প্রকৃত সাংবাদিকতার জন্য এই আইন নয় : পিআইবি মহাপরিচালক

আনোয়ারুল হক:

চাঁদপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্যে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) ৩ দিনব্যাপি প্রশিক্ষণ কর্মশালা সম্পন্ন হয়েছে।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ১০টায় চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ৩ দিনব্যাপি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় পৃথকভাবে ৩৫ জন সিনিয়র সাংবাদিক অনুসন্ধানমূলক রিপোটিং এবং ৩৫ জন সাংবাদিক বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। ১৫ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেলে উৎসবমুখর পরিবেশে সনদপত্র বিতরণের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষনার্থী সাংবাদিকদের মাঝে সনদপত্র বিতরণকালে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ পিআইবির মহাপরিচালক একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, চাঁদপুরের অনেক ঐতিহ্য রয়েছে, রয়েছে গৌরবোজ্জল ইতিহাস। এ শহর থেকে অনেকগুলো পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। আর এসব পত্রিকায় কাজ করছেন মেধাসম্পন্ন সাংবাদিকবৃন্দ। যারা সকলেই সচেতন ও কর্মদক্ষতা সম্পন্ন। এদের জন্য কিছু করার লক্ষেই পিআইবির এই আয়োজন। জনগণ সম্পৃক্ত এমন সংবাদ প্রকাশই হলো সাংবাদিকতা। ঢাকার সাংবাদিকতা আর চাঁদপুর শহরের সাংবাদিকতা এক নয়। আপনাদের অনেক পরিশ্রম করে সংবাদ তৈরী করতে হয়। যাতে কারোই কোন সহযোগীতা থাকে না, আর ঢাকার সাংবাদিকদের সংবাদ প্রকাশে সম্পাদক থেকে শুরু করে কয়েক হাতের স্পর্শে সংবাদ তৈরী হয়।

তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে বলতে গিয়ে বলেন, অপসাংবাদিকতা, ফেইস বুক সাংবাদিকতা, নিউজ পোর্টাল সাংবাদিকতার জন্যই এই আইন। প্রকৃত সাংবাদিকতার জন্য এই আইন নয়। আজকাল যেভাবে ফেইসবুক বা নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে মানুষের চরিত্র হনন হচ্ছে, মিথ্যা প্রকাশিত হচ্ছে, তা’ আপনি কিভাবে বন্ধ করবেন। মানুষের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুন্ন না হয়, তার জন্যই ডিজিটাল আইনের প্রয়োগ।

তিনি আরো বলেন, ১৯৭২ থেকে ‘৭৫ পর্যন্ত অবাধ সাংবাদিকতার সুযোগ ছিল। যার জন্য দেশের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবীরা, সাংবাদিকরা অবাধে বঙ্গবন্ধুর বিরোধীতা করতে পেরেছিল। তারা জাতির জনকের বিরুদ্ধে কুরুচি সম্পন্ন শ্লোগান দিতেও দ্বিধা করেননি। যে ৬ দফা দাবির প্রেক্ষিতে আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছিল, সেই ৬ দফা দাবীর পক্ষে কয়জন সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবিরা কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, অধিকাংশ সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, সাংস্কৃতিক কলাকুশলীরা ছিলেন চীনপন্থী পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। তারা সেইদিন পাকিস্তানের পক্ষে শ্লোগান দিয়েছেন, কথা বলেছেন। অথচ শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর রাতারাতি অনেকেই ভোল পাল্টিয়েছেন। তারাই আজ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভাষণ দেন, কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুণগান গায়। যা ভাবতে গেলে অবাক লাগে। তিনি মাওলানা ভাষানীর ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন।

তিনি বলেন, মাওলানা ভাষানীকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন ব্যবহার করেছেন, যা ইতিহাসের গভীরে গেলে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন ‘৭২ ও ‘৭৫-এর সময়কালও দেখতে হবে। একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু কিভাবে কস্ট করেছেন, সে সময় সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবিদদের ভূমিকা কি ছিল, কয়জন তারা দেশের জন্য কাজ করেছেন? তারা সেই দিন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কথা না বলে ভিন্নসূরে কথা বলেছেন। পক্ষপাতিত্ব করেছেন চীন পাকিস্তানের।

তিনি সাংবাদিকতার উপর কথা বলতে গিয়ে বলেন, বর্তমানে মোবাইল সাংবাদিকতার মাধ্যমে কাজ অনেক সহজ হলেও মেধার বিকাশ ঘটেনি। আমাদের চেস্টা রয়েছে সাংবাদিকতার বিকাশ ঘটাতে যুগোপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করা। করোনার ভয়াভয়তার সময়ও আমরা সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। দেশের ৬৪টি জেলাতেই প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

তিনি চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েলের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, জুয়েল অনেকগুলো ভালো কাজ করেছেন। যার মধ্যে একটি চাঁদপুরের ইতিহাস তুলে ধরা, যা অন্য কেউ করেনি। এজন্য জুয়েলকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি সাংবাদিকদের মানোন্নয়নে আরো ব্যাপক প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ফরিদগন্জের উন্নয়নে চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রহমানেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, ফরিদগন্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রিসোর্স পার্সন ড,প্রদীপ কুমার পাণ্ডে।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারীর সভা প্রধানে ও সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশার উপস্থাপনায় প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের মাঝে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক রোটারিয়ান কাজী শাহাদাত, গোলাম কিবরিয়া জীবন,শহীদ পাটওয়ারী, গিয়াসউদ্দিন মিলন, সোহেল রুশদী, লক্ষণ চন্দ্র সূত্রধর, এ এইএম আহসান উল্ল্যাহ, আল ইমরান শোভন, অধ্যাপক আব্দুর রহমান, মির্জা জাকির, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল আউয়াল রুবেল, শাহাদাত হোসেন শান্ত, ফারুক আহম্মদ, কে এম মাসুদ, পার্থনাথ চক্রবর্তী।

অতিথিসহ অতিথিদ্বয় প্রশিক্ষণার্থী সকলের হাতে প্রশিক্ষণের সনদ তোলে দেন। নবীন প্রবীণের সমন্বয়ে পৃথক পৃথক প্রশিক্ষণ কর্মশালার সনদ প্রদান অনুষ্ঠানটি মিলন মেলায় পরিণত হয়।

Loading

শেয়ার করুন: