অবহেলিত এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজ

হাজীগঞ্জ প্রতিবেদক॥

অবহেলিত এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজ। চাঁদপুর কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন বলাখাল বাজারে কলেজটির অবস্থান হলেও এর পড়ালেখার মান উন্নয়নে, অবকাঠামো উন্নয়ন যেন থমকে আছে। তবে সম্প্রতি সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপির সহায়তায় একটি একাডেমিক ভবন হয়েছে আর আসছে শিক্ষাবর্ষে আসন সংখ্যা বাড়ানোর ডিউ দেয়া হয়েছে। কলেজটির সকল সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসলে কলেজটি হাজীগঞ্জ তথা চাঁদপুরের মধ্যে একটি ব্যতিক্রম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবিভূত হতে বেশি দিন সময় লাগবে না।

সরজমিনে কলেজটি ঘুরে দেখা যায়, কলেজ ঢুকতেই প্রধান গেটের বাইরের সড়কের দুই পাশে ময়লা আবর্জনার স্তুপসহ আমজনতার প্রশ্রাবের উন্মুক্ত স্থান। কলেজ গেটটি সৌন্দর্যহীন অবস্থায় রয়েছে। ক্যাম্পাস মাঠের দক্ষিণ পাশে লম্বা-লম্বিভাবে চো-চালা টিনের ঘর। যা প্রতিষ্ঠাকালীন সময় করা হয়েছে। মাঠের পূর্ব পাশে বড় একটি শহীদ মিনার নির্মান করা হলেও এর কাজ সমাপ্ত করা হয়নি। যা দেখতে একেবারে দৃষ্টকটু মনে হচ্ছে। উত্তর পূর্ব পাশে দোতলা ভবনের নিচ তলায় ছাত্রীদের কমনরুম,টয়লেট আর বিজ্ঞানাগার রয়েছে। তো-তলা পুরাটাই ব্যবহার হচ্ছে অধ্যক্ষ রুম, শিক্ষকদের রুম, অফিস কক্ষ আর টয়লেট হিসেবে। উপজেলার ৮টি কলেজের মধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়নে এই কলেজটি এখনো অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও ১৯৯৬ইং সালের পর এই প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি কলেজটিতে। অথচ সম্প্রতি সময় সন্তোষজনক ফলাফল অর্জনসহ শিক্ষার আলো ছড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষাক্ষেত্রে উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, স্থানীয়দের প্রয়োজনের তাগিদে ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার প্রসারে ১৯৮৫ইং সালে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন বলাখাল বাজারে মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ফলাফলে নিয়মিত সন্তোষজনক অবস্থান থাকলেও বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কলেজটির আরো অগ্রগতি হয়। কিন্তু সরকারিভাবে অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন নেই।
১৯৯৬ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরান্তি) নির্বাচনী এলাকার সাংসদ মেজর অবঃ রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের হাত ধরে চারতলা ভীত বিশিষ্ট দুইতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে সরকারিভাবে আর কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় অবহেলায় রয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম।

কলেজ অফিস সূত্রে জানা যায়, কলেজটিতে বর্তমানে ৪০ জন শিক্ষক ও কর্মচারী এবং ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তার পাশাপাশি বর্তমান শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৩শ’ শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়াধীন। রয়েছে জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি ও ডিগ্রি পরীক্ষা কেন্দ্র। এছাড়াও এখানে সরকারিভাবে নিয়োগ পরিক্ষাও হয়ে থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় শ্রেণিকক্ষের সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রেণি সংকটের পাশাপাশি কলেজটিতে নেই বিজ্ঞান ভবন, আইসিটি ভবন, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব।

কলেজে একাডেমিক ভবন ও বিজ্ঞান ভবন নির্মাণ ও আইসিটি ল্যাব স্থাপন এর জন্য স্থানীয় ও এলাকাবাসী সাংসদের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন। তা না হলেও শ্রেণি সংকটের অভাবে পাঠদান ব্যহত এবং যথাযথ শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হবে শিক্ষার্থীরা।

কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী তসলিম আলম শিশির মজুমদার জানান, হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো বলাখালের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়নে সাংসদ মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম স্যারের সু-দৃষ্টি রয়েছে। উনার প্রচেষ্টায় বলাখাল চন্দ্রবাণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বলাখাল জে.এন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজ, বলাখাল নূরে মদিনা আলিম মাদরাসা,বলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মনোরম ও দৃষ্টিনন্দিত একাডেমিক ভবন করা হয়েছে যার সবগুলো ইতিমধ্যে ক্লাশ করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে এমপি স্যার কলেজের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে দিয়েছেন এবং নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের কথা বলেছেন। আশা করি খুব দ্রুততার সাথে তা হবে। কলেজ পরিচালনা পর্ষদের বিদ্যোৎসাহী সদস্য পারভেজ মজুমদার নিশাত জানান, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মাননীয় জেলা প্রশাসক জনাব অঞ্জনা খাঁন মজলিস স্যারের সুযোগ্য নেতৃত্বের কারনে বর্তমান পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করে কলেজটি সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালের পর এ প্রতিষ্ঠানে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তবে আমরা আমাদের সাংসদ মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের সাথে যোগাযোগ করছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বর্তমান সরকারের আমলে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তবে ১৯৯৬ সালের পর এই প্রতিষ্ঠানে নতুন করে একাডেমিক ভবন নির্মিত না হওয়ায় তিনি সংশ্লিষ্টদের যোগাযোগ ব্যর্থতাকে দ্বায়ী করেছেন।

Loading

শেয়ার করুন: