তৃণমূল ও ভোটারদের দাবিতে পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন ইব্রাহীম জুয়েল

চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল চাঁদপুর পৌর বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের দাবির প্রেক্ষিতে পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্যে আবেদন করেছেন।

পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানা যায়, ওয়ান ইলেভেনে পরিক্ষিত সাবেক এ ছাত্রনেতা চাঁদপুরে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নিয়োজিত রাখার পাশাপাশি একাধিকবার কারাবরণ করেন। সাধারণ ভোটারদের কাছেও তার পরিচিতি ব্যাপক ও বিস্তীর্ণ।

এই ছাত্রনেতা দেশে সেনা সমর্থিত ১/১১ সরকারে সময়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে টেলি কনফারেন্স করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেই তোলপাড় সৃষ্টি করে ছিলেন। ফলে ওই সময়ে এ ছাত্রনেতা দেশের সব গণমাধ্যমের কল্যাণে জাতীয়ভাবেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। দেশের গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখেন। পরবর্তীতে কেবল ক্লিন ইমেজের উদীয়মান রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদেরও রোষানলের শিকার হন। ফলে বেশ কয়েকটি মিথ্যা রাজনৈতিক মামলায় কারাবরণ করতে হয়েছে এই ছাত্রনেতাকে।

এই যখন কাজী জুয়েলের রাজনৈতিক ভাগ্যবরণ, ঠিক তখনি তিনি এগিয়ে আসেন তৃণমূলের পাশে। তৃণমূলও তাকে আসন্ন পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তাঁকে পেতে চান।

এ বিষয়ে কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল জানান, ‘বাংলাদেশের মধ্যে চাঁদপুর জেলা বিএনপির একটি টাইটানিক জাহাজ, যার ক্যাপ্টেইন হচ্ছেন শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক। উনি হচ্ছেন প্রকৃত ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। নেতাজী যদি মনে করেন চাঁদপুর পৌরবাসীর সেবায় আমাকে কাজে লাগাবেন, তাহলে অবশ্যই তিনি ধানের শীষ প্রতীকে আমাকে মনোনিত করবেন। এছাড়া যদি আমার চেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করা হয় সেক্ষেত্রে দলের প্রয়োজনে আমি তার সাথে কাজ করবো। কারণ আমি বরাবরের ন্যায় নেতার প্রতি আনুগত্য ও দলে প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সুদিন আর দুর্দিন নয় সর্বদাই জাতীয়তাবাদী শক্তির সাথে আছি ছিলাম ও থাকবো। মনোনয়ন পেলেও থাকবো না পেলেও থাকবো।’

তৃণমূলের বেশ কিছু নেতাকর্মী জানিয়েছেন আপনি পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে লিস্টের ১ নাম্বারে রয়েছেন বিষয়টি কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নে ইব্রাহীম জুয়েল জানান, ‘স্কুল জীবন থেকে শুরু করে এ শহরেই দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি করেছি। সুখে-দুঃখে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পাশে নিজেকে রাখার চেষ্টা করেছি। সে হিসেবে তাদের অনুরোধে পৌরবাসীকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে সেবার সুযোগ পেতে প্রার্থী হয়েছি। কেন্দ্রীয় ও চাঁদপুর জেলা বিএনপি চাইলে তৃণমূলদের আশা পূরণ হবে বলে আমি মনে করি।

কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েলের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানা যায়, তিনি ছাত্রজীবন থেকেই চাঁদপুরের সামাজিক, রাজনৈতিক অঙ্গন ও গণমাধ্যমে তাঁর গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা ছিলো। গরীব-দুঃখীদের লালন-পালনসহ সমাজসেবাক‚লকডাউনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। বিশেষ করে করোনাকালিন সময়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পৌরবাসীর পাশে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাস্কের সংকট মূহূর্তে পথচারী, শ্রমিক ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে মাস্ক বিতরণ করেন। মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, লকডাউনে আটকে পড়া পৌর এলাকার সাধারণ শ্রমিক ও দিনমজুরদের জন্যে টানা লকডাউনে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া পৌর এলাকায় কর্মহীন হয়ে পড়ে প্রায় সহস্রাধিক পরিবারকে নগদ অর্থ ও খাবার দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান। সাহায্য গ্রহণকারীদের সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় এর বেশিরভাগ অংশই তিনি প্রচারের বাইরে রেখেছেন।

এক বিবৃতিতে ইব্রাহীম জুয়েল নিজের অবস্থান তুলে ধরে জানান, ১/১১ এর প্রেক্ষাপটে যখন নেতাকর্মীরা বিএনপির পরিচয় দিতে দ্বিধাবোধ করতো তৎকালিন সময়ে তিনি গুটিকয়েক নেতাকর্মী ও মিডিয়ার সহযোগিতায় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হয়েও বিএনপি সহ সকল অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের কর্মসূচি পালনসহ তৃণমূল নেতাকর্মীর পাশে ছিলেন। ক্রসফায়ার থেকে এলাকাবাসির সহযোগিতায় বেচেঁ গিয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের নির্যাতনে মৃত্যুপথযাত্রী ছিলাম। বহুবার কারাভোগ করেছেন । ২০১৫ সালের জি আর -৫৬ নং মামলায় দীর্ঘ ৬ মাস কারাভোগ কালীন ঈদুল আজহা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও কারাবন্দী নেতাকর্মীদের প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর ও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন।

দলের সকল অর্পিত দায়িত্ব, কর্মসূচি ও আন্দোলনে সার্বিক সহযোগিতাসহ সক্রিয় নেতৃত্বে অবস্থান ছিলো তার স্পষ্ট। পারিবারিক ও পরবর্তিতে ব্যক্তিগত আর্থিক স্বচ্ছলতা চলমান থাকার কারণে-দল ও দলের নেতাকর্মীদের চাহিদা-প্রয়োজনে সর্বদাই পাশে দাঁড়িয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, আমি দলের যেকোন কর্মসূচি-উৎসব , ঈদ ,বন্যা , ঝড়-বৃষ্টি , নদী-ভাঙ্গন, করোনাসহ যেকানো মহামারীসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন এবং সামাজিক-জাতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলের নেতা-কর্মীর কাছে পরিক্ষীত। যা মিডিয়ার কল্যাণে চাঁদপুরবাসী অবগত। সর্বোপরি দলের প্রতি আনুগত্য-জিয়াপরিবারের ত্যাগ-শহীদ রাষ্টপ্রতি ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের আদর্শ-গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে নির্যাতনভোগী মা আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি ভালোভাসা-মেধাবী নেতৃত্বে তারেক রহমানের আগামীর ১৯ দফার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন কে বুকে লালন করে এগিয়ে যেতে চাই।’

কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েলের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানা যায়, চাঁদপুর শহরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম বংশ কাজী পরিবারে ১৯৭৮ সালের ২রা ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা- মরহুম হাফেজ কাজী, মা ফিরোজা বেগম। পড়াশোনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে হাসান মেমোরিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৯৭ সালে বি.কম, ১৯৯৫ সালে চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে থেকে এইচএসসি ও ১৯৯৩ সালে চাঁদপুর গনি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন।

অবসরে ইব্রাহীম জুয়েল বই ও পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি পরিবারকে সময় দেন। তিনি পারিবারিক জীবনে ছেলে ও দু’কন্যা সন্তানের পিতা। ছেলে কাজী আফতাব সামী আল আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজে ও দু’মেয়ে চাঁদপুর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যয়নরত।

প্রসঙ্গত, আগামী ১০ই অক্টোবর শনিবার চাঁদপুর পৌরসভার সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। স্থগিত হওয়া চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনের পুনঃতফসিলে ১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই। ২৪ই সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং ১০ই অক্টোবর শনিবার ভোটগ্রহণ। ওইদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সফিকুর রহমান ভূঁইয়ার মৃত্যুতে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয় চাঁদপুর পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন। গত ২৯শে মার্চ এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো। তবে এর আগে গত ১৬ই মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন স্থগিত করে কমিশন।

এদিকে চাঁদপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর পৌরসভার স্থগিত নির্বাচন সম্পন্নের লক্ষ্যে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়া ইতোপূর্বে মেয়র পদে যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাদের আর নতুন করে দাখিলের প্রয়োজন হবে না। একই সাথে সংরক্ষিত কাউন্সিলর, সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে নতুন করে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ থাকবে না। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে।

এই নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনে লড়বেন অ্যাড. জিল­ুর রহমান জুয়েল এবং হাতপাখা মার্কার প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলা সংগঠনের নেতা মামুনুর রশিদ বেলাল।

Loading

শেয়ার করুন: