ভাষা বীর এমএ ওয়াদুদ সেতু চালু হচ্ছে ডিসেম্বরেই

বিশেষ প্রতিবেদক॥

চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ও ফরিদগঞ্জের ইসলামপুরবাসীর সেতু বন্ধনে নির্মিত রামপুর ইউনিয়নে ডাকাতিয়া নদীর ওপর ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতুর কাজ ডিসেম্বরেই শেষ হচ্ছে। প্রথম ধাপের মূল কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন দু’পাশের অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ বাকি। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯-’২০ অর্থবছরে। পুরো কাজ সম্পন্ন হলে এটি হবে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ এ দু’ উপজেলাবাসীর স্বপ্নের ব্রিজ।

রামপুর ইউনিয়নে ছোটসুন্দর বাজারের এক কিলোমিটার দক্ষিণে বগার গুদাড়া এলাকায় ৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ ব্রিজ নিমার্ণের উদ্যোগ নেয়া হয়। চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বরে ব্রিজ নিমার্ণ কাজ শেষ হবে বলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউনুস হোসেন বিশ্বাস নিশ্চিত করেছেন। আলাপকালে তিনি আরো জানান, দ্বিতীয় ধাপের কাজ চলতি অর্থবছরের জানুয়ারিতে শুরু করা হয়।
ব্রিজের দ্বিতীয় ধাপের কাজের জন্য চলতি অর্থবছরে ৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ব্রিজের পূর্বপাশে ২২৩ মিটার এবং পশ্চিম পাশে ১৪০ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজের টেন্ডার ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।

এ ব্যাপারে তিনি জানান, দ্বিতীয় ধাপের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এখন কার্যাদেশ চলমান পর্যায়ে রয়েছে। ডাকাতিয়া নদীর পানির স্তর আগামি জানুয়ারির মধ্যে নিচে নেমে আসা মাত্রই ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ ব্রিজের অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ শুরু করা হবে।’ তিনি আরো জানান, এক পাড়ে চাঁদপুর সদরের রামপুর ইউনিয়নের অংশ এবং অপর পাড়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা ইউনিয়নের অংশে এ সেতুর অবস্থান।

প্রসঙ্গত, ২০১৭-’১৮ অর্থবছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদের কন্যা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি চাঁদপুরের অংশ ও ফরিদগঞ্জ আসনের তৎকালীন সাবেক সাংসদ ড.শামছুল হক ভূঁইয়া ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা ইউনিয়নের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।
২০১৬-’১৭ অর্থবছরে এর কাজ শুরু হলেও বর্ষায় ও অসময়ের বৃষ্টিপাতের কারণে ডাকাতিয়ার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৫-৬ মাস যাবত ব্রিজের কাজ বন্ধ ছিল। ব্রিজের দৈর্ঘ্য ২শ’৭৪ মিটার ও প্রস্থ ৫ দশমিক ৫০ মিটার।

চাঁদপুর-হাইমচর আসনের এমপি ও শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি’র পিতা ভাষাসৈনিক মরহুম এম.এ ওয়াদুদের নামানুসারে ব্রিজটির নামকরণের প্রস্তাব রয়েছে বলে জানা যায়।

চাঁদপুরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ(এলজিইডি) এর কাজ বাস্তবায়ন করছে। দু’জন সহকারী প্রকৌশলী দু’দিকের কাজ তদারকি করছেন। ৪টি বড় ও ১০টি ছোট আরসিসি পিলারের ওপর ব্রিজটি নির্মাণ হচ্ছে। উভয় পাড়ের অ্যাপ্রোচ রোডের দৈর্ঘ্য ৩৬৩ মিটার। ইতোমধেই যে সব বড় বড় ব্রিজ নির্মিত হয়েছে এটি হবে চাঁদপুরের অন্যতম বৃহৎ ব্রিজ।

ব্রিজ চালু হলে চাঁদপুর সদরের রামপুর ইউনিয়নের সাথে অবহেলিত ফরিদগঞ্জের বালিথুবা ইউনিয়নের ইসলামপুরের সাথে সংযোগ সৃষ্টি হবে। অনাদিকাল থেকেই এপারের লোকজন ওপার ও এপারের লোকজন এপারে সামাজিক আচার অনুষ্ঠান, হাট-বাজার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষি পণ্য বাজারজাত করতে আসা-যাওয়া করেছেন।

এক সময় শত শত কলেজ শিক্ষার্থী দূর-দুরান্ত থেকে পাঁয়ে হেঁটে এ স্থান দিয়ে নৌকায় নদী পাড় হয়ে চাঁদপুর সরকারি ও মহিলা কলেজে আসা-যাওয়া করতো। চাকুরিজীবীরা এসে ট্রেনেযোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করত।

যতদূর জানা গেছে-স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ বগার গুদাড়া দিয়ে সন্ধ্যা হলে ওপারে গিয়ে সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয় নিত। মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম একটি চলাচলের নিরাপদ পথ ছিল বগার গুদাড়া। ছোট সুন্দর বাজারের এক কিলোমিটার দক্ষিণে ডাকাতিয়া নদীর পূর্ব তীরে এ বগার গুদাড়া অবস্থিত। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাগণ দিনে বা রাতে নিরাপদে ওপারে গিয়ে রাত্রি যাপন করত বলে জানা গেছে ।

Loading

শেয়ার করুন: