মাঠ জুড়ে দুলছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন

মনিরা আক্তার মনি ॥

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মাঠ জুড়ে বাতাসে দুলছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। চলতি মৌসুমে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে বোরো ধানের সোনালী শীষ হাজারো কৃষক পরিবারের চোখে মুখে স্বপ্ন বুনছে।

বর্তমানে শেষ মূহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে। নতুন ধান উঠবে কৃষকের গোলায়। ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে চাষীরা বিভোর। কৃষাণ-কৃষাণীরা গোলা, খলা, আঙ্গিনা পরিষ্কার করায় ব্যস্ত।

সরকারের কৃষি বান্ধব কর্মসূচি, উপজেলা কৃষি অফিসের ব্যাপক তৎপরতা, কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম, অনুকূল আবহাওয়া, সার, কীটনাশক’সহ বাজারে কৃষি উপকরণের পর্যাপ্ত সরবরাহ, সহনশীল দাম, সহজলভ্যতা ও সেচের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সরবরাহ এবং আবাদ উপযোগী পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে বোরো আবাদ হয়েছে ৯৯৫০ হেক্টর, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫৯৭০০ মেট্টিক টন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ধান কাটার অপেক্ষায় রয়েছে। খুশিতে কৃষক পরিবারসহ ব্যবসায়ীরা। ক্ষেতের মধ্যে পোতা বাঁশের কঁঞ্চি ও গাছের ডালের উপর ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধান ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা ওইসব পাখিরা খেয়ে ফেলছে। আবার অনেকে অধিক ধান পাওয়ার আশায় নিজ নিজ জমিতে রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগ করছে। কেউ আবার ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছে। তবে কখন নতুন ধান ঘরে তুলবে এ স্বপ্নে বিভোর ওইসব কৃষকরা। তাই প্রতিটি বাড়ি বাড়ি চলছে নতুন ধান ঘরে তোলার উৎসবের প্রস্তুতি।

উপজেলার দেওয়ানজিকান্দি গ্রামের কৃষক খোকন সরকার বলেন, গত বারের চেয়ে এবার ধান ভাল হয়েছে। আর কয়েকদিন পর কাটা শুরু করা যাবে। তিনি বলেন, ক্ষেতে রোগ-বালাই ও পোকা আক্রমণ করতে পারেনি। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে স্বপ্নের সোনালী ধান যথাসময়ে ঘরে তুলতে পারবো।

ওটারচর গ্রামের কৃষক মো. আতাউর রহমান সরকার বলেন, সেচ খরচ এবং শ্রমের অধিক মূল্য ও কৃষি শ্রমিকের কিছু সমস্যা থাকলেও অনুকূল আবহাওয়ায় সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত সার, কীটনাশক ও বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ায় এ বছর বোরো ধান খুবই ভাল হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ধান ক্ষেতের পাশে দাঁড়ালে বুক জুড়িয়ে যায়। এ বছর তিন একর জমিতে আমন আবাদ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার অধিক ফলন হবে বলেও আশা করছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সালাউদ্দিন বলেন, বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের কাজ করে আসছি। কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারে এবং কোন প্রকার সমস্যায় না পড়েন এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। আশা করি বিগত মৌসুমের মতো এবারও বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে। এতে কৃষক অনেকটা লাভবান হবে বলেও আশা করছেন তিনি।

মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মাঠ জুড়ে দুলছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। কৃষকদের আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর হিসেবে গড়ে তুলতে কৃষি বিভাগ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে অন্যান্য দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উৎপাদন।

Loading

শেয়ার করুন: