মানুষকে অবহেলা করে দেশ চালাই না : প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষকে অবহেলা করে তার সরকার দেশ চালায় না। সরকার মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হয়, বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ায়। মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নে তাদের পাশে থেকে কাজ করে। এই নীতি নিয়ে সরকার কাজ করে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রথমে উপদেষ্টা পরিষদ এবং পরে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হয়।

সারাদেশের বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতিও সরকারের রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও মানুষের পাশে দাঁড়াতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেও সক্রিয় থাকতে হবে। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় আওয়ামী লীগই সবসময় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সারাদেশের কোথায় কী ঘটছে, প্রতিনিয়ত সরকার তার খোঁজ-খবর রাখছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যায় কখন কী করতে হবে, কার কী করণীয় সেসব দায়িত্ব দেওয়া আছে। তাদের সবাই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সরকারের কোনো শৈথিল্য নেই।

এ প্রসঙ্গে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় দেশে কয়েক লাখ মানুষের প্রাণহানির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, সে সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। তারা জানতই না দেশে এতবড় একটি ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেছে। যখন আমি সংসদে দাঁড়িয়ে বললাম, এত বড় একটা ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেছে এবং এত মানুষ মারা গেছে। তখন খালেদা জিয়া সংসদে বললেন, যত মানুষ মারা যাওয়ার কথা ছিল, তত মানুষ মরেনি। আমি তখন বলতে বাধ্য হলাম– কত মানুষ মারা গেলে আপনার তত মানুষ হতো।

গত ১০ বছরে তার সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে জনগণ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিল বলেই আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে। এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাঙালি জাতি বিশ্বে সম্মান পেয়েছে, মর্যাদা পেয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে এই চলার পথ অতটা সহজ ছিল না, অনেক বাধা ছিল। অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যা– এগুলো মোকাবেলা করেই দেশকে এই পর্যায়ে আনতে হয়েছে। এজন্য জনগণের সমর্থন ছিল, সহযোগিতা ছিল। তারা ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে বলেই আওয়ামী লীগ দেশকে এতটা উন্নত করতে পেরেছে।

দেশের বর্তমান উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে দলীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি দলকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, এ দেশ যে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে, উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়েছে– সেটিকে ধরে রাখতে হবে। এজন্য শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োজন, সংগঠন প্রয়োজন। জনমত সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তাই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। আর চিন্তা-চেতনাগুলোকে সমন্বিত করে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করতে হবে, যেন প্রতি পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়া যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের মানুষ কিছু পায়। যেকোনো বাধা মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগই যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেটিই আজ প্রমাণ হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখে, দেশ ও মানুষের উন্নয়নে তারা কী করবে। এ জন্যই এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আগামী দিনে কী করব– সে পরিকল্পনাও করে রেখেছি। সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। সে জন্য বাধাগুলোও দূর করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সমন্বিতভাবে পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে, যেন দেশকেও এগিয়ে নেওয়া যায়।’

প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ১০ বছরে আমরা কিন্তু পিছিয়ে পড়িনি, কোথাও হোঁচটও খাইনি। আর আমরা হঠাৎ করে লাফ দিই না, সবকিছু একবারে করতেও যাই না। পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে আস্তে আস্তে সেটা বাস্তবায়ন করছি। একটা লক্ষ্য নিয়েই ধীরস্থিরভাবে এগিয়ে যেতে হয়, এগিয়ে যাওয়া যায়– সেটিই আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে।’

এ প্রসঙ্গে কারও নাম উল্লেখ না করে সুশীল সমাজের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে দেশে কিছু লোক আছেন যাদের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। এই যে আমরা অর্থনৈতিকভাবে যত দূরই এগোই না কেন, কিছু লোকের সবসময় সেটিকে ভিন্ন চোখে দেখার অভ্যাস। তারা আসলে কখনও গণতান্ত্রিক ধারা চায়ও না। গণতান্ত্রিক ধারা থাকলে মনে হয় যেন তাদের দম বন্ধ হয়ে আসে, তারা বোধহয় নিঃশ্বাসও নিতে পারেন না। মনে হয় একটা অস্বাভাবিক কিছু থাকলেই তাদের দাম বাড়ে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বাজেট দেওয়া হয়েছে। এবার নিয়ে টানা ১১তম বাজেট দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই যে ৫ লাখ কোটি টাকার বিশাল বাজেট তা বাস্তবায়নে নেতাকর্মীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরও আরও সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উপদেষ্টারা থিঙ্কট্যাঙ্কের মতো। আমাদের অফিস… সব ব্যবস্থা কিন্তু আছে। প্রতিটি বিষয়ের উপ-কমিটিও করা আছে। আপনারা অনেকে বসে মিটিং করেন, সেমিনার করেন। এগুলো অব্যাহত রাখতে হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে।’

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি মানুষও দরিদ্র থাকবে না, গৃহহারা থাকবে না, বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পাবে না। দেশে অশিক্ষা ও দারিদ্র্য থাকবে না। প্রতিটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। বাংলাদেশ সার্বিকভাবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠবে, যেটা জাতির পিতা চেয়েছিলেন।

দেশকে আরও উন্নত সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা যে লক্ষ্য নিয়ে দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, সেই স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যেক নাগরিকই তার জীবনকে অর্থবহ করে তুলতে পারবে, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারবে এবং তাদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ হবে। বাংলাদেশ আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে। সেভাবেই আমরা দেশটাকে গড়ে তুলতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক দুটিতে দলের আগামী সম্মেলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন ও দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া জাতির পিতার শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে আগস্ট মাসের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়।

Loading

শেয়ার করুন: