, ৮. এস্টেটের সম্পদ সম্পত্তি হেফাজত, সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, ৯. এস্টেটের স্থায়ী আয়ের উৎসের লক্ষ্যে বহুতল ভবনসমূহ নির্মাণ।১০. সম্মানীত ভাড়াটিয়াদের সেবার মানের ব্যবস্থানা নিশ্চিতকরণ, ১১. মাদ্রাসা সমূহের সংস্কার, উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় সাধ্যমত সহযোগীতা প্রদান। ১২. নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাপনা। ১৩. বাজারে ক্রেতা হিসেবে কিংবা অন্য কোন প্রয়োজনে আগত মা-বোনদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটানোর সুযোগ এর ব্যবস্থা,১৪. বাজারে অগ্নি নির্বাপনে তাৎক্ষণিক পানি সরবরাহের উন্মুক্ত ব্যবস্থা, ১৫. দুঃস্থ,অসহায় ব্যক্তিদের সাধ্যমত দান-অনুদান প্রদান, ১৬. যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্থানীয় পর্যায়ে সহযোগীতা এবং সামাজিক কার্যক্রমে সাধ্যমত আর্থিক সহযোগীতা প্রদান ১৭. ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় দিবস সমূহ উদযাপনে সহযোগিতা প্রদান, ১৮. মসজিদ ছাড়াও মার্কেট সমূহের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রহরী, সিসি ক্যামরা ব্যবস্থাপনা,ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা। ১৯. সাধ্যমত ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান,ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দান অনুদান, ২০. বে-ওয়ারিশ লাশ দাফন ছাড়াও মৃত্যুর পর মসজিদের পাশে যারা শায়িত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন, যারা ওছিয়ত করেন, কিংবা মৃত্যুর পর যাদের আত্মীয় পরিজন মসজিদের পাশে মাটি বা কবর দেওয়ার জন্য প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। দাফনের জন্য কোন ধরণের বিনিময় বা টাকা-পয়সা নেয়া হয় না। এমনকি দাফন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে, কেউ আর্থিক ভাবে দান সহযোগিতা করতে চাইলে, কোন ভাবেই দাফন উপলক্ষ মনে হলে, তা গ্রহণ করা হয় না। ফি সাবিলিল্লাহ হিসেবে দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। এ সকল কার্যক্রম চালু থাকায় হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লের প্রতি মানুষের আকর্ষণ রয়েছে। তাই প্রতি বছর জুমাতুল বিদায় হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের আশে-পাশে পুরো এলাকা মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বিশাল জামাতে পরিণত হয়। জুমাতুল বিদায় মুসল্লীদের শিোন্ত নামাজ আদায়ের এ বারও আমরা আহমাদিয়া আলীয়া মাদ্রাসা,আহমাদিয়া কাওমী মাদ্রাসা, রজনী গন্ধা মার্কেট, হাজীগঞ্জ টাওয়ার মার্কেট,হাজীগঞ্জ প্লাজা মার্কেট সহ সব ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী ভাইদের সহযোগিতায় পূর্ববাজার পুরোটাই নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ইনশাআল্লাহ, অগামী (৭ মে ২০২১) সকল সে¦চ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতা নিয়ে আমাদের সবার প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে শান্তি পূর্ণ পরিবেশে জুমাতুল বিদা নামাজ আদায় করতে মহান আল্লাহ সহায় হবেন।( এ ছাড়া আসছে ঈদুল-ফিতরের নামাজের ৩টি জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে।

১ম জামাত ৬.৩০, ২য় জামাত ৮.০০ এরং ৩য় জামাত ১০ টায় অনুষ্ঠিত হবে)।

Loading

শেয়ার করুন: