ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর তাই বাড়ির সম্পদ রক্ষা করুন :নৌ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি

আনোয়ারুল হক ॥

বাংলাদেশ নৌ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ শফিকুল ইসলাম সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধকালীন সময়ে জাটকা, মা ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ না ধরার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন বলেছেন দেশ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ হলে দেশের মানুষও তার সুফল পাবে। জাটকা মাছ না ধরার কারনে এখন দেশে ইলিশ সহজলভ্য হয়েছে। জনগণ সচেতন হলে জাটকা, মা ইলিশসহ সকল মাছই সহজলভ্য হবে এবং দেশীয় আমিষের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানীর করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। বুধবার ৯ মার্চ সকাল ১০টায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল পযটন কেন্দ্র মাঠে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান-২০২২ উপলক্ষে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর তাই বাড়ির সম্পদ রক্ষা করুন । আমরা কোনও জেলেদের গ্রেফতার বা তাদের জাল-নৌকা জব্দ করতে চাই না। আমরা দেশের স্বার্থে, জেলেদের স্বার্থে নদীর সম্পদ বৃদ্ধি করতে সরকারি বিধিনিষেধ কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছি।’ জাটকা ইলিশ না ধরলে এসব ইলিশ বড় হয়ে ডিম পাড়বে এবং বেশি ওজনের ইলিশ‘দেশ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ হলে দেশের মানুষও এর সুফল পাবে। জাটকা মাছ না ধরার ফলে এখন দেশে ইলিশ সহজলভ্য হয়েছে। জনগণ সচেতন হলে জাটকা, মা ইলিশসহ সব মাছই সহজলভ্য হবে এবং দেশীয় আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে।’

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর জাটকা সংরক্ষণ করায় ইলিশের উৎপাদন আগের তুলনায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু অনেকেই জাটকা সংরক্ষণের এই বিধিনিষেধ মানতে চায় না। গোপনে গোপনে তারা নদীতে জাটকা ইলিশ ধরছে। নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করছে। আমরা এসবের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করেছি। কিন্তু আমরা কোনও জেলেকে ধরতে চাই না। এজন্য জেলেদের সচেতন হতে হবে। কারণ নদীতে ইলিশ বড় হলে বা বৃদ্ধি পেলে অন্য কেউ ধরতে আসবে না, জেলেরাই ধরবে। এতে জেলেরাই আর্থিকভাবে লাভবান হবে।’ গত দুই মাসে ৮৬ দশমিক ৩ কোটি মিটার জাল জব্দ করার তথ্য জানিয়ে প্রধান অতিরিক্ত আইজিপির দাবি, ‘অবৈধ জাল উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে নদীতে চলাচলকারী অবৈধ নৌ-যান, বাল্কহেড যেন চলতে না পারে সেজন্যও অভিযান চালাবো আমরা।’ কোনোভাবেই জাটকা মৌসুমে বালু উত্তোলন করা যাবে না। অবৈধ বাল্কহেড পেলে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। আইন না মানলে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীকেও গ্রেফতার করা হবে। আইনসঙ্গতভাবে যেটুকু বলা হয়েছে সেটুকু জায়গায় বালু উত্তোলন করবেন। অন্যত্র নয়। নদীর সম্পদ বৃদ্ধির জন্য নদীকে প্রবাহমান রাখতে হবে, নদীকে বাঁচাতে হবে। অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করে নদী ধ্বংস করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে।’দেশের নদ-নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী বালুখেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাবে নৌ-পুলিশ।

তিনি বলেন, ‘নদী ও নদীর সম্পদ রক্ষায় নৌ-পুলিশ ব্যাপক কার্যক্রম নিয়ে মাঠে নামছে। নিয়মিত কারেন্ট জালসহ বেহুন্দি জাল, চরখেশা জাল, চায়না জাল, সিনথেটিক জাল, ফাঁস জাল, মশালী জাল, গোল জাল, পাই জাল, কোনা জাল, ছান্দি জালসহ সব ধরনের অবৈধ জাল জব্দের অভিযান চলছে।

তিনি উপস্থিত সকলকে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধকালীন সময়ে মাছ না ধরার জন্য এবং জাটকা সংরক্ষন অভিযান-২০২২ সফল করার জন্য সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।

চাঁদপুরের নৌ পুলিশ সুপার কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিবলী কায়সারের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন,জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়,জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান,ষাটনল ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম সরকার,জাহাজ ফেডারেশনের সভাপতি সবুজ সিকদার,দৈনিক ইত্তেফাক মতলব প্রতিনিধি সাংবাদিক শামসুজ্জামান ডলার,জেলা নৌযান ফেডারেশন সভাপতি জাহাঙ্গীর সরদার, জেলা মৎসজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক দেওয়ান,উপজেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ওমর আলী প্রধান।

পরবর্তীতে তিনি স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও জেলে সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে নৌ র‌্যালিতে অংশগ্রহন করেন এবং জনগনের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেন।

নদীতে অতিরিক্ত আইজিপির উপস্থিতিতে বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডে অভিযান চালায় নৌ-পুলিশ। নৌ-যানটির কোনও বৈধ কাগজপত্র না থাকায় সেটি জব্দ ও মামলা করার নির্দেশনা দেন তিনি।

Loading

শেয়ার করুন: