জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেছেন, দুর্গাপূঁজাতে কুমিল্লায় একটি অনাঙ্ক্ষিত ঘটনায় সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও এর প্রভাব পড়ে। কুমিল্লার এ ঘটনাটি কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এর মধ্যে একটি কুচক্রী মহল খুব সুচতুরভাবে কাজ করছে। যারা এদেশে শান্তি ও সম্প্রীতি চায় না। তাই আমাদের যার যার অবস্থান থেকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এদেশ শান্তি ও সম্প্রীতির দেশ। আমাদের এখানে হিন্দু-মুসলমান অন্যান্য সম্প্রদায় যারা আছেন সবাই এদেশেরই নাগরিক। সবারই সুন্দরভাবে বসবাসের অধিকার আছে। এদেশকে আফগানিস্তান বানানো যাবে না। এটি বাংলাদেশ। এর সবটা সীমানা জুড়ে সম্প্রীতির সুবাতাস বহুদিনের, বহুযুগের।

১৭ অক্টোবর রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, এই সভাটি আমাদের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারন এই সভার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করতে পারে। তাই এই সভাগুলোতে সকল সদস্যের উপস্থিতি শতভাগ কাম্য। অবৈধ সিএনজি ও অটোরিক্সা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবৈধ এসব যানবাহনের কারনে শহরে প্রতিদিন ভীড়ের সৃষ্টি হচ্ছে। এধরনের অবৈধ যানবাহন নিষ্ক্রিয় করতে হবে। সবাই সমন্বিতভাবে এ অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সদর উপজেলা ও পৌরসভায় এসব যানবাহনগুলো বেশি দেখা যায়। তাই আগে সদর ও পৌরসভা থেকে এ কাজ শুরু করতে হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে যে কাজগুলো হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের পাশে থেকে সাহায্য করতে হবে। বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। যদি কোন শিক্ষার্থী করোনা সংক্রমিত হলে তার চিকিৎসা শুধু নয়, সে কার কার সাথে মিশে ছিলো তাদেরকেও খুজে বের করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সবাইকে সচেতন হতে হবে। শেখ রাসেল দিবসে জেলা প্রশাসনসহ আমরা সবাই পালন করবো। করোনা সংক্রমণের কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সীমিত পরিসরে শেখ রাসেল দিবস পালন করার আহবান জানান জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শেখ রাসেলের জন্মদিনে যেসব কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে, সেসবে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী সবাইকে উপস্থিত থাকার আহবানও জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মা ইলিশ রক্ষা প্রসঙ্গে বলেন, নদীতে কম্বাইন্ড অপারেশন চালাতে হবে। কারন জেলেরা হিংস্রাত্মক আচরন করছে। আমাদের কেউ মার খেয়ে আসবে আমি তা চাইবো না, তবে জেলেদেরকে যে মারতে হবে তা নয়। তাদের আচরনকে প্রতিহত করে তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে আসতে হবে। আমরা জেলেদের উপর অন্যায়, অত্যাচার ও জেল-জুলুম দিতে চাই না। তবে তারা যদি সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মানে তখন তাদেরকে আটক করতে হবে। তিনি বলেন, আমি ম্যাজিস্ট্রেটদের বলে দিয়েছি, তাদের জেল দাও অপরাধ করলে। তবে তাদের দীর্ঘ সময়ে যেন জেলে না থাকতে হয়, এমনটা বিবেচনায় নিয়ে সাজা দেবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সমস্যা সৃষ্টি করছে গুজব। গুজব ছড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আমাদের সেইসব গুজব প্রতিহত করতে হবে এবং সচেতন থাকতে হব। আমাদের ধর্ম শান্তির ধর্ম। আমাদের ধর্মের শান্তির বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে। বিশেষকরে তরুন যুব সমাজকে এধরনের গুজব সম্পর্কে সচেতন থাকার জন্যে বলতে হবে। একটি মহল সম্প্রীতির বন্ধনকে নষ্ট করতে চাইছে। এইধরনের ঘটনা হঠাৎ করে হয় না। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিসি টিভি ফুটেজ দেখে বুঝতে পেরেছি কারা এধরনের কাজ করেছে। দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতেই এই অনাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে। সাধারণ মানুষকে এই দুষ্কৃতকারীদের সস্পর্কে সচেতন করাতে হবে। আমাদের নবীজি কখনো বিধর্মীতের আঘাত করেন নি। আমার তাঁরই অনুসুরন করে চলবো। নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা দিতে হবে যে আমরা যার উম্মত তাঁরই অনুসরন করবো৷ প্রশাসন জনগণের সেবার জন্যে সবসময়েই প্রস্তুত রয়েছে। আপনাদেরও প্রশাসনকে সহায়তা করতে হবে। চাঁদপুরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে প্রশাসন সবসময় তৎপর রয়েছে।

সভায় পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার) তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, সরকারের উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে যদি কোন সমস্যাবোধ মনে করলে আমাদের জানাবেন। আমরা অবশ্যই আপনাদের পাশে থাকবো।

তিনিবলেন, দেশের উন্নয়ন যারা চায় না, সেই কুচক্রী মহল একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে বাঁধা দিতেই কুমিল্লায় এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়। একটি মহল প্রচুর অর্থ মওদুদ দিচ্ছে। পুলিশ কখনো কাউকে গুলি মারতে চায় না। হাজীগঞ্জে সেদিন পুলিশের ভূমিকা সঠিক ছিলো বলেই এধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা দেশে আর ছড়াতে পারে নি।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের থেকে খারাপ এবং শক্তিশালী হচ্ছে গুজব রটনাকারী। প্রতিটি ওয়ার্ডে ওযার্ডে কমিটির সভা করতে হবে। উদার প্রকৃতির লোকদের বুঝানো সম্ভব কিন্তু গোঁড়ান প্রকৃতির লোকদের বুঝানো সম্ভব নয়। তাই আপনাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে যে যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। চাঁদপুরে সেদিনের ঘটনার পর থেকে অনলাইন প্লাটফর্ম ফেইসবুকে যারা গুজব ও উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়েছিলো তাদের লিস্ট তৈরী করা হয়েছে এবং তাদেরকে নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসময় পুলিশ সুপার এধরনের উস্কানিমূলক পোস্ট দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্যে আহবান জানান।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হোসেন এর সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুব আলম, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. গোলাম কাউসার, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল আলম লিপন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, কমিটির নব্য সদস্য শাহরাস্তির উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান, মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক একেএম দিদারুল আলমসহ আরো অনেকে।

Loading

শেয়ার করুন: