দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন নির্মাণ সমঝোতা স্মারক সই

হাসনা জাহান ॥

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের অধিনে চাঁদপুর পৌরসভা ও ইউএনডিপি একত্রে কাজ করবে। এই প্রকল্পে চাঁদপুর পৌরসভায় কাজ হবে প্রায় ১শ’ কোটি টাকার। গতকাল ১৮ এপ্রিল চাঁদপুর পৌর পাঠাগারে অনুষ্ঠিত হলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসন নির্মান বিষয়ক অবহিতকরণ ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান অতিথি মোঃ মাসুম পাটওয়ারী, যুগ্ম সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জাতীয় প্রকল্প পরিচালক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প, ইউএনডিপির ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার যুগেশ প্রাধানাং ও ঢাকা এবং চাঁদপুর পৌরসভায় কর্মরত প্রকল্প টীম, উপ-পরিচালক-স্থানীয় সরকার বিভাগ, নির্বাহী প্রকৌশলী-এলজিইডি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার-সদর, সম্মানী কাউন্সেলরবৃন্দ, পৌরসভার কর্মকর্তাবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, মিডিয়া কর্র্মীবৃন্দ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিবৃন্দ।

সভায় সভাপতিত্ব করেন মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান, চাঁদপুর পৌরসভা এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মোঃ আব্দুল হান্নান, টাউন ম্যানেজার, এলআইইউপিসিপি, ইউএনডিপি, চাঁদপুর পৌরসভা।এতে অংশগ্রহণ করেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন ,সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জীবন, কাজী শাহাদাত, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, এএইচ এম আহসান উল্লাহ, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল ইমরান শোভন, সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ প্রমুখ।

জলবায়ু পরিবর্তন জনিত বিরূপ প্রভাবের ফলে চাঁদপুর শহরে একদিকে যেমন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ার কারণে সৃষ্ট সামর্থ্য ও সম্ভাবনা বাধাগ্রস্থ হয়েছে। পদ্মা-মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদী বেষ্টিত চাঁদপুর পৌরসভায় জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে সৃষ্ট দারিদ্র্য্র দূরীকরণে এবং ২০৩০ সালের এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, এফসিডিও এবং ইউএনডিপির সহায়তায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়নে ২০১৮ সালে শুরু হয় এলআইইউপিসি প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ২০২৩ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ প্রকল্পের আওতায় শহরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্প কর্তৃক দরিদ্র বসতিতে জলবায়ু সহনশীল ক্ষুদ্র অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, শিক্ষা ও পুষ্টি সহায়তা এবং দক্ষতামূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ফলে অনলাইনে নিবন্ধিত মোট ২২,৫০০ দরিদ্র পরিবারকে সংগঠিত করে ৯৭টি কমিউনিটি সংগঠন গঠন করা হয়েছে এবং সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে ৯০টি কমিউনিটি বেজ্ডৃ কর্ম-পরিকল্পনা তৈরী করা হয়েছে যা পৌরসভার বার্ষিক পরিকল্পনা ও বাজেটে সংযুক্ত করা হয়েছে, ২৫০০ জন নারী নেতৃত্ত্ব উন্নয়ন প্রশিক্ষন পেয়ে কমিউনিটিতে উন্নয়নমূলক কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে, কমিউনিটি সংগঠন প্রায় ১ কোটি টাকা সঞ্চয় জমা করে নিজেরা ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে, প্রায় ৩০০ জন সুশিল সমাজের নেতা প্রশিক্ষন পেয়েছেন এবং কমিউনিটিতে সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন, প্রকল্প থেকে ২ বছর ব্যাপি ১০০০ পরিবারের গর্ভবতী নারী ও প্রসূতি মাকে পুষ্টিকর খাবার প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কাউন্সেলিং দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ২৬০০ জন সদস্যকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষন দিয়ে কর্মসংস্থান করা হয়েছে, আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ও শিক্ষা সহয়তা প্রদান করা নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানো হচ্ছে। প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো উন্নয়নে ১৭,৫১০ মিটার ড্রেন, ড্রেন স্লাব ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে, ৫৩ টি গভীর নলকুপ স্থাপন এবং ১১২ টি স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নির্মান কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। উক্ত কাজ বাস্তবায়নে প্রকলেপর বাজেটের পাশাপাশি পৌরসভার নিজস্ব তহবিল বরাদ্দ দিয়ে কাজের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে যা বাংলাদেশে চাঁদপুর পৌরসভা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় চাঁদপুর পৌরসভা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভূক্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রকল্প চাঁদপুর শহরের হরিজন কমিউনিটির জলবায়ূ সহিষ্ণু ৮৮ পরিবারের জন্য আবাসন নির্মান কাজ শুরু হলো। উক্ত কাজের অবহিতকরণ সভায় প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হলো। চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো: জিল্লুর রহমান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে প্রকল্পের অন্যান্য ভাল অর্জনগুলোর মত এই আবাসন নির্মান কার্যক্রম সকলকে সাথে নিয়ে সফলভাবে সম্পন্ন করা হবে।

Loading

শেয়ার করুন: