চাঁদপুরে ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চাঁদপুর জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সভাপতি ও ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. একেএম মাহবুবুর রহমান বলেছেন, ঈদে মিলাদুন্নবী হচ্ছে ঈমানের ঈদ। আর ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা হচ্ছে ইবাদতের ঈদ। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ঈদে মিলাদুন্নবীর সাথে সম্পর্ক হচ্ছে ঈমানের সম্পর্ক। আর ঈমান হচ্ছে দয়াল নবীজির প্রতি ভালোবাসা। ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে দয়াল নবীর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে, ভালোবাসা অর্জন হয়। যেই ভালোবাসার সাথে ঈমানের সম্পর্ক। নবীজির প্রতি ভালোবাসা যার যতোটুকু, তার ঈমানের পরিধিও ততোটুকু। আর দয়াল নবীজির শুভাগমন দিবস হচ্ছে সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ ঈদ।

তিনি দেশবাসীকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দয়াল নবীর এই পৃথিবীতে আগমন দিবসটি শুধু মুসলমানদের জন্যে ঈদের দিন নয়। এই ঈদ কুলকায়েনাতের জন্যে তথা সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্যে ঈদ। কারণ, নবীকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তাই তিনি শুধু মানুষের জন্যে রহমত নন, সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্যে রহমত। সে জন্যেই ১২ রবিউল আউয়াল সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্যে ঈদের দিন। যা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিসেবে স্বীকৃত। প্রতি বছর আমরা ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের মধ্য দিয়ে নিজেদের ঈমানকে তাজা করি, ঈমানকে মজবুত করি। তিনি ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে উদ্যাপনে সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, যে বা যারা এসব করছে, তারা কোনোভাবেই কোনো ধর্মের অনুসারী হতে পারে না। তাদের পরিচয়, তারা দুর্বৃত্ত, তারা দুষ্কৃতকারী। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষে মানুষে হানাহানী সৃষ্টি করে দেশটাকে একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করা। তাই তাদের অপতৎপরতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। আমরা কোনোভাবেই তা হতে দেবো না। যে কোনো মূল্যে আমরা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধরে রাখবো। একে বিনষ্ট করার কোনো অপতৎপরতাকে আমরা সফল হতে দেবো না।

২০ অক্টোবর বুধবার চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর অনুষ্ঠানে ড. মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আলোচনা করেন। ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন পরিষদ চাঁদপুর-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত আলোচনা ও মিলাদ মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক এএইচএম আহসান উল্লাহ।

বক্তব্য রাখেন সাদ্রা দরবার শরীফের পীর সাহেব আল্লামা জাকারিয়া চৌধুরী আল-মাদানী, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের জেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু জাফর মোঃ মাঈনুদ্দিন, সহ-সভাপতি ও চান্দ্রা ছামাদিয়া ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনম মুহিবুল্লাহ, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. সাইফুল ইসলাম আজহারী, আলীগঞ্জ মাদ্দাহ খাঁ (রঃ) জামে মসজিদের খতিব মুফতি ফজলুল কাদের বাগদাদী, ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওঃ মোঃ শহীদুল্লাহ্, বাগাদী দরবার শরীফের পীরজাদা মাওঃ মাহফুজ উল্লাহ খান, দেবপুর দরবার শরীফের পীরজাদা মাওঃ আরেফিন, আহলে সুন্নাত যুব পরিষদের জেলা আহ্বায়ক মাওঃ আব্দুর রউফ খান, বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা চাঁদপুর জেলার আহ্বায়ক মোঃ বিল্লাল হোসেন তালুকদার, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা চাঁদপুর জেলা সভাপতি রিয়াজুল করিম বাছিম প্রমুখ। উপস্থাপনায় ছিলেন মাওঃ গাজী মোঃ আঃ রহিম ও মাওঃ হাছানুজ্জামান।

এছাড়া উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা গাউছিয়া কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহজামাল তালুকদার, বিষ্ণুদী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওঃ জসিম উদ্দিন, চান্দ্রা ইমাম আলী কলেজের অধ্যক্ষ মকবুল আহমেদ, ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন পরিষদের সদস্য সচিব মোঃ হুমায়ুন কবির প্রমুখ। অনুষ্ঠানে চাঁদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে মাদ্রাসা, মসজিদের ইমাম এবং পীর সাহেবদের দরবার থেকে অসংখ্য নবীপ্রেমিক সুন্নী মুসলমান অংশ নেন। আলোচনা শেষে মিলাদ কিয়াম, মুনাজাত ও তবররুক বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

Loading

শেয়ার করুন: