সহিংসতা রোধে চাঁদপুরে মানববন্ধন

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চাঁদপুরের আয়োজনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে সরকারের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ”চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ” শ্লোগানে রাজনৈতিক দোষারোপ নয়, সহিংসতা রোধে অবিলম্বে সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠুবিচারের দাবীতে বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর)১ সকাল ১০টায় চাঁদপুর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্যে সনাক-চাঁদপুরের সহ-সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া বলেন, সম্প্রতি শারদীয় দুর্গোৎসবে কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, মন্দির-পূজামণ্ডপ, বাড়িঘর-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও উদ্বেগজনক। তিনি আরও বলেন, আমরা কারো বিরোধী নই, আমরা আজ এই মানবন্ধনে দাঁড়িয়েছি যারা একটি স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সহিংসতার মাধ্যমে বিনষ্ট করতে চায় তাদের সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে। তিনি বলেন, প্রতিবছরই এধরনের কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে, মামলা হয়, আসামী ধরে, পরে আর মামলার অগ্রগতি হয় না। আমরা এগুলো আর দেখতে চাই না। আমরা চাই প্রতিটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার, প্রতিটি সহিংসতার সুষ্ঠু বিচার। হাজার বছর ধরে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান সকলের মধ্যে যে সম্প্রীতি আমরা দেখেছি তা অব্যাহত থাকুক আমরা সেই কামনা করি। আমরা সবাই ভাই ভাই হয়ে থাকতে চাই। ধর্মের যে মর্মবানী তা সকলের মধ্যে জাগ্রত হোক। জাগ্রত হোক মনুষ্যত্ববোধ। তিনি মানববন্ধনে অংশগ্রহণের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

সনাক সভাপতি শাহানারা বেগম বলেন, স্বাধীনতার এতো বছর পরেও আমাদেরকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে মানববন্ধন করতে হবে যা প্রতিনিয়ত আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। কারণ মুক্তিযুদ্ধ কোন ধর্ম দিয়ে হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা কোন দোষারোপের রাজনীতি চাইনা। দোষারোপের রাজনীতি থেকে আমাদেরকে বেড়িয়ে আসতে হবে। আমরা ধর্মের নামে কোন হানাহানি চাই না। প্রকৃত ধার্মিক কখনো এধরনের কাজ করতে পারে না। আমাদেরকে মনুষ্যত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁদপুর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও নিন্দা জানাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবিলম্বে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠুবিচার নিশ্চিত করা লক্ষ্যে জনমত গঠন করতে দেশের ৪৫টি সনাক এলাকায় একযোগে এই মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা চিরতরে নির্মূল করে সহিংসতার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ অসম্ভবই রয়ে যাবে। তিনি মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, সনাক সদস্য ইসমত আরা সাফি বন্যা, লায়ন মাহমুদ হাসান খান, মোঃ আলমগীর পাটওয়ারী ও ইয়েস সদস্য জয় ঘোষ। টিআইবি’র রাজন চন্দ্র দে’র সঞ্চালনায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে সরকারের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সনাক-চাঁদপুরের পক্ষ থেকে সুপারিশসমূহ উপস্থাপন করেন টিআইবি’র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মোঃ মাসুদ রানা। সুপারিশসমূহ হলো- সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সমস্তঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিপ্রদান; সহিংস ঘটনার যেন বিস্তৃতি না ঘটে সেজন্য প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক তাৎক্ষণিক জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ; শাহাবুদ্দিন কমিশন কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং এতে উল্লেখিত সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ; সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা চিরতরে নির্মূল করা এবং প্রশাসনিক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিপূর্ণ নিরপেক্ষতা ও পেশাগত উৎকর্ষ নিশ্চিত করা; ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সহিংসতা রোধে শিক্ষাক্রমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয় পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণ; ভবিষ্যতে যেন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত না হয় সেজন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও দৈনিক ইত্তেফাক-এর জেলা প্রতিনিধি গোলাম কিবরিয়া জীবন, সনাক সদস্য রফিক আহমেদ মিন্টু, অ্যাড. পলাশ মজুমদার, স্বজন সদস্য মোঃ আসিফ-উল-ইসলাম, কুমার গৌরব, মুহম্মদ ফরিদ হাসান, সিসিপি সদস্য ও জেলা কমিউিনিটি পুলিশিং-এর সাধারণ সম্পাদক সুফি খায়রুল আলম খোকনসহ সনাক-চাঁদপুরের ইয়েস-ইয়েস ফ্রেন্ডস ও টিআইবি’র কর্মীবৃন্দ।

Loading

শেয়ার করুন: