মতলব হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ওয়ালিউল্লাহ পাটোয়ারীর আজ ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী

মতলব প্রতিনিধি:

আজ ২৫ আগস্ট। মতলবগঞ্জ জে বি হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক দীর্ঘ ৪১ বছর শিক্ষার আলো প্রজ্জ্বলনকারী মরহুম শিক্ষাবিদ ওয়ালিউল্লাহ পাটোয়ারীর আজ ২১ তম মৃত্যুবার্ষিকী।

এক নজরে স্যারের কর্মময় জীবনীঃ

ওয়ালীউল্লাহ পাটোয়ারী দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলোকিত মানুষ, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, চাঁদপুর জেলা তথা সারাদেশে শিক্ষার আলোকবর্তিকা প্রজ্জ্বলনকারী উজ্জ্বল নক্ষত্র ওয়ালীউল্লাহ পাটোয়ারী চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম জয়শ্রী গ্রামে সম্ভ্রান্ত পাটোয়ারী পরিবারে ১৫ মার্চ ১৯০৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

নিজ গ্রামে প্রাথমিক পাশ করে ১৯১৯ সালে বাবুরহাট হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯২৪ সালে বাংলা সহ পাঁচটি বিষয়ে লেটার মার্কসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯২৬ সালে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ বিজ্ঞান শাখা থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাশ করেন। ১৯২৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় থেকে কৃতিত্বের সাথে বিএসসি পাশ করেন। অত্যন্ত মেধার অধিকারী এই কৃতিমান ব্যক্তিত্ব ওয়ালীউল্লাহ পাটোয়ারী ১৯৩০ সালের মে মাসে মতলবগঞ্জ জেবিএইচই স্কুলে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

মাত্র ২৪ দিন শিক্ষকতার পর নাটকীয়ভাবে বিভাগীয় ইন্সপেক্টর শামসুল ওলামা কামাল উদ্দিন আহমদ কর্তৃক প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োজিত হন। এ স্কুলে তাঁর উপস্থিতি ঝড়-ঝঞ্ঝার সৃষ্টি করলেও স্বীয় ব্যক্তিত্ব ও কর্মকুশলতার প্রভাবে সব কাটিয়ে উঠে একাধিক্রমে ৪১ বছর (১৯৩১-১৯৭১) কৃতিত্বের সাথে কাজ করে খ্যাতিমান এই শিক্ষাবিদ সফল প্রধান শিক্ষক হিসেবে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে স্কুলটিকে দেশের অদ্বিতীয় স্কুলে পরিণত করেন।

পরে আরো কয়েক বছর ঐ স্কুলের রেক্টর ছিলেন। একবার স্বার্থান্বেষীদের অভিযোগের তদন্ত শেষে বিভাগীয় ইন্সপেক্টর জ্যোতির্ময় লাহিড়ী মন্তব্য করেন, ‘যেমন স্কুলের লেখাপড়া ভাল, তেমনি মৎস্য চাষ, শাক-সব্জী উৎপাদন এবং অন্যান্য কো-কারিকুলার তৎপরতা। স্কুলে চমৎকার সুন্দর শৃঙ্খলা বিরাজমান। আমি ওয়ালীউল্লাহ পাটোয়ারীর মত প্রতিভাবান সক্রিয় শিক্ষক খুব কমই দেখেছি। তিনি স্কুলের প্রাণ।’

ডি.পি.আই. খান বাহাদুর আবদুল হাকিম স্কুল পরিদর্শন শেষে বলেছেন, ‘পাটোয়ারী শিক্ষক রাজপুত্র। তাঁর জীবন ইতিহাস লিখে রাখার মত। ১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিসত্মান সরকার রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘‘তঘমা-ই-খেদমত’’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৬৩ সালে পূর্ব পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসাবে ‘‘বেস্ট টিচার এওয়ার্ড’’ পান। ১৯৬৭ সালে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসাবে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন এবং জেলার কৃতি প্রধান শিক্ষক হিসাবে পুনঃ পুনঃ স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন।

১৯৮১ সালে কুমিল্লা ফাউন্ডেশন থেকে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৮১ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। তাঁর শিক্ষানুরাগীতার আরো প্রমান, মতলবে উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ প্রতিষ্ঠা।অনাড়ম্বর, সাদা সিধে পায়জামা-পাঞ্জাবী পরিহিত আবক্ষ শ্মশ্রম্ন মন্ডিত পাটোয়ারীর সাধনা প্রসূত কয়েকটি কথা :
(১) ‘ছাত্র বড় না হলে স্কুল বড় হয় না, স্কুল বড় না হলে হেড মাস্টার বড় হয় না।’
(২) ছাত্ররা স্কুলের মণি মানিক। স্কুল বাগানের চারা গাছ। যত্ন করলে সুন্দর ফুল ফোঁটে।’ তাঁর রচিত বই ‘উপদেশ কণিকা’ জীবন অভিজ্ঞতার শিক্ষামূলক মূল্যবান গ্রন্থ। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম ওয়ালীউল্লাহ পাটোয়ারী দেশ জাতির জন্য ১৫ টি মূল্যবান ও উপদেশমূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বব্যাপী মরহুম ওয়ালীউল্লাহ পাটোয়ারীর অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী স্ব স্ব ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। জীবনে তারা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মরহুম ওয়ালীউল্লাহ পাটোয়ারী বাংলাদেশের ইতিহাসে তথা আগামী প্রজন্মের কাছে আলোকবর্তিকা হিসেবে নক্ষত্র হয়ে থাকবে। ১৯৯৯ সালে ২৫ আগষ্ট এ খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র : ১। সুবর্ণ জয়মিত্ম-২০০৫, চাঁদপুর জেলা সমিতি ঢাকা কর্তৃক ১০ই জুন প্রকাশিত স্মরণিকা।২। কুমিল্লা জেলার ইতিহাস, কুমিল্লা জেলা পরিষদ কর্তৃক ৭ই জুন ১৯৮৪ কর্তৃক সালে প্রকাশিত।

এ উপলক্ষে আজ মতলব হাই স্কুল প্রাক্তন ছাত্র সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।

Loading

শেয়ার করুন: