সমাজের ইতিবাচক এবং অনুপ্রেরণার উৎসগুলো তুলে ধরে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে:শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি এমপি

আনোয়ারুল হক:

শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি এমপি বলেছেন, চাঁদপুরে সাংবাদিকতার ঐতিহ্য খুব বড়। জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিকতায়ও চাঁদপুরের বিশেষ অবদান রয়েছে। আমাদের অনেক সাংবাদিক নেতা এই চাঁদপুরের মানুষ। তার কাজ দিয়ে আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। তাদের প্রতিও আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি বলেন, সাংবাদিকতার খুব বড় বিষয় হচ্ছে বস্তুনিষ্ঠতা। যেখানেই অসঙ্গতি, দুর্নীতি, সমস্যা আছে সেগুলোকে যেমন তুলে ধরার দরকার আছে। পাশাপাশি সমাজের যত ইতিবাচক দিক আছে, আমাদের অনুপ্রেরণার যত উৎস আছে সেগুলোকেও মানুষের সামনে তুলে ধরে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহর সঞ্চালনায় ৪ জানুয়ারি সোমবার চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সুবর্ণজয়ন্তী ও নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন তিনি।

মন্ত্রী আরো বলেন, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সবারই কিন্তু স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা দায়বদ্ধতার জায়গা আছে। সেই জায়গাগুলোতে সংবাদ মাধ্যমের খুব বড় ভূমিকা রয়েছে। তারা কোথাও আমাদের ভুল দেখলে তা চিহ্নিত করে দেখিয়ে দিতে পারেন, জানাতে পারেন। তাহলে আমরা সময়মতো তা শুধরে একটা সুযোগ পাবো। একইভাবে কোথাও যদি আমাদের অন্যায় থাকে সেটিও কিন্তু তারা তুলে ধরার মাধ্যমে আমাদেরকে অন্যায় পথ থেকে সরে এসে সঠিক কাজটি করতে বাধ্য করতে পারেন। সাংবাদিকরা ভালো কাজে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। সেজন্য ইতিবাচক, খুব অনুপ্রেরণামূলক, মানুষ উদ্বুদ্ধ হয় এমন বিষয়গুলোকে পত্রিকায় তুলে আনা দরকার।

তিনি বলেন, আমি খুব বড় পত্রিকার দু’ একজন সাংবাদিকের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, ‘আপা ভালো খবরের কাটতি নেই। লোকে খায় না।’ কিন্তু আমাদেরকে মনে রাখতে হবে আমাদের দায়বদ্ধতার জায়গা আছে। আমরা নিশ্চয়ই যেখানে অসঙ্গতি, সমস্যা আছে সেগুলো নিরসনের জন্য যেমন তুলে ধরবো- একইভাবে আমরা যদি ইতিবাচক দিক তুলে ধরতে হবে। সকালে পত্রিকা খুলে যদি সব কিছুই যদি মনে হয় নেতিবাচক তাহলে আমার সারাদিনের কর্মকা-ের উপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর আমি যদি সকালে পত্রিকাটি হাতে নিয়েই দেখি দারুণ রকমের অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো একটা ছোট্ট খবর আছে তাহলে দৈনন্দিন কাজেও তার ভালো প্রভাব থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে অনেক সাধারণ মানুষ আছে যারা অনেক অসাধারণ কাজ করছেন সেগুলো তুলে আনুন। মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে হবে।

তিনি বলেন, এবছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমাদের কিন্তু পেছনের ৫০ বছরের হিসাব একটু কষতেই হবে। সেখানে আমরা দেখেছি সামরিক স্বৈরশাসক থেকে অসামরিক স্বৈরশাসনও। কিন্তু আমরা একটা বিরাট সময় নষ্ট করে ফেলেছি। যে সময়টাতে আমরা বহু দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। আমাদের স্বাধীনতার চেতনা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়ে একেবারেই উল্টো পথে হেঁটেছিলাম। স্বাধীনতার পর অপশক্তির একটা বিরাট উত্থান ঘটেছিল। যারা আমাদের স্বাধীনতার মূল চেতনা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল।

ডা. দীপু মনি বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। দেশকে এগিয়ে নিতে সবাই তাঁর পাশাপাশি যার যার অবস্থান থেকে ভালো কিছু করতে হবে। এ কাজটি ব্যক্তিগতভাবে হয়তো অনেকেই করবেন। কিন্তু সংবাদপত্র যখন এ দায়িত্ব পালন করবে তখন তার যে ব্যাপকতা সেটি অনেক অনেক বড়। আপনাদের সকলের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি। সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে আপনাদের হাতিয়ার অবদান রাখুক। আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে ঐতিহ্যের শহর, সম্ভাবনাময় চাঁদপুরের উন্নয়নে কাজ করে যাবো।
আমি আশা করি, দায়বদ্ধতার জায়গায় চাঁদপুরের সকল সাংবাদিক বন্ধু অবিচল অবস্থান থাকবেন। তাদের জন্য আমার অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। প্রেসক্লাবের উন্নয়নে যখন যতটুকু করার আছে আমরা আমাদের চেষ্টা আগেও ছিলো এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

তিনি আরও বলেন, প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠান আমার জন্য একটি বিশেষ অনুষ্ঠিান। কারণ, আমি প্রেসক্লাব পরিবারের মানুষ, সাংবাদিক পরিবারের মানুষ। বাবার সূত্রে সাংবাদিক পরিবারের মানুষ। সেজন্য একটু ঠাট্টা করেই বলি, আমিতো সংবাদপত্রের প্রেসে দৌড়াদৌড়ি করেই বড় হয়েছি। কাজেই সাংবাদিক পরিবারের সাথে আমার এবং আমার ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদের গভীর আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই আমরা সাংবাদিকতা জগতে যখন ভালো কিছু দেখি তখন দারুনভাবে উদ্বুদ্ধ হই, অনুপ্রাণিত বোধ করি। আর কোথাও যদি কোন সমস্যা চোখে পড়ে তখন সেটি আমাদেরকে পীড়া দেয় এবং তার সংশোধন করার জন্য আমরা মনে করি সেখানে আমাদের কিছু করার আছে।

আর চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সকল সদস্য আমাদের খুব আপন মানুষ। এখানের সাংবাদিক পরিবারকে সম্পৃক্ত করে সারাদিনব্যাপী যে অনুষ্ঠান তা এক মিলনমেলা। এর মধ্য দিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে একটা দারুণ সম্পর্ক তৈরি হয়। আমি এই পরিবারেরই অংশ। যদিও আমি সরাসরি অনুষ্ঠানে আসতে পারিনি কিন্তু ভার্চুয়ালি যুক্ত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সাধারণত এ ধরনের অনুষ্ঠানে আমার আসার কথা থাকলে তা মিস হয় না। অতি সম্প্রতি আমি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম তাই অনুষ্ঠানে আসা হলো না।

তিনি বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে এই যে এতোজন মানুষকে সংবর্ধনা দিলেনÑ এতে বিশেষভাবে যে জায়গাগুলোতে গুরুত্ব দিয়েছেন তা খুবই ভালো। যারা করোনাকালে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। এই সংকটকালে চিকিৎসাসেবায় যুক্ত সিভিল সার্জন, ডাক্তার, মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট, নার্সসহ করোনাকালে সম্মুখযোদ্ধাদের এমন সংবর্ধনা দেয়ায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই।

মন্ত্রী আরও বলেন, করোনাকালে মৃত ব্যক্তিকে দাফনের জন্য যখন কাউকে পাওয়া যায়নি তখন কিউআরসি সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। যারা সকলেই ছাত্রলীগের সদস্য। তারা মানুষের বাড়ি বাড়ি বাজার, ওষুধপত্র পৌঁছে দিয়ে এসেছে। রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। এ ধরনের কাজ তারা করোনা সংকটের সময় করেছে।

প্রেসক্লাবের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) গিয়াসউদ্দিন মিলনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্যাহর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড.সেলিম মাহমুদ,চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর মফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু,চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো.জিল্লুর রহমান জুয়েল,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, বিশিষ্ট শিল্পপতি জয়নাল আবেদীন সিআইপি, ঢাকা পোস্টের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার,বানিজ্য প্রতিদিনের সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়া পলাশ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সকল পযায়ের সদস্য ,সূধীজন এবং ফটো সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

Loading

শেয়ার করুন: