নিষেধাজ্ঞা শেষ ইলিশ ধরছে জেলেরা

মেঘনাবার্তা রিপোর্ট:

চাঁদপুর জেলার পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে বুধবার রাত ১২টার পর থেকে ইলিশ আহরণে নামছে জেলেরা। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও মা ইলিশ নিরাপদে প্রজননের লক্ষ্যে চলতি মাসের ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত ২২ দিনে মা ইলিশ রক্ষায় গঠিত জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স ও নৌ-পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১৯৩ জেলেকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্কদের ১ বছর করে কারাদন্ড এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক জেলেদের জরিমানা করা হয় ৩ লাখ ৬ হাজার ১৫ টাকা।

মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয় ২৭০টি। মাছঘাট পরিদর্শন করা হয় ১৭৩টি, আড়ৎ ১০৮৩টি ও বাজার পরিদর্শন করা হয় ৬৪৬টি। জব্দ করা হয়েছে সাড়ে ৬ মেট্টিক টন মা ইলিশ। নিষিদ্ধ কারেন্টজাল জব্দ করা হয়েছে ১ কোটি ৬লাখ ৮ হাজার মিটার। যার আনুমানিক মূল্য ২ কোটি ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে ১০২টি। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২১১টি।

চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের খান জানান, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে জেলেদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে জেলেদের হামলায় গত ১ সপ্তাহে নৌ পুলিশের ৪ সদস্য আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় নৌ-পুলিশ বাদী হয়ে ৫জনকে নির্দিষ্ট আসামীসহ ১২০ জেলেকে অজ্ঞাত আসামী করে পৃথক ৫টি নিয়মিত মামলা দায়ের করেছেন।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি জানান, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় আমাদের জলে ও স্থলে অভিযান অব্যাহত ছিলো। জেলা মৎস্য বিভাগসহ সরকারি অধিকাংশ দপ্তর এবং গণমাধ্যম কর্মীরা মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমে সহযোগিতা করেছেন। আশা করি আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় আগামীতে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

চাঁদপুর জেলায় সরকারি তালিকায় ভুক্ত জেলে রয়েছে ৫১ হাজার ১৯০ জন। এদের প্রত্যেককে এ ২২ দিনের জন্য ২০ কেজি হারে চাল দেওয়া হয়েছে। আগামী মার্চ-এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ মৌসুমের দুই মাসও আনুপাতিক হারে জেলেদের চাল দেওয়া হবে। তবে মাছ শিকারের নিষিদ্ধ সময়ে বেকার জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য টেকসই পরিকল্পনার উদ্যোগ গ্রহণে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানোর কথা জানান এ মৎস্য কর্মকর্তা।

চাঁদপুর মৎস্য ইনিস্টিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও দেশের প্রখ্যাত মৎস্যবিজ্ঞানী ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান জানান, প্রজনন মৌসুমের শুরুর আগের প্রথম ১০ এবং শেষ পর্যায়ের আরো ১০ দিন মিলে মোট ৪২ দিন সাগর মোহনা এবং নদীতে গবেষণা চলমান। এতে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সময়, তাদের জীবনচক্র নিয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং চীনের সাংহাইয়ের ওশান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা নিয়ে এ গবেষণা চলছে। এতে প্রজনন মৌসুমে ডিম ছাড়ার পর ১৬টি ধাপে ইলিশের জীবনচক্র বৃদ্ধি পায়।তার মধ্যে ৯ ধাপ পর্যন্ত কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। তবে পরবর্তী ধাপগুলো অতিক্রম করতে গেলে নানা বাধার মুখে পড়ে।

তিনি আরো জানান, ইলিশের বংশবিস্তারে বিঘ্ন ঘটে। সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই এ ৪২ দিন গবেষণা চলছে। এ বছর মা ইলিশ যথেষ্ট পরিমানে ডিম দিয়েছে তাই ইলিশ উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পাবে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।

Loading

শেয়ার করুন: