চাঁদপুুর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভা

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেছেন, করোনায় মৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় নামাতে হবে। সেজন্য চেষ্টা করতে হবে। বড় ধরণের কোন সমাবেশ করা যাবেনা। বেশিরভাগ অনুষ্ঠানাদি ভার্চুয়ালি করতে হবে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজসহ বেশিরভাগ কাজই ভার্চুয়ালি হয়। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশ্যে

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিধি কেউ যদি মানতে না চান, সেক্ষেত্রে আরেকটু কঠোর হয়ে যান। আমরা এখন যে অবস্থায় আছি, তা জাতীয় পর্যায়ের করোনায় আক্রান্তের হারের কাছাকাছি। কিন্তু অন্যান্য সীমান্তবর্তী কিছু জেলাতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলেও, এখনও অনেক জেলা খুব ভালো অবস্থানে আছে। আমাদের এই চাঁদপুর জেলাকেও আমরা ভালো অবস্থানে দেখতে চাই।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন কোন মার্কেট, শপিংমল এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে, সেক্ষেত্রে ওই সকল প্রতিষ্ঠান জরিমানাসহ এমনকি প্রয়োজনে সীলগালা করে দিন। দেখবেন এই খবরদারি থাকলে অন্যরাও ঠিক হয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা করোনা বিষয়ক জেলা কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি একথাগুলো বলেন।
এই কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে শিক্ষামন্ত্রী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সিভিল সার্জনের কাছে বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাইলে তারা মন্ত্রীকে সার্বিক পরিস্থিতি বর্ণনা করেন।

এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, এখন মানুষের মধ্যে মাস্ক বা স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের মধ্যে শৈথল্য চলে এসেছে। বিশেষ করে মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যারা আমাদেরকে কথা দিয়েছিল যে, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবে। কিন্তু তারা তাদের কথা উপেক্ষা করছে।
তিনি বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরা যদি একটু বেশি সক্রিয় হন, তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে। আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলো এজন্য কাজ করে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের প্রশাসনেরও অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে আমাদের মতলব দক্ষিণের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার শিশুকণ্যাসহ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, চাঁদপুুর এখন ইয়েলো জোনে আছি। শিক্ষামন্ত্রী একথা শুনে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাতে যা যা করণীয় সেটা করতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে আপনি একটি সভা আহ্বান করেন। তাতে আমিও থাকবো।

তিনি বলেন, এই অতিমারী থেকে পরিত্রান পেতে হলে, সকলের একত্রে কাজ করতে হবে। শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে মৃত্যুর হার। আক্রান্তের হারও আরো কমিয়ে আনতে হবে। যারা করোনার সম্মুখসারির যোদ্ধা, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদেরকে নিয়েও ভার্চুয়ালি হোক আর স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হোক সভা আহ্বান করে গণসচেতনতায় তাদেরকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, যারা কাজগুলো করবে, তারা যেন আক্রান্ত না হন সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তাছাড়া সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। ক্যাবল টিভি স্ক্রলে গণসচেতনতামূলক প্রচারনার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, আমি আবারও বলছি আমরা আরো ভালো অবস্থানে যেতে চাই। পৃথিবী করোনামুক্ত এটাই আমরা কামনা করছি।
পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, পুলিশ বাহিনী চাঁদপুরে যথাযথ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সদস্যদের মাঝেও কিছুটা আতঙ্ক কাজ করে। সকলে যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে জেলা করোনা মুক্ত বা করোনার প্রভাব কমাতে হিমশিম খেতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা জানি লকডাউন হলে মানুষের কষ্ট হয়, তা আমরা জানি। কিন্তু যেমনে মানুষ চলাফেরা করে বা করতে চায়, সেটা আসলেই ঠিক নয়। এ অবস্থায় রাজনৈতিক মহল, জনপ্রতিনিধির জনসচেতনায় সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।

সিভিল সার্জন ডাঃ সাখাওয়াত উল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের চাঁদপুরে করোনা সনাক্তের হার ছিল ১৪ ভাগ। জুনে এসে তা দাড়িয়েছে ১৬.৭৯ ভাগ। জাতীয় পর্যায়ে এটি ১৬.২৪ ভাগ। আক্রান্তের সংখ্যা এ মাসে একটু বেশি। তবে মৃত্যুর হার কম। এ পর্যন্ত গত ১৫ মাসে ৪৯৯০ জন আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্য হয়েছে ১২৩ জনের। ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ আরটি পিসিআর ল্যাবে এ পর্যন্ত ২৪ হাজার পরীক্ষা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সিনোভ্যাক্সের ৯ হাজার ছয়শ টিকা এসেছে। যা দিয়ে ৪ হাজার ৮শ জনকে দুইবারে টিকা দেয়া যাবে। আগামী শনিবার থেকে নতুন করে টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি আরো বলেন আগের ১৫ হাজারের মতো রেকিস্ট্রেশনকৃত ব্যক্তি টিকাই দেননি। তবে নতুন করে আসা সিনোভ্যাক্সের টিকা পাবেন ডাক্তার, নার্স ও নাসিং স্টুডেন্ট, চীনা নাগরিক এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা টিকা নেননি, তাদেরকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এছাড়া সিনিয়র সিটিজেন অর্থাৎ ষাটোর্ধ্বদের টিকা নেয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। মন্ত্রী তার দীর্ঘ বক্তব্যে ষ্পষ্টভাবে বলেন, আমাদের জেলাকে কিভাবে ভালো রাখা যায়, সে প্রচেষ্টা চালােেত হবে। সকলকে এজন্য সহযোগিতা করতে হবে।

সভায় বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, জেলা তথ্য অফিসার মোঃ মনির হোসেন। ভার্চুয়াল এসভায় উপস্থিত ছিলেন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, এনএসআইয়ের উপ-পরিচালক শেখ আরমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক খলিলুর রহমান, সমাজসেবার উপ-পরিচালক রজত শুভ্র সরকার, জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের কর্মকর্তাগণ।

Loading

শেয়ার করুন: