নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যানের আপত্তিকর মন্তব্য প্রেসক্লাব ও টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদ

প্রেস বিজ্ঞপ্তি :

বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁদপুর জেলা নদী রক্ষা কমিটির বিশেষ সভাশেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে একটি প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস ব্রিফিং-এ ক’জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। এসময় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী সেখানে সাংবাদিক উপস্থিতি কম দেখে সাংবাদিকদের নিয়েআপত্তিকর, অসৌজন্যমূলক ও মানহানীকর মন্তব্য করেন। ৩ মিনিটের অধিক সময় ধরে তিনি সাংবাদিকদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ সমালোচনা করেন।

তার এসব অযাচিত ও এখতিয়ার বহির্ভূত মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌসসহ প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ। এছাড়া চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল ইমরান শোভন ও সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্খিত এসব মন্তব্যের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অবিলম্বে এসব মন্তব্য প্রত্যাহার করে সাংবাদিক সমাজের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য তাকে আহ্বান জানান সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জনমনে বিভ্রান্তি দূরীকরণে এক যৌথ বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যাও প্রদান করেন। যা নিম্নে তুলে ধরা হলো-

ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিকতার একটি ব্লাইন্ড স্পট হচ্ছে চাঁদপুর। এখানে কয়েকজন মাত্র সংবাদকর্মী আছেন যারা সাহসী ও সৎ সাংবাদিক।’

প্রশ্ন এক. কয়জনকে সাংবাদিক মনে করেন তা তিনি স্পষ্ট করেননি। যদিও আপনার কথায় দুই-তিনজনকে বুঝানো হয়েছে। তার জ্ঞাতার্থে আমরা বলতে চাই, দেশের মধ্যে সাংবাদিককতা উর্বর ভূমি চাঁদপুর।

চাঁদপুর জেলার সাংবাদিকরা দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে দক্ষতার সাথে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শুধু তাই নয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক ‘সওগাত’ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন এর জন্মস্থান চাঁদপুর। ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগম, সিনিয়র সাংবাদিক সংসদ সদস্য মুহম্মদ সফিকুর রহমান, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলমসহ আরো অনেকেই দেশের সাংবাদিকতায় অবদান রাখছেন। চাঁদপুরের নদীতে সুদীর্ঘকাল ধরে বালু উত্তোলন চলছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ ও ফুটেজ প্রকাশিত/প্রচারিত হয়েছে। মাঝেমধ্যে কিছু অভিযানও হয়েছে। এসব সংবাদ প্রকাশ করতে যেয়ে সাংবাদিকরা যাদের বিরাগভাজন হয়েছেন তাদের অনেকেই এখন বালু উত্তোলনের বিরোধীতায় নেমেছেন নিজস্ব দ্বন্দ্ব/স্বার্থের কারণে। বর্তমানে বালু উত্তোলন নিয়ে জেলায় এখন দু’টি পক্ষ। মূল ধারার সংবাদিকরা কারো পক্ষ হয়েই কাজ করতে চায় না। আমরা কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি বিশেষের দ্বন্দ্ব/আক্রোশের পক্ষ-বিপক্ষ হতে আগ্রহী নই। কারণ সাংবাদিকতা করার জন্যে হাজারটা ক্ষেত্র রয়েছে।একটি ক্ষেত্রের নিউজ না হলে একটি পেশার মানুষকে ব্লাইন্ড বলা কতটা যৌক্তিক?

কমিশন চেয়ারম্যান আরো বলেছেন, ‘চাঁদপুরের সাংবাদিকরা কি ভয় পান? যদি ভয় পান তাহলে তাদের সাংবাদিকতা করার বা ওই বুম নিয়ে ঘুরার কোন অধিকার নেই। ওগুলো ছুঁড়ে ফেলে দেন। অন্য চাকরি করেন। সাংবাদিকতা করতে হলে সাহসি হতে হবে।’

প্রশ্ন দুই.চাঁদপুরে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে বালু তোলা হচ্ছে। কেউ বৈধ উপায়ে, কেউ অবৈধ উপায়ে। এতো বছর কি চাঁদপুরে জেলা প্রশাসন ছিল না? জেলা নদী রক্ষা কমিটি ছিল না? জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কোথায় ছিল?আপনি গত দুই মাস ধরে কেন এত বেশি সক্রিয়? এসব কারণে আপনাদের উদ্দেশ্যে এবং স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না?

তিনি আরো বলেছেন, ‘আজকের এই প্রোগ্রামে কোন একটি ন্যাশনাল টেলিভিশন এখানে আসেনি। আমি একটি কথা বলতে চাই, আমি এদের প্রত্যেককে উন্মোচন করব। এখানে কি তারা ভয় পেয়ে আসেননি? নাকি টাকার বিনিময়ে আসেননি? দৈনিক দক্ষিণাতে আপনারা সাংবাদিকতা করবেন সেই সাংবাদিকতা সাংবাদিকতা নয়। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদপত্র। রাষ্ট্রের চারটি পা এর একটি পা হল গণমাধ্যম কিন্তু সে একটি পা চাঁদপুরে একেবারে খোড়া হয়ে গেছে।’

প্রশ্ন তিন.প্রেস ব্রিফিং সময় নির্ধারণ ছিল ৩১ মার্চ বিকেল ৪টায়। এবিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর শারমিন আক্তার চিঠি ইস্যু করেন ৩০ মার্চ। যা চাঁদপুর প্রেসক্লাব এবং টেলিভিশন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছায় ৩১মার্চ দুপুর ২টার পর। অথচ একই দিন পূর্ব নির্ধারিত সময় দুপুরের খাবার শেষে ৩টায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবের বর্তমান কমিটির দ্বিতীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। চাঁদপুর প্রেসক্লাব এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি করে গত ২৫ মার্চ।

অপর এক নোটিশে বিকেল সাড়ে ৪টায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবে চাঁদপুর জেলা পরিষদের আয়োজনে এবং প্রেসক্লাবের তত্ত্ববধানে ‘বঙ্গবন্ধু ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মূলত এ কারণে ওই প্রেস ব্রিফিং এ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হতে পারেনি। প্রেসক্লাবের পূর্ব নির্ধারিত কার্যকরী কমিটির সভা এবং মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের চেয়ে আপনার আকস্মিক আহূত প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত থাকাটা সাংবাদিকগণ গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি।

এছাড়া জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকগণ তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ এ্যাসাইনমেন্ট/জরুরী চলতি ঘটনার তথ্য সংগ্রহ/সংবাদ প্রস্তুতে সর্বদা ব্যস্ত থাকেন। তাছাড়া আপনার কোনো অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকতে হবে- এই বাধ্যবাধকতা অন্তত সাংবাদিকদের নেই। কারণ, সাংবাদিকগণ আপনার/প্রশাসনের অধীন কর্মচারী নয়। বরং আপনার কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন, সাংবাদিকদের নিয়ে আপনার মন্তব্য কতটা যুক্তিযুক্ত? আপনি কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলে আকস্মিক অস্বাভাবিক সক্রিয় নন তো?

Loading

শেয়ার করুন: