দর্শনীয় করা হচ্ছে চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেড

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডকে আধুনিকায়নসহ দর্শনীয় করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে । দীর্ঘ নয় বছর এটি ফাইলবন্দী থাকার পর সহসাই এর কাজ শুরু করা হবে বলে রেল সূত্রে জানা গেছে । স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রচেষ্টায় রেলওয়ে বিভাগ পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলন স্থলের বড় স্টেশন মোলহেডের জায়গার ওপর ইলিশকেন্দ্রিক আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে রুপ দিতে যাচ্ছে। মোলহেডে নদী তীর সংরক্ষণ করে সৌন্দর্য় বর্ধন করার পাশাপাশি এখানে রিভার ভিউ টাওয়ার ও চলাচলের রাস্তা করা হবে বলে রেল বিভাগ জানিয়েছে। এক কোটি বারো লাখ টাকা ব্যায়ে এসব কাজ করা হবে । ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন মোলহেডের পুরো চত্বরটিকে ‘বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র’ নামকরণ করে কেন্দ্রের প্রবেশ পথে একটি গেইট নির্মাণ করেছে ।

চাঁদপুরকে পর্যটন কেন্দ্র ও ব্র্যান্ডিং জেলা গঠনের লক্ষ্যে তৎকালীন জেলা প্রশাসন এখানকার বিভিন্ন পেশার ও শ্রেণির ব্যাক্তিবগর্কে নিয়ে গঠন করে জেলা ব্র্যান্ডিং কমিটি । এখানকার সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল সে সময় এই উদ্যোগ নেন। জেলা ব্র্যাান্ডিং কমিটি তখন নদী তীরবর্তী প্রায় ২শ’ বিঘা জমির ওপর একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । সেজন্য চাঁদপুরে রেলওয়ের অব্যবহৃত দুই শ’ বিঘা জমি পর্যটন কেন্দ্রের জন্য ব্যবহার ও বর্তমান রেলওয়ের জায়গায় অবৈধ দখলদারদের অন্যত্র স্থানান্তরকরণের কার্যক্রমও হাতে নেয়।

২০১৪ সালে ঢাকায় জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে চাঁদপুরে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ ও তা নির্মাণের প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে উত্থাপন করেন তৎকালীন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মন্ডল। পরবর্তীতে তিনি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করে রেলমন্ত্রণালয় ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন। সভায় দীর্ঘ আলোচনার পর রেলওয়ে পর্যটন কর্পোরেশনকে ভূমি স্থানান্তর করার একটি সিদ্ধান্তও হয় বলে জানা যায়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই পর্যটন কর্পোরেশনের প্রতিনিধি দল চাঁদপুর মোলহেড সরেজমিন পরিদর্শন করে ‘রক্তধারা’ স্মৃতিস্তম্ভের পর থেকে নদীর তীর পর্যন্ত ১.০৬ একর জমি নির্ধারণ করে তাতে ‘রিভারভিউ ফুড পোর্ট’ নামে আধুনিক মানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। পর্যটন করপোরেশন সূত্রে জানা যায় চাঁদপুরে তিন নদীর মিলনস্থলে একটি পর্যটন কেন্দ্র করার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে প্রায় ১ একর জায়গা চেয়ে রেলমন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আর অগ্রগতি হয়নি তখন । দুই মন্ত্রণালয়ের অনেক চিঠি চালাচালির পর অবশেষে রেল মন্ত্রণালয় নিজেরাই এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে । এর পূর্বে রেলওয়ের চাঁদপুর মোলহেডের দৃষ্টিনন্দন জায়গাটি অন্য কোনো মন্ত্রণালয়কে স্থানান্তর না করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেছে। ইতোপূর্বে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও পৌর প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে বড় স্টেশন মোলহেড স্থানকে বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র নামকরণ করে পর্যটন অঞ্চল ঘোষণা করে। মোলহেড চত্বরে জেলা ব্র্যান্ডিং কমিটি মোলহোডের প্রবেশ পথে ‘সেলফি স্ট্যান্ড’ নামে ইলিশ ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে ।

এ ব্যাপারে রেলওয়ে চট্রগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী ডিইএন-১ আবু হানিফকে লিখিত বার্তা পাঠালে তিনি জানান, চাঁদপুর মোলহেডের জায়গাটি যেহেতু রেলওয়ে বিভাগের তাই রেল বিভাগ এটিকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পর্যটন কেন্দ্র করার উদ্যোগ নিয়েছে। সেজন্য সেখানকার একটি নকশা রেল বিভাগ চূড়ান্তও করেছে । ডিজিটাল সার্ভে কাজটিও সম্পন্ন হয়েছে । তিনি আরো জানান, টেন্ডার নোটিশ এবং কার্যাদেশ করা হয়ে গেছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিহাদ এন্টারপ্রাইজ কাজটি করবে ।

এদিকে ইতোপূবের্ সেখানে জেলা প্রশাসন কর্তৃক সদৃশ যা কিছু নির্মাণ করা হয়েছে তা বহাল থাকছে বলে জানা যায়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে পাক হানাদারদের টর্চার সেল হিসেবে স্থান হিসেবে পরিচিত”’রক্তধারা’কেও সুরক্ষিত করা হবে । মূলত রেল বিভাগ বড় স্টেশন মোলহেডকে উম্মুক্ত পার্ক হিসেবে আকর্ষণীয় করার যে পরিকল্পনা নিয়েছে সহসাই তা আলোর মুখ দেখবে বলে রেল বিভাগ জানিয়ছে ।

Loading

শেয়ার করুন: