হাতিয়ার ইলিশের উপরই মাছ ব্যবসা চলছে চাঁদপুরে

হাতিয়ার ইলিশের উপরই মাছ ব্যবসা চলছে চাঁদপুরে। মাছঘাটে ইলিশের আমদানি এখনো কম। তবে অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম। চাঁদপুরের বড় স্টেশন মাছঘাটে (মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র) বেশ কয়েক ঘন্টা ঘুরে ঘুরে দেখা গেলো একটু বেশি ইলিশ মাছের আমদানি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, অনেকদিন পর বেশি ইলিশ মাছ এ ঘাটে আসছে।

প্রবীণ ইলিশ ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম বকাউল (৬৫) ও মোস্তফা দিদার (৬৫)সহ বেশ কজন জানান, এখন ইলিশের পিক টাইম। এ সময় ঘাটে হাজার হাজার মণ ইলিশ আমদানি হওয়ার কথা। কিন্তু এবার ইলিশ খুবই কম আমদানি হচ্ছে। যেসব মাছ আমদানি হচ্ছে তার মধ্যে ৭০% ভাগই ৫০০, ৬০০ ও ৭০০ গ্রাম ওজনের। প্রায় সকল মাছের পেটেই ডিম আছে। আজ ২৪ আগস্ট হাতিয়া থেকে এ ঘাটে ৮/৯ টি পিকআপ, ৩/৪টি ট্রলারে ও কয়েকটি নৌকায় করে এসব ইলিশ এসেছে। প্রায় দেড় থেকে দু হাজার মণ হবে, যা গত বছর ও অন্যান্য বছরের তুলনায় খুবই সামান্য। মাছ আসার সাথে সাথে সরগরম হলো পুরো ঘাট-জানান ত্রিশ বছর যাবৎ এখানে কাজ করেন আফজাল ও তার সহকর্মী আবুল কালাম।

এই সিজনে আজকের এটাই সর্বাাধিক ইলিশ মাছের আমদানি বলে জানান চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সেক্রেটারী শবেবরাত সরকার। তিনি আরও জানান, এসব মাছ আসার সাথে সাথেই পাইকারী ব্যবসায়ীরা ও খুচরা বিক্রেতাগণ কিনে নিয়ে গেছেন। মেঘনা-পদ্মার ইলিশতো খুবই কম। তিনি আরও জানান, এবার পদ্মা-মেঘনায় দৈনিক ৪০/৫০ মণ ইলিশও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আমরা বেশ হতাশ।

জনৈক অনলাইন ইলিশ ব্যবসায়ী জানান, অবশ্য প্রায় সবাই মিথ্যা কথা বলে হাতিয়ার ইলিশকে মেঘনা-পদ্মার ইলিশ বলে বিক্রি করছে। প্রবীণ ব্যবসায়ী মোস্তফা দিদার জানান, মেঘনা-পদ্মার ইলিশটা টাটকা দেখা যায়, রং ঝকঝকে সিলভারি। চোখও তরতাজা দেখা যায়। অন্যদিকে হাতিয়ার ও সমুদ্রের ইলিশ মাছের চোখ মলিন, ফেইড রং। মেঘনা-পদ্মার ইলিশের স্বাদও বেশি । ঘ্রাণও সুন্দর। দামও বেশি।

৪০-৫০ বছরের পুরানো ইলিশ ব্যবসায়ীরা জানান, নদীর বুকে এখানে সেখানে চর জেগে উঠায় স্থানীয় মেঘনা-পদ্মায় এখন আগের মতো ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের কেউ কেউ পদ্মা ব্রীজকে এজন্যে দায়ী করেন।

প্রতি কেজি পদ্মার ইলিশ ১২০০ টাকা এ ঘাটে। পাইকারী বাজারেতো বেশি দাম অর্থাৎ ১৩০০/১৪০০ টাকা। পক্ষান্তরে হাতিয়ার ইলিশের দাম প্রতি কেজি ১০০০ টাকায় বিক্রি হয় খোলাবাজারে। অনেক দুষ্ট ব্যবসায়ী মাছের স্তূপের উপরে ৩/৪ টি স্থানীয় মেঘনা-পদ্মার ইলিশ রেখে নিচে হাতিয়ার ইলিশ বিক্রি করছে, যা অনৈতিক। খুদে বিক্রেতা সিয়াম দেখালেন ‘পদ্মার ২টি ঝকঝকে ইলিশ।’

জেলা শহরের মাছ বাজারে ৫০০-৭০০ গ্রামের মেঘনা-পদ্মার ইলিশ ৭০০-৮০০ টাকা কেজি। হাতিয়ার ইলিশ ৬০০-৭০০ গ্রামের প্রতি কেজি ৬০০ বা ৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তিনটায় এক কেজি এমন হাতিয়ার ইলিশের দাম খোলা বাজারে ৫০০ টাকা এক কেজি। পাইকারি বাজারে ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি ।

এক কথায় হাতিয়ার ইলিশের উপরই চলছে চাঁদপুরের মাছ ব্যবসা, বললেন প্রবীণ ক’জন মাছ ব্যবসায়ী। এসব মাছ এখান থেকে রংপুর, সিলেট, ময়মসনসিংহ, গাজীপুর, জামালপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ট্রাকে করে যাচ্ছে।

চাঁদপুরের ইলিশ প্রিয় মানুষজন, হোটেল ও বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এবং বিভিন্ন উপলক্ষে অতিথি আপ্যায়নে মেহমানদারিতে এখন হাতিয়ার মাছের উপরই বেশি নিভর্রশীল হতে হচ্ছে। কোনো উপায় নাই। ইদানিং অনেকে অনলাইনে হাতিয়ার ইলিশকে স্থানীয় মেঘনা-পদ্মার ইলিশ বলে প্যাক করে কুরিয়ারে বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

Loading

শেয়ার করুন: