চাঁদপুরে তিন দিন পালিত হলো ঈদুল ফিতর

সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে ও সারা দেশের কোটি কোটি মানুষের সাথে দ্বিমত সৃস্টি করে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশ গুলোর সাথে মিল রেখে চাঁদপুরে প্রতিবছর আগাম ঈদ পালন হয়ে আসছিল, বিগত ১৯২৮ সাল থেকে সাদ্রা দরবার শরীফের প্রয়াত পীর হযরত মাও: ইসহাকের অনুসারীরা।

তবে এ বছর একেবারে ভিন্নভাবে আগাম ঈদ পালনকারী মাওনালা ইসহাকের অনুসারীদের নিজেদের মধ্যে দ্বিধাদন্ধের কারনে পৃথক পৃথক ভাবে চাঁদপুরে তিন দিন যাবত পালিত হলো ২০২১ সালে করোনার মধ্যদিয়েও পবিত্র ঈদুল ফিতর। যার কারনে এ সব অনুসারীদের ভিন্নমতের কারনে সাধারন মানুষ তথা সহজসরল ধর্মপ্রান মুসলমানদের পড়তে হয়েছে মারাত্বক বিপাকে।

তারা এ সব দ্বিধাদন্ধ পরিহার করে একদিন দেশের সকল মানুষ আলাহ্ পাকের দিদার লাভ করার জন্য ও শান্তিমত পৃথিবীতে বসবাসের মধ্যদিয়ে পবিত্র ঈদ পালন করতে চায়। এ ব্যাপারে দেশের ইসলামি চিন্তাবিদরা এক টেবিলে বসে সরকারি রীতিনীতি অনুযায়ী একটি সঠিক লক্ষ্যে পৌছে সিদ্বান্ত দেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে,বর্তমান এ পরিস্থিতে। এর সঠিক সমাধান না’হলে যেকোন সময় সরকারে সিদ্বান্তকে উপেক্ষা করে বড় ধরনে সংঘর্ষ ঘটে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃস্টি হয়ে এটি অন্যদিকে মোড়নিতে যাচ্ছে বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

১৯২৮ সালে চাঁদপুরের সাদ্রাদরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদসহ ধর্মীয় উৎসব গুলো পালনের রেওয়াজ চালু করেন। তবে এ বছর তার অনুসারীদের মধ্যে মতের অমিল দেখা দেয়ায় দুই পক্ষ দুই দিন ঈদ পালন করেছেন। আর রাষ্ট্রীয়ভাবে ঈদ পালন করা হবে শুক্রবার। অপরদিকে সাদ্রাদরবার শরীফ এলাকার অনেকে রাষ্ট্রীয় নিয়মে ঈদ পালন করেন শুক্রবার।

মুসলমান সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনার পর এক দিন ঈদ উদযাপনে মেতে উঠেন এ ধর্মের মানুষেরা। তবে এ বছর চাঁদপুরে ঘটেছে ব্যতিক্রমী ঘটনা। এক দিনের ঈদ এ জেলায় এবার পালন হচ্ছে আলাদা আলাদা তিন দিনে।

শুক্রবার রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশে ঈদ উদযাপন করা হলেও বৃহস্পতিবার ও গত বুধবার জেলার বেশ কিছু গ্রামের মানুষ ঈদ উদযাপন করেছেন।

এভাবে ঈদ পালনের কারণ চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের সে সময় থেকে রেওয়াজ হয়ে আসছে। ১৯২৮ সাল থেকে চালু করা ওই রেওয়াজ অনুযায়ী, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তেক চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদসহ ধর্মীয় উৎসব গুরো পালন করা হয়।

মাওলানা ইসহাক সাহেবের সময় থেকে ১৯২৮ সাল থেকে তার অনুসারীরা রোজা, ঈদসহ ধর্মীয় উৎসবগুলো এভাবেই পালন করে আসছেন। তবে এই বছর তার অনুসারীদের মধ্যে মতের অমিল দেখা দেয়ায় দুই পক্ষ দুই দিন ঈদ পালন করেন।

সোমালিয়া, নাইজার ও পাকিস্তানে মঙ্গলবার ঈদের চাঁদ দেখা গেছে জানিয়ে বুধবার ঈদ পালন করেন সাদ্রা দরবার শরীফের পীর মুফতি আল্লমা যাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী ও তার অনুসারীরা।

সকাল ১০টায় সাদ্রা দরবার শরীফ জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন দরবার শরীফের পীর মুফতি আল্লামা যাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের হানাফি মাজহাবের আকিদা অনুযায়ী, বিশ্বের যেকোনো স্থানে প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ঈদ উদযাপন করা হয়। গত মঙ্গলবার রাতে সেহরি খেতে উঠে শুনি সোমালিয়া, নাইজার ও পাকিস্তানে চাঁদ দেখা গেছে।

এর সব নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে আমরা পরদিন রোজা না রেখে ঈদ পালন করি। সাধারণ মানুষকে ঈদের খবর দেয়ার জন্য মসজিদ থেকে মাইকিংও করা হয় থাকে।

পীর মুফতি আল্লামা যাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানীর ছেলে বাকি বিল্লাহ বলেন, দুই দিন ঈদ পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা হলেন আমার দাদার খেলাফতপ্রাপ্ত পীর। আমার ছয় বাপ চাচার মধ্যে চারজনই আমাদের সাথে নামাজ পড়েছে। আমরা সঠিক দিনেই ঈদ পালন করেছি।

এদিকে বৃহস্পতিবারও ঈদুল ফিতর পালন করা হয় সাদ্রা এলাকায়। সকাল সাড়ে ৯টায় সাদ্রা আহমদিয়া হামিদিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ঈদের প্রধান জামাত হয়। এতে ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরীফের আরেক পীর মাওলানা আরিফ চৌধুরী।

ঈদ পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম চাঁদ দেখা ও মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সমন্বয় করে ঈদসহ ধর্মীয় উৎসবগুলো পালন করে থাকি। গত মঙ্গলবার পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখার সঠিক খবর না পাওয়ায় আমাদের রোজা ৩০টা পূর্ণ হওয়ায় সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে বৃহস্পতিবার ঈদ উদযাপন করছি।’

জেলার হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, মতলব, কচুয়া ও শাহরাস্তি উপজেলার অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি গ্রামের মানুষও তাদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছেন বলে জানান তিনি।

একই এলাকায় পরপর দুই দিনে দুই বার ঈদের নামাজ পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল যারা ঈদের নামাজ পড়েছেন, তারা আজকে পড়েননি। আর তারা যেই তথ্যের ভিত্তিতে ঈদ উদযাপন করেছেন আমাদের কাছে তা নির্ভরযোগ্য মনে না হওয়ায় আমরা বৃহস্পতিবার ঈদ পালন করেছি।’

তবে এভাবে ঈদ উদযাপন করা কাম্য নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামীতে আমরা মুরুব্বিরা বসে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সকলে মিলে ঈদ উদযাপন করতে চাই।’

গত বুধ ও আজ বৃহস্পতিবার জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে বিচ্ছিন্নভাবে ঈদ উদযাপন করা হলেও শুক্রবার রাষ্ট্রীয়ভাবে ঈদ উদযাপন করেন সাদ্রা দরবার শরীফ এলাকা শতশত মানূষ ও চাঁদপুরের ধর্মপ্রান মুসলমানরা।

শহরের পালপাড়া বাইতুস সালাম জামে মসজিদের খতিব মুফতি বিএম মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করি শুক্রবার। পৃথিবীর যেই প্রান্তেই চাঁদ উঠে তা দেখে যারা ঈদ বা রোজা রাখেন তারা মূলত মহানবী (সা.) এর একটি হাদিস ব্যাখ্যা করেন এক রকম, আমরা করি আরেক রকম। যার কারণে এই পার্থক্য হয়েছে।’

‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখ, চাঁদ দেখে ঈদ কর।’ হাদিসের ব্যাখার বিষয়ে তিনি বলেন, তারা মনে করেন পৃথিবী যেহেতু একটা। চাঁদও একটা। তাই যেকোনো জায়গায় চাঁদ দেখা গেলেই তারা ঈদ পালন করেন।

আমরা এখানে ব্যাখ্যা করি, সারা পৃথিবীতে এক সঙ্গে চাঁদ দেখা সম্ভব নয়। তারা এই ভৌগলিক পার্থক্যটা মানে না। এটাকে সরাসরি বেদাত বলা যাবে না। তবে তাদেরকে আরেকটু চিন্তা করা উচিত। কারণ পৃথিবীর কোথাও রাত, কোথাও দিন। তাই সব জায়গায় এক সঙ্গে চাঁদ দেখা যাবে না।

প্রথম দিকে এটা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে জানিয়ে মুফতি কামাল বলেন, অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত হলো, ভৌগলিক এলাকা অনুযায়ী যেখানে চাঁদ দেখা যাবে, ওই ভূখন্ডের জন্য সেখানে ওই চাঁদের হুকুম হবে।

এ বিসয়ে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাঁদপুর জেলা শাখার উপপরিচালক ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘এভাবে অন্য দেশের সাথে মিল রেখে বা অন্য দেশে চাঁদ দেখার খবরে রোজা রাখা বা ঈদ পালন করা কোনোভাবেই ঠিক নয়। আমরা ওই অঞ্চলের মসজিদের ইমামদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করে আসছি। মানা না মানা তাদের বিষয়।’

তিনি আরও বলেন, এইভাবে রোজা রাখা বা ঈদ পালন করা জায়েজ আছে কি না তা আমরা ফতোয়া দিতে পারি না। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এমন কোনো নির্দেশ আমাদের কাছে আসেনি।’ তবে দেশের রাষ্টীয় নিয়ম অনুযায়ী আমাদেরকে চলতে হবে। দেশের মানুষের ভালমন্ধ সব দেখার দায়িত্ব সরকারের। সেহেতু সরকার যে নির্দেশনা দিবে তা’ই আমাদেরকে পালন বাঞ্চনীয় বলে মনে করি।

Loading

শেয়ার করুন: