ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু

ফরিদগঞ্জ প্রতিবেদক:

কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাথে প্রতারাণার আশ্রয় নিয়ে ‘প্রধান শিক্ষক’ পদবী গোপন করে ব্যবসায়ী পরিচয়ে নিজে একটি মাধ্যমিক স্কুুলের প্রধান শিক্ষক থাকা সত্তেও সমপর্যায়ের একাধিক মাধ্যমিক স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হয়েছেন-এমন অভিযোগে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজলের বিরুদ্ধে।

১৬ নভেম্বর ২০২০ কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ব্যাংক ড্রাফট এর মাধ্যমে চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ফরিদগঞ্জ এআর স্কুলের নির্বাচিত ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ মোশারফ হোসেন।

তার প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য কুমল্লিা শিক্ষা বোর্ড চাঁদপুর জেলা প্রশাসনকে চিঠি পাঠায়। চাঁদপুর জেলা প্রশাসন তদন্তের জন্য ১৪ ডিসেম্বর ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে তদন্তের দায়িত্ব হস্তান্তর করে। যার স্মারক নং ১৯১।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে ১০-০১-২০২১ তারিখে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দিয়ে ফের চিঠি প্রেরণ করে যার স্মরক নং ০১৯।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ফরিদগঞ্জ এআর হাই স্কুলেল প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন ২০১৬ থেকে ২০১৯ এর মধ্যে দুটি মাধ্যমিক স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। যা বোর্ডের আইন বিরোধী। একটি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমপর্যায়ের অপর স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিতো নয়ই বরং কোন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হিসেবেও থাকতে পারবেন না । এমন রূলসকে অমান্য করে রফিকুল আমিন নিজের প্রধান শিক্ষক পরিচয় গোপন করে ব্যবসায়ী পরিচয়ে ফরিদগঞ্জ গৃদকালিন্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয় । যার ইন নম্বর ১০৩৫৭৭ এর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং ফরিদগঞ্জ মনতলা হামিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় যার ইন নম্বর ১০৩৫৯৪ এর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। নিজের প্রধান শিক্ষক পরিচয় গোপন করে ব্যবসায়ী পরিচয়ে অন্য স্কুলের সভাপতি হয়ে তিনি স্পষ্টই বোর্ডের সাথে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমিক স্কুল ইনস্পেক্টর মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমপর্যায়ের অন্য একটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কোন ভাবেই হতে পারবেন না। যদি ফরিদগঞ্জে এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটে থাকে তবে বিষয়টি বোর্ডের সাথে তথ্য জালিয়াতি ও প্রতারণার শামিল। আমরা অভিযোগ হাতে পেয়েছি, বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গৃদকালিন্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেন মো. রফিকুল আমিন আমার স্কুলে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। উনি সভাপতি থাকাকালীনই অত্র প্রতিষ্ঠানে আমার প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ হয়।

ফরিদগঞ্জ মনতলা হামিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ১৭-০৪-২০১৭ থেকে ১০-০১-২০১৯ পর্যন্ত মোঃ রফিকুল আমিন আমার প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন এ সময়ে তিনি ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।

যদিও ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রবিধামালা-২০০৯ সালের গেজেট এর ৭ এর ২ উপধারায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ‘কোন শিক্ষক কিংবা শিক্ষক শ্রেণির সদস্য ম্যানেজিং কমিটির সদস্য পদে নির্বাচিত হইবেন না।’ তবুও কোন বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য মোঃ রফিকুল আমিন একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকেও দুটি মাধ্যমিক স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হয়েছেন তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ হওয়া পর্যন্ত।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আলী আশরাফ বলেন, আমি গত ২৮ তারিখে তদন্তের চিঠি হাতে পেয়েছি। ৩ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকেলে আমি অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারী ব্যক্তিকে লিখিত চিঠির মাধ্যমে ডাকবো এবং উভয় পক্ষের বক্তব্যের মাধ্যেমে প্রকৃত ঘটনা যাচাই করে শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবো।

ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল আমিন কাজল বলেন, স্থানীয় ভাবে প্রস্তাব সমর্থনের মাধ্যমে আমি দুইটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়ে সঠিক ভাবে দায়ীত্ব পালন করেছি। কিন্তু বার বার আমার বিরুদ্ধে যেই অভিযোগ আনা হচ্ছে তা সম্পূর্ন ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত।

অভিযোগকারী মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, আমি স্কুলে যে সকল সচেতন অভিভাবকদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলাম তাদেরকে কথা দিয়েছিলাম স্কুলের সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। সেই ধারাবাহীকতায় কতিপয় সচেতন অভিভাবক আমাকে প্রধান শিক্ষকের এই প্রতারণাটি ধরিয়ে দেন। যার ফলে তাদের পক্ষ থেকে আমি কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে যথা নিয়মে ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করি।

আশা করি এর সুষ্ঠু বিচার হবে। স্কুলের কিছু সচেতন অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের শিক্ষা সনদ জালিয়াতি সহ নানা অনিয়মের বিষয়ে আইনি আশ্রয় নেওয়ার কথাও ভাবছেন।

Loading

শেয়ার করুন: