অন্ধ ভিক্ষুক সুমনের কষ্টের জীবনে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর যেন স্বপ্নের ঠিকানা

মোঃ আকতার হোসেন:

অন্ধ ভিক্ষুক সুমন মৃধা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের স্বপ্নের ঘর পেয়ে আনন্দে দিশেহারা। স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে যেন স্বপ্নের ঠিকানায় উঠেছেন। তার ৩২ বছর জীবনে কত মানুষের ঘরে ঠাঁই হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নিজের ঘর পেয়ে আবেগাপ্লুত। বারবারই সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দোয়া ও কৃতজ্ঞতার (শোকরিয়া) কথা ফুটে উঠে তার মুখে।

মতলব দক্ষিণ উপজেলায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় নির্মিত সেমিপাকা ঘর পেয়ে খুশি ভূমি ও গৃহহীন উপাদী উত্তর ইউনিয়নের বহরী গ্রামের অন্ধ ভিক্ষুক সুমন মৃধা।

আজ ২৮ জুলাই মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সে অন্ধ ভিক্ষুক সুমনকে দেখতে যান। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেন এবং বিভিন্ন খোজ খবর নেন। সাথে করে নেওয়া বিভিন্ন ফলজ বৃক্ষ নিজ হাতে বাড়ীর চারপাশে রোপন করেন। এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেটু কুমার বড়–য়া, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম, নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন মৃধা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চাঁন মিয়া তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা যায়, উপাদী উত্তর ইউনিয়নের বহরী গ্রামের অন্ধ ভিক্ষুক সুমন মৃধা ২০২০সাল থেকে ২/৩বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে দেখা করেছিলেন খাসজমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য। কিন্তু উপাদী উত্তর ইউনিয়নে বন্দোবস্তযোগ্য কোন খাস জমি ছিল না। তারপর মুজিববর্ষে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মান প্রকল্পে পাশের নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়নের খিদিরপুর মৌজায় ঘরের ছবি দেখালে ভিক্ষুক সুমন সেখানে যেতে রাজী হয়। উপজেলার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের নির্মিত ২৫টি ঘরের মধ্যে ২৩টি ঘর নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়নের মাসুন্ডা ও ২টি ঘর নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ খিদিরপুর মৌজায়।

অন্ধ ভিক্ষুক সুমন বলেন, আমাদের জমি জমা ঘর নেই বলে বাবা নুরুল ইসলাম (৭০) মা নুরজাহান বেগকে নিয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার পাইকগাছায় আমার নানার বাড়ীতে থাকেন। ছোট ভাই সুজন ফার্নিচারের কাজ করে ঢাকায় সেখানেই থাকেন। আমি ৪/৫ বছর ধরে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। বিভিন্ন সময় আত্মীয় স্বজন ছাড়াও অন্যের বাড়ীতে থেকেছি। এই জীবনে নিজের একটা ঘর হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি।

সুমন আরে জানায়, ২০১০সালে আমি বিয়ে করেছি। আমার ৭ বছর বয়সের একটি ছেলে সন্তান আছে। সে মাদ্রাসায় সবার সহযোগিতায় পড়াশুনা করছে। আমাদের কিছু জায়গা ও ঘর ছিল। আমার চিকিৎসা ও অভাবের সংসারের চাহিদায় বাবা আমার জেঠার একে একে সব বিক্রি করে দেয়। পরে ভিটিহীন হয়ে ভিক্ষা করে একেকদিন একেক বাড়ীতে থাকতাম।

অন্ধ হওয়ার বিষয়ে সুমন জানায়, আমি কোন জন্মান্ধ ছিলাম না। বাড়ীর কাছে মোড়ে আমাদের একটি দোকান ছিল সেখানে আমি ব্যবসা করতাম। আমার যখন ১৫/১৬ বছর বয়স (২০০৩সাল) তখন আমার রাতকানা রোগ হয়। বাবায চিকিৎসা করালেও টাকার অভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে আমার চোখের আলো কমতে থাকে। এক সময় আমি আর কিছুই দেখতে পাই না।

স্ত্রী শেফালী আক্তার বলেন, আমার বাবার বাড়ী চাঁদপুর সদর উপজেলার খেরুদিয়া গ্রামে। আগে থাকার কোন জায়গা ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আমরা একটা স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছি। আর ইউএনও স্যার এ ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়ে আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন মৃধা বলেন, আমার ইউনিয়নে দক্ষিণ খিদিরপুর এলাকায় ২শতক জায়গার উপর প্রধানমন্ত্রীর উপহার দুই কক্ষ বিশিষ্ট দুইটি ঘরের একটি অন্ধ ভিক্ষুক সুমন ও অপরটি নওমুসলিম আব্দুল্লাহকে দেওয়া হয়েছে। তিনি পরিষদ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

ইউএনও ফাহমিদা হক জানান,অন্ধ ভিক্ষুক সুমন মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর পেয়েছে।ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে পরিবারকে স্বাভলম্বি করার জন্য হাস মুরগী ও গবাদি পশু পালন করছে। বাড়ীর পেছনে রোপন করেছে নানা রকম সব্জি। বৈদ্যুতিক সংযোগ ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্ধ ভিক্ষুক সুমনসহ উপজেলায় আরো ২৪টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে পুনবার্ষিত হয়ে আজ অনেক খুশি। এছাড়াও ঘরগুলো অত্যন্ত টেকসই ও গুনগত মান বজায় রেখে করা হয়েছে।

Loading

শেয়ার করুন: