জেলা করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক॥

১ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৩ টায় চাঁদপুর জেলা করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।জেলা প্রশাসক চাঁদপুর অঞ্জনা খান মজলিশের সঞ্চালনায় জুম সভাটিতে সভাপতিত্ব করেন,দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোহসীন।

সভাপতির বক্তব্যে চাঁদপুর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব মোহসীন বলেন, চাঁদপুর এমন একটি জেলা, যার সাথে রাজধানী ঢাকাসহ অনেকগুলো জেলা সংযুক্ত এবং নানা বিষয়ে সহসা সম্পর্কিত। তিনি বলেন, এখানে তাই লোক চলাচলও বেশি। সচিব বলেন, এখানে বর্তমান সময়ে জেলা প্রশাসনের ত্রান বিতরণ কার্য প্রশংসিত। এখানে আপনারা রিক্সা আটকেছেন, আবার ঐ শ্রমিকদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার তুলে দিয়েছেন। এছাড়াও আরো ভালো কাজ করছেন। তিনি বলেন, জীবন ও জীবিকাকে সমন্বয় করে কাজ করা সহজ কাজ নয়।

সচিব বলেন,চাঁদপুরের সংক্রমণটা কমছে না। সংক্রমণ কমিয়ে আনতে হবে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে করোনা সংক্রমনের হার আপনারা কমিয়ে আনতে পারবেন বলে আমি আশাবাদী। আর এটি একটি কঠিন কাজ হবে না যদি আপনারা রাজনীতিক প্রশাসন সামাজিক সুশীল সমাজ সবাই সমন্বয় করে কাজ করেন। তিনি রাজনীতিক সরকার হিসাবে রাজনীতিক নেতা- কর্মিরা এ দুর্যোগে এগিয়ে আসবেন এবং তাদের আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন ।
উনাদের এগিয়ে আসতে হবে। করোনা প্রতিরোধ কমিটিগুলোতে দলের লোকদের আরো সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, কাজ করতে হবে! না হয় করোনা উত্তরনে বেগ পেতে হবে। তিনি বলেন, এখানে জেলা, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনা, বিজিবি সবাই কাজ করছেন, রাজনীতিকরা কাজ করছেন এবং আরো এগিয়ে আসবেন।

পরে তিনি করোনা সম্পর্কে বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাইলে, সিভিল সার্জন তাকে জানান, জুলাই মাসেই এখানে করোনা পজেটিভ নিয়ে ৪২ জন মারা গেছেন। এ মাসে ১০ হাজার ৪ শ। এরমধ্যে ৪ হাজার ৩ শ ৭১ জন করোনাক্রান্ত হন। গত শনিবারের হিসেব দিয়ে তিনি বলেন টেষ্টের বিপরীতে আক্রান্তের হার ৪৪। উপজেলায় বেড বাড়ানো হয়েছে। অক্সিজেন সংকটও কেটে যাবে বলে তিনি জানান। কারণ হাসপাতালের অক্সিজেন প্লান্টটি ২/১ দিনের মধ্যেই চালু হয়ে সেখান থেকে অক্সিজেন সাপ্লাই দিতে পারবে বলে কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছেন। সিভিল সার্জন বলেন, জেনারেল হাসপাতালে আমরা বেড বাড়িয়েছি। উপজেলায় ২০ টা করে বাড়ানো হয়েছে। রোগী বাড়তে থাকলে আমরা এখানের ৫০ টা সাধারণ রোগি বেড পাশে নার্সিং ইনস্টিটিউটে নেয়ার পরিকল্পনা আছে। পরে সচিব শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জ উপজেলার ইউএনওর মুখে সেখানের পরিস্থিতি জানতে চান। দু উপজেলাতেই সংক্রমণ সদরের পরেই।

পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, গতকাল পর্যন্ত জেলায় আমার ২৪৬ জন পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিদিনই হচ্ছে। ডিসি মহোদয়ের অফিসাররা আক্রান্ত হচ্ছেন। মানুষকে সচেতন করতে ত্রান দিতে আমাদের এখানে সরকার দলের নেতা কর্মিরা বর্তমান সময়ে একটু সরব হয়ে উঠেছেন। আশা করি আমাদের পাশাপাশি উনারা এবং অন্যান্য সামাজিক মানুষগুলো এগিয়ে আসেন, তাহলে আমাদের কাজগুলো সহজ হয়ে যায়। তিনি বলেন এখানের সাংবাদিক ভাইরা অনেক আন্তরিকভাবে কাজ করেন। করোনার এই সময়ে আমরা প্রশাসন তাদের যথেষ্ট সাপোর্ট পাচ্ছি কাজ করতে গিয়ে।

মেয়র জিল্লুর রহমান বলেন, প্রশাসনের অনেক লোকজন আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি অনেক কষ্টের। তিনি বলেন করোনা মোকাবেলায় আমরা পৌরসভা থেকে কাজ করছি, দল থেকেও করছি, করবো। তিনি ত্রান সচিবকে বরাদ্দ আরো বাড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান। চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি বলেন, জেলা প্রশাসনের এবং তাদের পরিবার সদস্য আক্রান্ত হচ্ছে। এভাবে আক্রান্ত হতে থাকলে কাজের ব্যঘাত ঘটতে পারে। এই অবস্থায় লোকবল সংকট কাটানোর ক্ষেত্রে সচিবকে তিনি অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, এখানে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা রয়েছে। বিশেষ করে জেনারেল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের।

জেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী বলেন,মসজিদের ইমাম সাহেবরা মাস্ক পরেন না,মুসল্লীদেরও উৎসাহ দেন না।এতো বলা সত্ত্বেও তারা ঠিক কাজটি করছেন না। তিনি বলেন,আমরা এই যুদ্ধ মোকাবিলায় আছি,থাকবো।

সবশেষ জেলাপ্রশাসক সচিবকে জানান, ৩৩৩ নাম্বারটি অনেকেই ব্যবহার করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। ফলে অনেকের কাছেই সাহায্য পৌছানো যাচ্ছে না। ডিসির এই কথা শুনার পর ত্রাণ সচিব বলেন, তাহলে ভিন্ন ভাবেও আমি এখানে বরাদ্দ রাখবো আমি। চাহিদা দিলে সেটা পেয়ে যাবে।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, আমরা কাজ করতে এসেছি মানুষের জন্য। আর কাজ করতে এসে আমরাও এখন এই মহামারির শিকার হচ্ছি। আমাদের পরিবার পরিজন হচ্ছে। তবুও আমরা পিছাতে চাই না। মনোবল আছে, থাকবে। তিনিও তার প্রশাসনের অফিসার শূন্যতা তুলে ধরেন।

সভায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক চাঁদপুর, ডিডি এনএসআই শেখ আরমান, চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারগন অংশ নেন।

Loading

শেয়ার করুন: