মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার :

চাঁদপুরের ৮ উপজেলার ১১৫ পরিবারসহ সারাদেশের ৪৯২ উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে জমিসহ ঘর প্রদান করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে প্রদানের জন্য সরকারি অর্থায়নে এসব সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

শনিবার সকালে ঢাকার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জমি ও ঘর প্রদান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চাঁদপুরের সকল উপজেলায় এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সদর উপজেলা পরিষদের আয়োজনে ঘর বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, আজ আমাদের জন্য আনন্দের দিন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বঞ্চিত গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের কথাই ভাবতেন। আমাদের পরিবারের লোকদের চেয়ে তিনি গরীব অসহায় মানুষদের নিয়ে বেশি ভাবতেন এবং কাজ করেছেন। এই গৃহ প্রদান কার্যক্রম তারই শুরু করা। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল সব থেকে আগে যেটা আমাদের কাছে অগ্রাধিকার সেটা হচ্ছে এদেশের খেটে খাওয়া মানুষ, গরীব মানুষ, গ্রামের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরে থাকা মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা এবং বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা। আশ্রয়ণ প্রকল্প নিলাম। প্রত্যেককে একটা ঘরের মালিক করে দেওয়া। একেবারে নিঃস্ব যারা ভূমিহীন যারা তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর দেওয়ার প্রকল্প করে দিলাম।

বস্তিবাসীদের ঘরে ফেরা কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বস্তিবাসীরা নিজ গ্রামে ফিরে গেলে ছয় মাস বিনা পয়সায় খাবার পাবে, বাচ্চাদের স্কুলে দিতে পারবে। বিনা পয়সায় একটা ঘর করে দেব আর সেই সাথে টাকা দেব তারা যেন কাজ কর্ম করে ব্যবসা-বাণিজ্য করে চলতে পারে। সেই ব্যবস্থা নিয়ে ঘরে ফেরা কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করলাম। আমরা গৃহায়ন তহবিল করলাম। এই গৃহায়ন তহবিল থেকে এনজিওদের হাতে টাকা দিলাম যে তারা যেন আমাদের গৃহহীন মানুষদের ঘর করে দেয়। এনজিওরা ২৮ হাজার পরিবারকে এই ঘর করে দিয়েছিল। প্রায় ২০ হাজারের মতো বস্তিবাসী নিজ গ্রামে ফিরে গিয়েছিল এবং ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১১ হাজার ভবন তৈরী করলাম, ৪ হাজার চালু করে দিলাম।

এদিকে এ উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’- সেদিন আমরা কিন্তু চিন্তাও করতে পারিনি এটি বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু তিনি এখন তা বাস্তবায়ন করে দেখাচ্ছেন। সে আলোকে প্রথম পর্যায়ে চাঁদপুরে ১১৫টি গৃহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া আরেকটি আশ্রয়ন প্রকল্পে ৪৫টি ঘরসহ সর্বমোট ১৬০টি ঘর হস্তান্তর করা হবে।

চাঁদপুরের গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার), জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অসীম চন্দ্র বণিক, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আবিদা সুলতানা, রাজরাজেশ^র ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী, রামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন পাটওয়ারী, বালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজের পরিচালননায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইমরান হোসাইন সজিবসহ জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকবৃন্দ। প্রধামন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর চাঁদপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলনকক্ষে কয়েকজন উপকারভোগীর হাতে কবুলিয়াত রেজিস্ট্র্রিকৃত দলিল হাতে তুলে দেয়া হয়।

Loading

শেয়ার করুন: